"পিল্লি গাছে বিল্লি"
আলীম খান
সকাল সকাল ঝন্টু টিভি খুলে বসে পড়েছে । আজকের দিন টিভি দেখতে নিষেধ নেই ।
ঝন্টুর মা রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত আর এদিকে ঝন্টু কার্টুন দেখতে ব্যস্ত । ঠিক এমন সময় জানালার পাশ থেকে একটা বিকট শব্দ ঝন্টুর কানে এল ।
এই শব্দটা ঝন্টুর খুব পরিচিত, কিরকম একটা চাপা হাম্বা হাম্বা শব্দ, ঠিক যেন ষাঁড়ের ডাক ।
কিন্তু এটা ষাঁড়ের ডাক নয়, এটা নিশ্চয় পটার ডাক । মানে পটা এইরকম আওয়াজ বের করে । এইটা আসলে একধরণের কোডওর্য়াড, ঝন্টু তা জানে ।
এর অর্থ বাইরে বেরিয়ে আয় । জানালার পর্দা সরিয়ে ঝন্টু দেখল ঠিক যা ভেবেছিল তাই, পটাই বটে । ঝন্টু কিছু একটা বলতে যাওয়ার আগেই
পটা তার হেবি মডেলের হাতঘড়িটা দেখিয়ে বলল, " কিরে যাবিনা ! ভুলে গেলি নাকি, আজ ময়দানে যুদ্ধ আছে যে । তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়, দেরি করিস না যেন ! "
ঝন্টুর মনে পড়ল আগের দিন পটা তাকে সব বলেছিল বটে কিন্তু তার মনেছিল না । এখন মনে পড়েছে, তাই তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়ল ।
আজ মেডিকেল কলেজের মাঠে জোরদার লড়াই হবে । লিচুতলা বনাম কদমতলা । তবে এ লড়াই মারামারি বা কাটাকাটির লড়াই নয়, এ লড়াই মানসম্মানের লড়াই, আত্মমর্যাদার লড়াই ।
কদমতলার হাঁদু পটাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল । আজ সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দেবে পটা । পটার দলে ঝন্টু । তাই আজ লিচুতলাকে জিততেই হবে । বীরসেনাপতি পটাকে ঝন্টু কথা দিয়েছে সে জীবন দিয়ে দেবে কিন্তু দলের মান সম্মান মাটিতে
মিশতে দেবেনা ।
ময়দানে গিয়ে ঝন্টু দেখল যে সকলেই হাজির হয়েছে । দুই পক্ষের মধ্যে গরমাগরমি চলছে । বিশাল সৈনবাহিনী সমেত কদমতলার হাঁদু সম্মুখে দাঁড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করছে । ওরা সংখ্যায় ছয়জন । এদিকে ঝন্টু, পটা, কামরান আর কুতুব, টোটাল চারজন । কদমতলা লিচুতলা থেকে দেড়গুণ বেশি ।
ঝন্টু মনে মনে ভাবল তার দল পেরে উঠবে তো । কিন্তু পটার চোখে সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাস দেখে ঝন্টু মনে মনে খুব সাহস পেল । আজ ভয় পেলে চলবে না, আজ যে মর্যাদার লড়াই ।
পটা আর হাঁদুর মধ্যে কথাবার্তা চলছে । ঝন্টু মাঠে বসে বসে সব শুনছে, যুদ্ধের নিয়মাবলী নিয়ে এক দীর্ঘ আলোচনা হয়ে গেল । মাঠের মাঝখানটাকে ম্যেন বর্ডার করা হল এবং একটা কালো শক্ত পাথর দিয়ে দাগ কেটে দেওয়া হল । আবার পূর্ব পশ্চিমে ও উত্তর দক্ষিণে দাগ কেটে সীমান্ত বর্ডারও করা হল । কেউই দাগের ওপারে যেতে পারবে না আর দাগ পেরোলেই তার দল হেরে যাবে । যুদ্ধের সময়সীমা মাত্র তিরিশ মিনিট এবং যুদ্ধ চলাকালীন মাত্র পাঁচ মিনিটের বিরতি হবে আর সেই সময় দাগের বাইরে যাওয়া যেতে পারে অস্ত্রের ঘাটতি পূরণ করার জন্য । কিন্তু সময় থাকতে থাকতেই ময়দানে প্রবেশ করতে হবে । অবশ্য যুদ্ধ চলাকালীন আত্মসমর্পণের অপশনটাও রইল ।
কোনো লাঠি লাদনা ছুরি কাটারী তলোয়ার বা তীরধনুকের যুদ্ধ নয়, যুদ্ধ হবে এক বিশেষ ধরণের অস্ত্র দিয়ে আর এই যুদ্ধাস্ত্র চকোলেট বোমার মতো দেখতে, ঠিক যেন বুড়িমার চকোলেট ব্যোম । তবে এতে গোলাবারুদ থাকেনা, এটা এক প্রকার ফল বিশেষ । এটা পিল্লিফল, এই ফল কেউ খায় বলে তো মনে হয়না । এটা ছুঁড়ে মাথায় মারলে মাথা ফাটার ভয় নেই, তবে মাথায় একটা আলু হওয়ার ভয় রয়েছে,
ফলটা খুবই শক্ত কিনা । গায়ে সজোরে লাগলে বেশ ব্যথা হয় এবং সেই দুচারদিন থেকেই যায় ।
এখন সকাল ৯টা বাজে আর আধঘন্টার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে । আধঘন্টার মধ্যে যে যত পারে যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করে আনতে পারে । তাই দুই দলেরই দুইতিনজন চলে গেল পিল্লি যোগাড় করতে । মাঠ থেকে একটু খানি দূরেই মেডিকেল ক্যান্টিনটার পাশেই পিল্লি গাছটা রয়েছে, লম্বায় বিশাল না হলেও চওড়ায় মস্ত আকৃতি ধারণ করেছে গাছটা ।
আর সমস্ত বিবাদের মূলে এই পিল্লি গাছ । গাছে অগুন্তি অসংখ্য পিল্লিফল । এই গাছে পটার দল ও হাঁদুর দল ইদানিং রোজ ঝালঝাপটি খেলতে আসে, যে দল আগে আসে ঝালঝাপটি খেলার সুযোগ তারাই আগে পায় । আর এই ঝালঝাপটি খেলাটিকে ঘিরে হাঙ্গামা শুরু হয় । আর তা থেকেই এই মহাসংগ্রামের সূত্রপাত ।
দুই পক্ষই চিকচিকির থলে মানে পলিথিনের ব্যাগে এবং যে যার প্যান্ট ও জামার পকেটে যতটা সম্ভব হয়েছে পিল্লি ঠুসে নিয়ে ময়দানে পৌছাল ।
যুদ্ধ শুরু হবার মুখে, খালি যুদ্ধের শঙ্খধ্বনি বাজতেই বাকি । এমন সময় হাঁদু অদ্ভুত কায়দায় মুখের মধ্যে দুখানা আঙুল প্রবেশ করিয়ে সজোরে একটা শিষ দিল সিটি মারল, মানে যুদ্ধের হুঁইসেল বেজে উঠল । যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল ।
টারগেট লক্ষ্য করে দুই দলের তরফ থেকে পিল্লি ছোড়াছুড়ি চলতে থাকল । পটার টিপ খুব ভালো, তবে হাঁদু আর তার ভাই চাঁদুর থেকে
ভালো নয় । উত্তর আর দক্ষিণ দুই দিক থেকে পিল্লি বৃষ্টির মতো ঝরতে লাগল, বারুদের গোলা আর তীরের ফলার মতো ধাওয়া করতে লাগল
টারগেট লক্ষ্য করে । সব গুলো যে লক্ষ্যভ্রষ্ট করল তা নয়, অনেক গুলো লক্ষ্যভেদ করতে সফলও হল বটে । হাঁদু টিপ করে একটা পিল্লি ছুড়ে
মারল ঠিক একেবারে ঝন্টুকে লক্ষ্য করে আর সেটা লাগল একেবারে ঝন্টুর কপালে ।একটা মৃদু গোঙানির আর্তনাদ বেরিয়ে এল ঝন্টুর মুখ থেকে ।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঝন্টুর কপাল ফুলে আলু হয়ে গেল । আহত বন্ধুর প্রতিশোধ নিতে পটাও লাগাতার ধরাধর গোলা বর্ষণ করতে লাগল । ঝন্টু ক্রোধে ফেটে পড়ল । ঝন্টুও একনাগাড়ে পিল্লি ছুড়ছে তো ছুড়ছেই থামবার নাম নেয় না । আর ওদিকে হাঁদু ও তার দল অসম্ভব ক্যালিতে ডিফেন্ড করে চলেছে । এদিকে পটাদের পিল্লি খতম হবার তাগিদে ।
হাঁদু এইটাই তো চেয়েছিল যাতে বিরোধীপক্ষের মালমশলা খতম হয়ে যাক । হাঁদু বহুত চালাক, ওর চালাকি কাজে লেগেছে । হাঁদুদের কাছে তখনও বারুদহীন বিস্তর গোলা আর ওদিকে পটাদের গোলা শেষ । এইবার হাঁদু অ্যাটাক করা শুরু করল, তার দলের বাকিরা দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল ।
হাঁদু তার দুর্দান্ত টিপে একটা একটা করে গোলা ছুড়তে লাগল আর পটার দল নিজেদের বাঁচাতে লাগল । কিন্তু ওদের মতো নিজেদের ডিফেন্ড করতে পারছে না, পিল্লির আঘাতে তাদের একেবারে নাজেহাল অবস্থা । এদিকে আবার হাফটাইম হতে মাত্র দু মিনিট বাকি ।
সেনাপতি পটা হুকুম জারি করল শিগগির পিল্লি আনতে হবে, আর সেই দায়িত্ব পড়ল ঝন্টুর ঘাড়ে । বিরতি হওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি ঝন্টু দৌড় দিল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পিল্লির ব্যবস্থা করতেই হবে । আর তা নাহলে দলের পরাজয় নিশ্চিত । কিন্তু ঝন্টু কোনোমতেই তা হতে দিতে পারে না, এই লড়াই তাদের জিততেই হবে ।
এক দমেই ঝন্টু পিল্লি গাছটার কাছে পৌছে গেল । তার পকেটে দুটো খালি চিকচিকির থলে ।
গাছে উঠতে যাবে ঠিক এমন সময় তার চোখে পড়ল একটা বেড়াল । একটা কালো বেড়াল তার ভয়ঙ্কর হলুদ রঙের দুটো প্রজ্বলন্ত চোখে
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঝন্টুকে একভাবে মেপে চলেছে ।
একি ! গাছে বেড়াল !
তাও আবার কালো বেড়াল !
আশ্চর্য্য !
ঝন্টুর চোখদুটো বিস্ফারিত হল ।
ভারী অদ্ভুত ব্যাপার । বেড়াল কোত্থেকে এল । একটু আগে তো ছিল না । বেড়াল তো আবার নাকি বেড়ালের প্রেত, ঝন্টু মনে মনে ভাবতে লাগল ।
ঝন্টুর মনে হল তার শ্বাসপ্রশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে । পুরো শরীরটা শিরশির করে উঠতেই সে দেখল তার গায়ের লোমগুলো সব চোরকাঁটার মতো খাঁড়া হয়ে গেছে । ঝন্টুর বুকের খাঁচার ভিতর ছোট্ট হৃৎপিন্ডখানা ঢিব্ ঢিব্ করতে লাগল । চার পা পিছিয়ে এসে ঝন্টু থরথর করে কাঁপতে লাগল । কারণ কালো বেড়াল ঝন্টুর কাছে একটা ভয়ঙ্কর বিভীষিকাস্বরূপ ।
পটার দিদিমার কাছ থেকে ঝন্টু শুনেছে কালো বেড়ালের গল্প । মানুষ মরলে ভূত হয় প্রেত হয় । ভূত প্রেতরা নাকি সহজেই মানুষের রূপ অর্থাৎ তাদের আগের রূপ নিতে পারে না,
ভারী কষ্ট হয় তাদের, বিশেষ করে দিনের বেলায় । তবে গরু ছাগলের রূপ সহজেই ধরতে পারে কিন্তু কালো বেড়ালের রূপ নিতে তাদের কোনো কষ্টই হয় না,
কালো বেড়ালের রূপটাই তাদের সবচেয়ে প্রিয় । ভূতপ্রেতরা দিনের বেলায় কালো বেড়ালের রূপে গাছে গাছে
চুপটি মেরে বসে থাকে আর সন্ধ্যার পর তারা আসল রূপে আসে । আর জলজ্যান্ত মানুষরা যদি গাছের গোঁড়ায় দুষ্কর্ম করে
তবে ভূত তাদের ঘাড় মটকে দেয় ।
পটার দিদিমার কাছ থেকে শোনা গল্পগুলো ঝন্টু আজও ভোলেনি আর কোনোদিনও বোধহয় ভুলবে না । অন্যমনস্ক হয়ে ঝন্টু যেন সেই গল্পের জগতে ভাসতে লাগল ।
ঝন্টুকে ল্যালকেষ্টর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দূর থেকে পটা চিৎকার করল, " ঝন্টু পিল্লি নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি ! "
কিন্তু ঝন্টু কি করবে, পিল্লি গাছে যে বিল্লি ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার শঙ্খধ্বনি বেজে উঠবে । হাঁদুরা ধড়াধড় তোপ ছুড়তে লাগবে । পটাদের কিছুই করার থাকবে না,
খালি পিলি মার খেতে হবে ।
ক্রোধিত পটার হুঙ্কার তীরের মতো ঝন্টুর কানে এসে বিঁধতে লাগল । কিন্তু কি যে করবে তা কিছুতেই ঝন্টু বুঝে উঠতে পারছে না ।
একদিকে নিজের ভীতি আর অন্যদিকে তার দলের হেরে যাওয়ার ভীতি, এই দুইয়ের মধ্যে কঠোর সংঘাত বেঁধে গেল । তাড়াতাড়ি একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে । ঝন্টু মুহুর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল । মাটি থেকে ইঁটের ঢেলা হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার ভান করতে লাগল কিন্তু বেড়ালকে আঘাত করার কোনো অভিপ্রায় ঝন্টুর ছিল না ।
আর তাছাড়া বেড়ালটা যদি সত্যিই ভূত হয় তবে কি ঢেলা তাকে আদৌ লাগবে ।
হেঁই হেঁই ছেঁই ছেঁই করে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হল না, বেড়াল পালাতেই চায় না ।
ঝন্টু ভয়ে কাঁপতে লাগল, হাতের ঢেলা আপনাআপনি হাত থেকে পড়ে গেল । বেড়ালের চোখদুটো আরও বেশি ভয়ঙ্কর দেখাতে লাগল, চোখের ভিতর যেন আগুন জ্বলছে ।
হঠাৎ বেড়াল উঠে দাঁড়াল ।
ঝন্টুর গা শিরশির করে উঠল ।
যদি বেড়ালভূত রেগে গিয়ে
তার ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর যদি গলায় কামড়ে ধরে তাহলে কি হবে ...
ঝন্টু মূর্ছা যায় যায় আরকি ।
এমন সময় ঝন্টুর পুরো শরীরটায় বিদ্যুতের মতো কি যেন একটা খেলে গেল । ঝন্টুর মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন ঘটে গেল । ঝন্টু আর সেই ঝন্টু রইল না ।
ভয়ে আড়ষ্ট ভীতসন্ত্রস্ত ঝন্টু কিরকম যেন এক ভয়ঙ্কর উগ্রতায় দাঁত পিষতে লাগল । পকেটে তখনও এক দুটো পিল্লি ছিল । একটা পিল্লি হাতে
শক্ত করে ধরল আর তারপর ভালো করে টিপ না করেই পিল্লিটা গায়ের জোড়ে বেড়ালটার দিকে ছুড়ে দিল । আশ্চর্য্যভাবে পিল্লিটা লাগল ঠিক বেড়ালের কপালে ।
কপাল খারাপ হলে যা হয় ।
তারপর একটা তীক্ষ্ম আর্তনাদ বেড়ালটার মুখ থেকে বেরিয়ে এল, ম্যাঁউ... ম্যাঁউ.... ম্যাঁউউউউ !
ধপ্ করে বেড়াল মাটিতে পড়ে গেল । পড়ামাত্রই বেড়াল দৌড় লাগাল । ল্যাজটাকে আকাশের দিকে অ্যান্টানার মতো খাঁড়া করে পশ্চিমদিকের একটা ঝোঁপ লক্ষ্য করে দৌড়তে লাগল । মুহুর্তেই বেড়াল ঐ ঝোপটার ভিতরে ভ্যানিশ হয়ে গেল ।
নিমেষে সমস্ত ভয় কাটিয়ে ঝন্টু তড়িঘড়ি গাছে চেপে চিকচিকি ভরে নিয়ে ময়দানে ছুট দিল । পটার দল আবার সশস্ত্রধারণ করল ।
ইতিমধ্যে ঝন্টুর মনের জোর আরও বেড়ে গেছে । তার ওপর আঘাতের প্রত্যাঘাত তাকে নিতে হবে ।
আবার দুই দলের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হল । একবার এরা পিছিয়ে আসে আর একবার ওইদল পিছিয়ে যায় কিন্তু কোনো
পক্ষই হার মানতে চায় না । পটার মুখ খানা রাগে লাল হয়ে গেছে । এদিকে ঝন্টু গায়ের জোরে গোলা ছুড়ছে । বর্ডারের ওপার থেকে
দুশো কিলোমিটার গতিবেগে গোলা এপারে ধেয়ে আসছে । হাঁদু আবার ওদিক থেকে হার-হার-মহাদেব বলে হুঙ্কার দিয়ে চলেছে ।
পটাও চিৎকার করে বলে উঠল, " জয় ভবানী" ।
ঝন্টুও সেই তালে বলে উঠল, "জয় ভবানী ! জয় ভবানী !"
এবার দুই দলের সকলে মিলে চিৎকার করতে শুরু করে দিল । চিৎকার চেঁচামিচি কলেরব কোলাহলের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেল যে
দূর দূর থেকে সেই কর্কশ আওয়াজ শোনা যেতে লাগল ।
এরকম ভয়ঙ্কর কলেরব মেডিকেলের ছাত্রদের কানের পর্দায় ধুমধাম্ করে ধাক্কা মারতে লাগল । ছাত্ররা এখন হবু ডাক্তার ।
কয়েক বছরের পর তারা সব এক একটা গোল্ড মেডেলিষ্ট হবে । কেউ হাড়ের ডাক্তার হবে, কেউ চোখের ডাক্তার হবে, কেউ আবার
কানের ডাক্তার হবে আরও কত কি যে ষ্পেশালিষ্ট হবে তারাই জানে ।
ছাত্ররা তাদের নিজের নিজের রুমে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করছিল । কিন্তু এরকম কোলাহল হতে থাকলে তো তাদের কানের বারোটা বেজে যেতে পারে, তাহলে মেডেল পাবে কি করে । এইভাবে চলতে থাকলে কানের ব্যামো এবং মাথা খারাপ হয়ে টাল হয়ে যেতে পারে আর সেক্ষেত্রে মেনটাল হাসপাতালেও নাম লেখাতে হতে পারে ।
বিরক্ত হয়ে কতগুলো ছাত্র বাইরে বেরিয়ে এসে এর তীব্র প্রতিবাদ করল । কিন্তু তাতে কোনো লাভ হল না, পটা ও হাঁদুরা ছাত্রদের
কোনো গুরুত্বই দিল না । তবুও পটারা হাঁদুরা চিৎকার করেই চলল । যুদ্ধের চরম পরিণতি এখনও হয়নি, যুদ্ধ থামানোর কোনো মানেই হয়না ।
ছাত্ররা ফিরে গেল । যুদ্ধ চলতেই থাকল । কিছুক্ষণ পরে ঝন্টু দেখল দুজন গার্ড লাঠি হাতে ময়দনের দিকেই ছুটে আসছে ।
ছুটে আসতে আসতে একটা গার্ড একেবারে দাঁত পিষে বলে উঠল, " দাঁড়া ব্যাটারা ! তোদের মজা দেখাচ্ছি ! "
ধরা পড়লে নির্ঘাত লাঠিপেটা করবে । কিন্তু দুই দলের কেউই লাঠিপেটা হতে চায় না ।
তাহলে যুদ্ধের কি হবে !
যুদ্ধ-বিরাম নাকি যুদ্ধাবসান ! - এই সিদ্ধান্তে আসার আগেই একটা গার্ড লাঠি তুলে মারতে গেল । ঝন্টু, পটা, হাঁদু কেউই আর একদন্ড দাঁড়ানোর সাহস দেখাল না । দুই দলই ময়দান ছেড়ে পালালো । কেউ হারলো না, আবার কেউ জিতলো না ।
কিন্তু আজ একজনাই জিতেছে আর সে হল ঝন্টু । যে ছেলে কালো বেড়াল দেখলে ভয়ে থরথর করে কাঁপত আজ সেই ঝন্টু কালো
বেড়ালকেই ভয় পাইয়ে দিয়েছে । ওটা কোনো ভূত-প্রেত নয় । ওটা কেবলমাত্র একটা আস্ত কালো বেড়াল, ঠেলায় পড়ে গাছে উঠে বসেছিল ।
ঝন্টুর ভয়ে সেই কালো বেড়াল ল্যাজ তুলে পালিয়েছে ।
আজ ঝন্টুর জয় হয়েছে ।
আজ ঝন্টু তার ভয়কে জয় করেছে ।
No comments:
Post a Comment