বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Wednesday, 28 February 2018

পিল্লি গাছে বিল্লি / ঝন্টু ও ঝঞ্ঝাট' সিরিজের গল্প / ছোটোদের গল্প / শিশুসাহিত্য

 

  "পিল্লি গাছে বিল্লি"

আলীম খান


        রবিবার দিনটা  ঝন্টুর  কাছে খুব উল্লাসের এবং আনন্দের,   কারণ এদিন ঝন্টু   পুরো ফ্রি ।
   সকাল সকাল ঝন্টু টিভি খুলে বসে পড়েছে ।   আজকের দিন টিভি দেখতে নিষেধ নেই ।
 ঝন্টুর মা রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত   আর এদিকে ঝন্টু কার্টুন দেখতে ব্যস্ত ।  ঠিক এমন সময়  জানালার পাশ থেকে একটা বিকট শব্দ  ঝন্টুর কানে এল ।
 এই শব্দটা ঝন্টুর খুব পরিচিত, কিরকম একটা চাপা  হাম্বা হাম্বা শব্দ, ঠিক যেন ষাঁড়ের ডাক । 

     কিন্তু এটা ষাঁড়ের ডাক নয়,  এটা নিশ্চয়  পটার  ডাক ।   মানে পটা  এইরকম  আওয়াজ বের করে ।   এইটা  আসলে  একধরণের কোডওর্য়াড, ঝন্টু  তা  জানে । 
  এর অর্থ   বাইরে বেরিয়ে আয় ।   জানালার পর্দা  সরিয়ে  ঝন্টু দেখল ঠিক যা ভেবেছিল তাই,   পটাই বটে ।   ঝন্টু  কিছু একটা  বলতে  যাওয়ার  আগেই
পটা  তার  হেবি মডেলের  হাতঘড়িটা  দেখিয়ে  বলল, " কিরে যাবিনা !  ভুলে গেলি  নাকি,  আজ ময়দানে  যুদ্ধ আছে যে ।   তাড়াতাড়ি  রেডি  হয়ে  বেরিয়ে  পড়,  দেরি করিস না যেন ! "

   ঝন্টুর  মনে  পড়ল  আগের দিন  পটা তাকে সব বলেছিল  বটে  কিন্তু  তার মনেছিল না । এখন  মনে পড়েছে,  তাই  তড়িঘড়ি  বেরিয়ে পড়ল । 

    আজ  মেডিকেল কলেজের  মাঠে জোরদার  লড়াই  হবে ।  লিচুতলা  বনাম  কদমতলা ।   তবে  এ লড়াই   মারামারি বা  কাটাকাটির লড়াই নয়, এ লড়াই মানসম্মানের লড়াই, আত্মমর্যাদার লড়াই  ।
 কদমতলার  হাঁদু  পটাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল ।    আজ সেই চ্যালেঞ্জের   জবাব দেবে  পটা । পটার  দলে  ঝন্টু । তাই  আজ  লিচুতলাকে  জিততেই হবে ।   বীরসেনাপতি  পটাকে    ঝন্টু  কথা দিয়েছে   সে জীবন  দিয়ে দেবে  কিন্তু  দলের  মান সম্মান মাটিতে
মিশতে দেবেনা । 

     ময়দানে  গিয়ে ঝন্টু  দেখল যে সকলেই  হাজির  হয়েছে ।   দুই পক্ষের  মধ্যে  গরমাগরমি  চলছে । বিশাল  সৈনবাহিনী  সমেত কদমতলার  হাঁদু  সম্মুখে  দাঁড়িয়ে ফোঁস ফোঁস  করছে । ওরা সংখ্যায় ছয়জন । এদিকে ঝন্টু, পটা, কামরান  আর  কুতুব, টোটাল  চারজন । কদমতলা  লিচুতলা থেকে দেড়গুণ বেশি । 
   ঝন্টু মনে মনে  ভাবল  তার দল  পেরে  উঠবে তো ।   কিন্তু  পটার চোখে  সুদৃঢ়  আত্মবিশ্বাস দেখে  ঝন্টু  মনে মনে  খুব  সাহস  পেল । আজ  ভয় পেলে চলবে না,  আজ যে  মর্যাদার  লড়াই । 

   পটা  আর  হাঁদুর  মধ্যে  কথাবার্তা  চলছে ।   ঝন্টু  মাঠে বসে বসে সব  শুনছে,  যুদ্ধের  নিয়মাবলী নিয়ে এক দীর্ঘ  আলোচনা  হয়ে গেল । মাঠের মাঝখানটাকে   ম্যেন  বর্ডার করা  হল এবং  একটা  কালো শক্ত  পাথর   দিয়ে দাগ  কেটে  দেওয়া হল ।   আবার  পূর্ব পশ্চিমে ও  উত্তর দক্ষিণে  দাগ কেটে  সীমান্ত  বর্ডারও  করা হল । কেউই  দাগের  ওপারে  যেতে পারবে না আর  দাগ  পেরোলেই  তার  দল  হেরে যাবে ।   যুদ্ধের সময়সীমা মাত্র তিরিশ মিনিট  এবং  যুদ্ধ চলাকালীন  মাত্র পাঁচ মিনিটের  বিরতি হবে  আর  সেই  সময়  দাগের  বাইরে যাওয়া যেতে পারে অস্ত্রের  ঘাটতি পূরণ  করার জন্য । কিন্তু  সময় থাকতে থাকতেই ময়দানে প্রবেশ করতে হবে ।     অবশ্য  যুদ্ধ  চলাকালীন  আত্মসমর্পণের অপশনটাও  রইল ।

       কোনো  লাঠি লাদনা ছুরি কাটারী  তলোয়ার  বা  তীরধনুকের  যুদ্ধ নয়,  যুদ্ধ হবে  এক  বিশেষ  ধরণের  অস্ত্র দিয়ে আর  এই  যুদ্ধাস্ত্র   চকোলেট  বোমার মতো দেখতে,   ঠিক যেন  বুড়িমার চকোলেট ব্যোম । তবে  এতে  গোলাবারুদ  থাকেনা, এটা এক  প্রকার ফল বিশেষ । এটা  পিল্লিফল,  এই  ফল কেউ  খায়  বলে তো  মনে হয়না ।   এটা ছুঁড়ে মাথায়  মারলে  মাথা ফাটার  ভয় নেই,  তবে মাথায়  একটা  আলু  হওয়ার  ভয়  রয়েছে,
 ফলটা  খুবই  শক্ত কিনা ।    গায়ে  সজোরে  লাগলে বেশ  ব্যথা হয়  এবং  সেই  দুচারদিন  থেকেই যায় । 

     এখন  সকাল  ৯টা বাজে আর  আধঘন্টার মধ্যে  যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে ।    আধঘন্টার মধ্যে যে যত পারে যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করে আনতে পারে । তাই   দুই দলেরই  দুইতিনজন  চলে গেল পিল্লি যোগাড় করতে ।  মাঠ থেকে একটু খানি দূরেই  মেডিকেল  ক্যান্টিনটার  পাশেই  পিল্লি গাছটা  রয়েছে, লম্বায় বিশাল না হলেও  চওড়ায় মস্ত আকৃতি ধারণ করেছে গাছটা । 

   আর সমস্ত বিবাদের মূলে এই পিল্লি গাছ ।  গাছে  অগুন্তি অসংখ্য  পিল্লিফল । এই  গাছে  পটার দল  ও  হাঁদুর  দল  ইদানিং রোজ  ঝালঝাপটি  খেলতে আসে,  যে দল  আগে আসে  ঝালঝাপটি খেলার সুযোগ  তারাই   আগে পায় । আর  এই  ঝালঝাপটি খেলাটিকে ঘিরে  হাঙ্গামা শুরু হয় । আর  তা থেকেই  এই মহাসংগ্রামের  সূত্রপাত । 

          দুই পক্ষই   চিকচিকির থলে মানে  পলিথিনের  ব্যাগে এবং  যে যার  প্যান্ট ও জামার   পকেটে যতটা সম্ভব হয়েছে পিল্লি ঠুসে নিয়ে ময়দানে পৌছাল ।
 যুদ্ধ শুরু হবার মুখে,  খালি  যুদ্ধের  শঙ্খধ্বনি  বাজতেই  বাকি ।   এমন সময়   হাঁদু   অদ্ভুত  কায়দায়  মুখের  মধ্যে দুখানা  আঙুল  প্রবেশ  করিয়ে  সজোরে একটা শিষ দিল সিটি মারল,  মানে যুদ্ধের  হুঁইসেল  বেজে উঠল ।  যুদ্ধ  শুরু হয়ে গেল ।

         টারগেট  লক্ষ্য করে  দুই দলের  তরফ থেকে পিল্লি ছোড়াছুড়ি  চলতে  থাকল ।  পটার  টিপ  খুব ভালো, তবে  হাঁদু  আর  তার ভাই  চাঁদুর  থেকে
ভালো নয় ।   উত্তর আর  দক্ষিণ  দুই  দিক থেকে  পিল্লি    বৃষ্টির মতো  ঝরতে  লাগল,  বারুদের গোলা আর  তীরের ফলার মতো  ধাওয়া করতে লাগল
টারগেট লক্ষ্য করে ।   সব  গুলো যে লক্ষ্যভ্রষ্ট করল তা নয়,   অনেক গুলো লক্ষ্যভেদ করতে  সফলও  হল বটে ।   হাঁদু টিপ করে  একটা পিল্লি  ছুড়ে
মারল ঠিক  একেবারে  ঝন্টুকে লক্ষ্য করে আর সেটা লাগল একেবারে ঝন্টুর  কপালে ।একটা  মৃদু  গোঙানির  আর্তনাদ  বেরিয়ে এল ঝন্টুর  মুখ থেকে ।
  কয়েক সেকেন্ডের  মধ্যে ঝন্টুর   কপাল  ফুলে  আলু  হয়ে গেল । আহত  বন্ধুর   প্রতিশোধ  নিতে  পটাও  লাগাতার  ধরাধর  গোলা  বর্ষণ  করতে লাগল ।   ঝন্টু   ক্রোধে  ফেটে  পড়ল । ঝন্টুও  একনাগাড়ে  পিল্লি ছুড়ছে  তো ছুড়ছেই   থামবার  নাম নেয় না ।    আর  ওদিকে  হাঁদু ও  তার  দল  অসম্ভব ক্যালিতে ডিফেন্ড করে চলেছে । এদিকে  পটাদের  পিল্লি  খতম  হবার  তাগিদে । 

   হাঁদু  এইটাই  তো চেয়েছিল যাতে বিরোধীপক্ষের  মালমশলা খতম হয়ে যাক । হাঁদু  বহুত  চালাক, ওর চালাকি  কাজে লেগেছে । হাঁদুদের কাছে  তখনও    বারুদহীন বিস্তর   গোলা  আর  ওদিকে পটাদের  গোলা  শেষ । এইবার হাঁদু  অ্যাটাক  করা শুরু করল, তার দলের  বাকিরা দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল  ।
হাঁদু তার দুর্দান্ত টিপে একটা একটা করে গোলা ছুড়তে লাগল  আর  পটার দল নিজেদের বাঁচাতে লাগল । কিন্তু  ওদের মতো  নিজেদের ডিফেন্ড করতে পারছে না, পিল্লির  আঘাতে তাদের একেবারে নাজেহাল অবস্থা  । এদিকে আবার হাফটাইম হতে মাত্র দু মিনিট বাকি । 
    সেনাপতি  পটা  হুকুম  জারি করল শিগগির  পিল্লি  আনতে হবে, আর সেই  দায়িত্ব পড়ল  ঝন্টুর  ঘাড়ে ।  বিরতি হওয়া মাত্রই  তড়িঘড়ি  ঝন্টু দৌড় দিল,  যত  তাড়াতাড়ি  সম্ভব  পিল্লির  ব্যবস্থা করতেই  হবে । আর তা নাহলে  দলের  পরাজয়  নিশ্চিত । কিন্তু  ঝন্টু  কোনোমতেই  তা হতে দিতে পারে না,  এই লড়াই তাদের  জিততেই হবে । 

      এক  দমেই   ঝন্টু পিল্লি গাছটার কাছে পৌছে গেল ।   তার পকেটে  দুটো  খালি চিকচিকির থলে ।  
গাছে  উঠতে যাবে ঠিক এমন সময়    তার চোখে পড়ল  একটা বেড়াল ।    একটা  কালো  বেড়াল  তার  ভয়ঙ্কর  হলুদ রঙের  দুটো  প্রজ্বলন্ত চোখে
 তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে   ঝন্টুকে  একভাবে   মেপে  চলেছে । 
একি !  গাছে বেড়াল !
তাও আবার  কালো বেড়াল !
 আশ্চর্য্য !
 ঝন্টুর  চোখদুটো  বিস্ফারিত হল । 
ভারী  অদ্ভুত ব্যাপার  ।   বেড়াল কোত্থেকে এল ।    একটু আগে তো ছিল না । বেড়াল তো আবার    নাকি বেড়ালের প্রেত,   ঝন্টু  মনে মনে ভাবতে  লাগল ।
   ঝন্টুর  মনে হল  তার  শ্বাসপ্রশ্বাস যেন বন্ধ  হয়ে আসছে । পুরো শরীরটা  শিরশির করে উঠতেই    সে দেখল  তার  গায়ের  লোমগুলো সব চোরকাঁটার  মতো  খাঁড়া  হয়ে গেছে ।  ঝন্টুর  বুকের  খাঁচার ভিতর ছোট্ট  হৃৎপিন্ডখানা  ঢিব্ ঢিব্   করতে লাগল ।   চার পা পিছিয়ে এসে ঝন্টু  থরথর করে কাঁপতে লাগল । কারণ  কালো বেড়াল  ঝন্টুর কাছে একটা  ভয়ঙ্কর  বিভীষিকাস্বরূপ ।  

  পটার  দিদিমার  কাছ থেকে  ঝন্টু  শুনেছে  কালো বেড়ালের  গল্প ।  মানুষ মরলে  ভূত হয়  প্রেত হয় ।   ভূত  প্রেতরা  নাকি  সহজেই   মানুষের  রূপ অর্থাৎ তাদের আগের রূপ  নিতে পারে না,
   ভারী কষ্ট  হয় তাদের,   বিশেষ করে দিনের বেলায় ।    তবে   গরু  ছাগলের রূপ  সহজেই  ধরতে পারে   কিন্তু  কালো বেড়ালের  রূপ  নিতে  তাদের কোনো  কষ্টই  হয় না, 
কালো বেড়ালের  রূপটাই তাদের  সবচেয়ে  প্রিয় ।    ভূতপ্রেতরা   দিনের বেলায়  কালো বেড়ালের  রূপে   গাছে  গাছে  
চুপটি মেরে বসে থাকে  আর   সন্ধ্যার  পর  তারা আসল  রূপে আসে ।    আর  জলজ্যান্ত    মানুষরা   যদি  গাছের গোঁড়ায়  দুষ্কর্ম করে
  তবে ভূত   তাদের  ঘাড়  মটকে দেয় ।  
 
   পটার দিদিমার কাছ থেকে শোনা গল্পগুলো ঝন্টু আজও ভোলেনি আর কোনোদিনও  বোধহয় ভুলবে না ।   অন্যমনস্ক হয়ে ঝন্টু যেন  সেই গল্পের জগতে ভাসতে লাগল । 
 ঝন্টুকে   ল্যালকেষ্টর মতো   দাঁড়িয়ে  থাকতে দেখে  দূর থেকে  পটা চিৎকার করল, "  ঝন্টু  পিল্লি  নিয়ে আয়  তাড়াতাড়ি ! "
কিন্তু  ঝন্টু কি করবে,  পিল্লি গাছে যে বিল্লি । 
 কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার শঙ্খধ্বনি বেজে উঠবে ।   হাঁদুরা ধড়াধড়  তোপ  ছুড়তে লাগবে ।  পটাদের কিছুই করার থাকবে না,
খালি পিলি   মার খেতে হবে । 
ক্রোধিত  পটার  হুঙ্কার  তীরের   মতো  ঝন্টুর  কানে  এসে বিঁধতে  লাগল ।   কিন্তু কি যে করবে তা কিছুতেই ঝন্টু  বুঝে উঠতে পারছে না ।

      একদিকে নিজের  ভীতি  আর অন্যদিকে  তার   দলের  হেরে যাওয়ার ভীতি,   এই দুইয়ের মধ্যে কঠোর  সংঘাত  বেঁধে গেল । তাড়াতাড়ি  একটা  সিদ্ধান্ত  নিতে হবে ।  ঝন্টু  মুহুর্তের মধ্যে  সিদ্ধান্ত  নিয়ে ফেলল । মাটি থেকে ইঁটের ঢেলা হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার  ভান  করতে লাগল কিন্তু  বেড়ালকে আঘাত করার কোনো অভিপ্রায় ঝন্টুর ছিল না ।
 আর  তাছাড়া  বেড়ালটা  যদি সত্যিই   ভূত হয় তবে কি  ঢেলা   তাকে আদৌ  লাগবে ।
   হেঁই হেঁই  ছেঁই ছেঁই করে ভয় দেখিয়ে  কোনো  লাভ হল না,   বেড়াল  পালাতেই চায় না ।  
 ভূতকে ভয় দেখানো কি  অত সহজ কাজ ।
  ঝন্টু ভয়ে কাঁপতে লাগল,  হাতের ঢেলা আপনাআপনি  হাত থেকে  পড়ে গেল ।   বেড়ালের চোখদুটো আরও বেশি ভয়ঙ্কর দেখাতে লাগল,  চোখের ভিতর যেন আগুন জ্বলছে ।
  হঠাৎ  বেড়াল উঠে দাঁড়াল ।
ঝন্টুর  গা  শিরশির করে উঠল ।  
  যদি বেড়ালভূত রেগে গিয়ে
তার ঘাড়ে  ঝাঁপিয়ে পড়ে আর  যদি  গলায় কামড়ে ধরে   তাহলে কি হবে ...
 ঝন্টু মূর্ছা যায় যায় আরকি । 

    এমন সময়  ঝন্টুর পুরো শরীরটায়  বিদ্যুতের মতো  কি যেন একটা খেলে গেল ।   ঝন্টুর মধ্যে  একটা আমূল পরিবর্তন ঘটে গেল ।   ঝন্টু  আর  সেই  ঝন্টু  রইল না ।
ভয়ে আড়ষ্ট  ভীতসন্ত্রস্ত ঝন্টু   কিরকম যেন  এক ভয়ঙ্কর  উগ্রতায়  দাঁত পিষতে লাগল । পকেটে তখনও এক দুটো  পিল্লি  ছিল । একটা পিল্লি হাতে
শক্ত করে ধরল আর  তারপর ভালো করে টিপ না করেই  পিল্লিটা   গায়ের জোড়ে  বেড়ালটার দিকে   ছুড়ে দিল ।   আশ্চর্য্যভাবে পিল্লিটা লাগল ঠিক  বেড়ালের  কপালে ।
 কপাল খারাপ  হলে  যা হয় ।   
তারপর একটা  তীক্ষ্ম  আর্তনাদ বেড়ালটার   মুখ থেকে  বেরিয়ে এল,  ম্যাঁউ...  ম্যাঁউ.... ম্যাঁউউউউ ! 

    ধপ্  করে  বেড়াল মাটিতে পড়ে  গেল ।  পড়ামাত্রই  বেড়াল  দৌড় লাগাল । ল্যাজটাকে  আকাশের দিকে  অ্যান্টানার মতো খাঁড়া করে পশ্চিমদিকের একটা ঝোঁপ লক্ষ্য করে দৌড়তে লাগল ।   মুহুর্তেই  বেড়াল ঐ  ঝোপটার  ভিতরে ভ্যানিশ  হয়ে গেল । 

       নিমেষে  সমস্ত  ভয় কাটিয়ে  ঝন্টু তড়িঘড়ি গাছে চেপে চিকচিকি   ভরে  নিয়ে  ময়দানে ছুট দিল ।   পটার  দল  আবার সশস্ত্রধারণ  করল ।
ইতিমধ্যে  ঝন্টুর  মনের জোর আরও  বেড়ে গেছে ।   তার ওপর  আঘাতের প্রত্যাঘাত  তাকে নিতে হবে । 

     আবার  দুই দলের মধ্যে  তুমুল সংঘর্ষ  শুরু হল ।   একবার  এরা পিছিয়ে  আসে   আর   একবার  ওইদল পিছিয়ে  যায়   কিন্তু  কোনো
পক্ষই  হার  মানতে চায় না ।   পটার মুখ খানা  রাগে  লাল  হয়ে  গেছে ।   এদিকে   ঝন্টু  গায়ের জোরে  গোলা ছুড়ছে ।    বর্ডারের   ওপার  থেকে
দুশো  কিলোমিটার  গতিবেগে গোলা  এপারে  ধেয়ে আসছে ।    হাঁদু  আবার  ওদিক  থেকে    হার-হার-মহাদেব    বলে  হুঙ্কার  দিয়ে চলেছে । 
পটাও  চিৎকার করে বলে উঠল, " জয়  ভবানী"  ।
ঝন্টুও সেই তালে  বলে  উঠল,   "জয় ভবানী !  জয় ভবানী !"
এবার  দুই দলের  সকলে মিলে  চিৎকার  করতে শুরু করে দিল ।    চিৎকার  চেঁচামিচি  কলেরব  কোলাহলের  মাত্রা এতটাই  বেড়ে গেল যে
দূর দূর থেকে  সেই কর্কশ  আওয়াজ  শোনা যেতে লাগল । 

       এরকম  ভয়ঙ্কর  কলেরব  মেডিকেলের  ছাত্রদের  কানের  পর্দায়  ধুমধাম্ করে ধাক্কা মারতে লাগল ।   ছাত্ররা  এখন হবু  ডাক্তার । 
কয়েক বছরের  পর   তারা  সব   এক একটা  গোল্ড মেডেলিষ্ট  হবে ।   কেউ হাড়ের ডাক্তার  হবে,  কেউ  চোখের   ডাক্তার  হবে,  কেউ  আবার 
কানের ডাক্তার হবে   আরও  কত  কি  যে  ষ্পেশালিষ্ট হবে    তারাই  জানে ।  
 ছাত্ররা  তাদের  নিজের নিজের  রুমে  মনোযোগ  সহকারে পড়াশোনা করছিল  ।    কিন্তু এরকম  কোলাহল  হতে থাকলে তো  তাদের কানের  বারোটা  বেজে যেতে পারে, তাহলে  মেডেল  পাবে কি  করে ।   এইভাবে  চলতে থাকলে কানের  ব্যামো এবং  মাথা খারাপ হয়ে  টাল  হয়ে যেতে পারে   আর   সেক্ষেত্রে মেনটাল হাসপাতালেও  নাম লেখাতে   হতে পারে । 

           বিরক্ত  হয়ে  কতগুলো  ছাত্র  বাইরে  বেরিয়ে  এসে   এর তীব্র  প্রতিবাদ  করল ।    কিন্তু  তাতে  কোনো লাভ  হল না,   পটা ও  হাঁদুরা   ছাত্রদের
কোনো গুরুত্বই দিল না । তবুও পটারা  হাঁদুরা  চিৎকার করেই চলল । যুদ্ধের  চরম  পরিণতি  এখনও  হয়নি, যুদ্ধ থামানোর কোনো মানেই  হয়না ।

      ছাত্ররা ফিরে গেল ।   যুদ্ধ  চলতেই থাকল ।    কিছুক্ষণ পরে ঝন্টু দেখল  দুজন  গার্ড  লাঠি হাতে  ময়দনের  দিকেই ছুটে আসছে । 
  ছুটে আসতে আসতে  একটা  গার্ড একেবারে দাঁত পিষে  বলে উঠল, " দাঁড়া ব্যাটারা !  তোদের মজা  দেখাচ্ছি ! "

ধরা পড়লে নির্ঘাত   লাঠিপেটা  করবে ।    কিন্তু দুই  দলের কেউই  লাঠিপেটা  হতে চায় না । 
তাহলে  যুদ্ধের  কি হবে !
যুদ্ধ-বিরাম  নাকি   যুদ্ধাবসান !  - এই  সিদ্ধান্তে আসার  আগেই একটা  গার্ড  লাঠি  তুলে মারতে গেল ।    ঝন্টু,  পটা,  হাঁদু  কেউই  আর  একদন্ড দাঁড়ানোর সাহস দেখাল না ।   দুই দলই  ময়দান ছেড়ে পালালো ।   কেউ  হারলো না,   আবার  কেউ জিতলো না । 

     কিন্তু  আজ  একজনাই জিতেছে  আর  সে  হল ঝন্টু ।   যে  ছেলে  কালো বেড়াল দেখলে ভয়ে থরথর করে কাঁপত   আজ সেই ঝন্টু  কালো
বেড়ালকেই  ভয় পাইয়ে দিয়েছে ।   ওটা কোনো ভূত-প্রেত  নয়  ।   ওটা কেবলমাত্র  একটা আস্ত কালো বেড়াল,  ঠেলায় পড়ে  গাছে উঠে বসেছিল । 
 ঝন্টুর  ভয়ে  সেই কালো বেড়াল    ল্যাজ  তুলে  পালিয়েছে  ।
আজ  ঝন্টুর জয় হয়েছে ।  
  আজ  ঝন্টু   তার  ভয়কে  জয়  করেছে ।



Written by:-


No comments:

Post a Comment