বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Friday, 9 March 2018

পথভোলা : 'বাংলা গল্পসল্প' নিবেদিত ছোট্ট একখানা গল্প ।

  " পথভোলা "

"আলীম বাবু"

     হঠাৎ  এক পুরোনো বন্ধুর সাথে কাঞ্চননগর যাওয়ার পথে দেখা হয়ে গেল । সে আমার বহুদিনের পুরোনো  বাল্যবন্ধু ।
 ওর নাম  সোমনাথ পাল ।   ডাক নাম ভোলা,  আমি এই নামেই ডাকতাম ।   আমার সাথে প্রাইমারী স্কুলে একই ক্লাসে পড়ত সে । তখনকার দিনে আমরা খুব মজা করতাম স্কুলে । টিফিন হলেই  কুল পাড়তে, আম পাড়তে, জাম পাড়তে, কাঁঠাল পাড়তে  চলে যেতাম ।

      এতদিন পরেও সে আমাকে ঠিক চিনে ফেলল । এটা দেখে  আমি একটুও অবাক হয়নি  কারন  ভোলার স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর,  সহজেই কিছু ভুলত না   এখনও তাই । কিন্তু আমি প্রথম প্রথম ওকে চিনতেই  পারিনি ।   পরে যখন পরিচয় দিল তখন  চিনতে পারলাম ।   আমার চেহারায় খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও  ওর চেহারাটা অনেকটা  পাল্টে গেছে । 
কেমন যেন চোখদুটো অনেকটা ভিতরে ঢুকে গেছে,  চুলগুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে ।  গায়ে ময়লা বসে গেছে ।  যেন প্রায় সপ্তাহখানেক স্নান করেনি । মুখটা আগের থেকে অনেক বেশি কালো মনে হল ।   এত কালো তো সে আগে ছিল না ।   দিনের পর দিন রোদে রোদে ঘুরলে ফর্সা মানুষের মুখখানা যেমন কালো দেখায়   ঠিক তেমন ।
 
   আমার কাছে এসে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, " কেমন আছিস রে ?"
আমি বললাম,  ভালো আছি ।  তারপর আমিই বলে উঠলাম, " তুই কেমন আছিস ।   অনেক দিন পর তোর সাথে দেখা হল ।  তোর এই অবস্থা কেন রে  ভাই । তোর কি হয়েছে ?

  সে বলল, " আমি বিয়ে করেছি ।   আমার একটা মেয়ে হয়েছে    ও এখন ছমাসের শিশু ।  "
আমি বললাম, " এ তো ভালো খবর ।" 
ভোলা বলল, " না রে ভাই,  ভালো খবর না ।"
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, " কেন এমন বলছিস,  মেয়ে হয়েছে বলে  ?"
ভোলা বলল, " না রে ভাই ! আমার মেয়েটি ভারী অসুস্থ ।  ওর একটা অপারেশন করাতে হবে ।  পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হবে ।  কিন্তু আমার কাছে পঁচিশটা  টাকাও নেই ।"

      ভোলার কথা শুনে ভারী কষ্ট হল ।  চোখদুটো প্রায়  জলে ভরে এল ।
ভোলা বলল, " আমার চাকরিটা চলে গেছে রে ।   একটা বেকারীতে কাজ করতাম ।  রুটি কেক বানাতাম ।   ভালোই চলছিল কিন্তু ঐ নতুন ম্যানেজারটা  আসার পর সবকিছু কেমন শেষ হয়ে গেল রে   ভাই !"
আমি বললাম, " ম্যানেজার কি করল ?"
 ভোলা বলল, " ওই ম্যানেজারের সাথে আমার বনিবনা হত না ।   একদিন চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিল ।  "
 আর আমার বাবাও আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে ।  সম্পত্তি থেকে বেদখল করেছে । 
তাদের কাছে হাত পাতেনি ভাই ! "
   আমি বললাম, " বেদখল করল কেন ? "
ভোলা বলল, "প্রেম করে বিয়ে করেছি বলে ।  তোদের জাতের মেয়ে বলে  ঘরে তোলেনি  বরং  ঘরছাড়া করে দিল ।"
আমি কিছু না বলে চুপ করে ওর কথাগুলো শুনে গেলাম ।

  ভোলা বলল, "ভাই  তুই আমাকে টাকাটা ধার দিতে পারবি ।   আমি খুব শীঘ্রই শোধ করে দেব ।  কথা দিচ্ছি ।"
আমি ভাবুক হয়ে পড়লাম ।  ভোলাকে কি করে বলি যে  আমার চাকরিটাও চলে গেছে ।   অবশ্য চুরির  অপবাদে নয়,  আমার অ্যাটিটিউডের কারনে  আমার জেদের কারনে ।

     যাই হোক আমি এসব কথা ভোলাকে বললাম না ।  বেচারা একেই দুঃখী,  তারওপর আমার দুঃখ   ওকে শোনাবার কোনো ইচ্ছে আমার নেই ।  তাছাড়া আমার পকেটে মাত্র দুশো টাকা পড়ে আছে । কিন্তু ভোলার দরকার পঁচিশ হাজার টাকা।   তাই দুশো টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমি ওর অপমান করতে চায় না ।  আমার কাছে অতগুলো টাকা থাকলে এমনিতেই আমার বন্ধুটিকে দিয়ে দিতাম । কিন্তু আমিও যে অসহায়,  আমিও যে বেকার   সেকথা ওকে বলি কি করে ।
অবশ্য আমি এখনও বিয়ে করিনি তাই সংসারের চাপ  এখনও ঘাড়ে আসেনি ।
 
আমি ভোলাকে বললাম, " ভাই তোকে দেওয়ার মতো আমার কাছে  টাকা পয়সা  কিছুই নাই রে ।   আমাকে মাপ কর  ভাই ।" একথা বলতে বলতে আমার চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে গেল ।   কিন্তু ভোলার চোখে এক বিন্দু জলও  আমি দেখতে পেলাম না । মনে হয়  কেঁদে কেঁদে ওর চোখের সব জল বেরিয়ে গেছে ।  ওর অশ্রুগন্থি শুকিয়ে গেছে  সেখান থেকে আর কোনোদিন  জল বেরোবে না ।  আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলাম   আর কখন যে  সে চলে গেল বুঝতেই পারলাম না ।
      চোখের জল মুছে দেখলাম ভোলা কিছুটা দূরে আরও দুটো লোকের সাথে কথা বলছে ।   তাদের দুজনায় মাঝ বয়স্ক লোক ।   বোধহয় ভোলা ওদের কাছে টাকা ধার চাইছে ।  হঠাৎ দেখলাম ওদের মধ্যে একজন ভোলাকে ধাক্কা দিল ।  আর একটু হলেই  ভোলা মাঝ রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ত  কিন্তু কোনো রকম নিজেকে সামলে নিল । 

বড্ড বেয়াদপ লোক তো ! সাহায্য চাইলে ওভাবে কাওকে ঠেলে দেয় নাকি ! পারবো না  অথবা দেবো না   বলে দিলেই তো হয় !

 লোকটার উপর ভীষণ রাগ হল ।   ইচ্ছে করল লোকটাকেও ঠিলে রাস্তায় ফেলে দিই,  কেমন লাগে বুঝুক ব্যাটা !
 কিন্তু ভাবলাম,   না থাক্ গে,  ও নিষ্ঠুর বলে কি  আমাকেও  অমন হতে হবে নাকি ।
রেগে রেগে লোকটার দিকেই তাকিয়েছিলাম ।  কখন যে ভোলা চলে গিয়েছে বুঝতেই পারলাম না । 
ওই লোক দুটো  আমার দিকেই আসছে দেখে  কেন জানি না  আমার রাগটা আরোও বেড়ে গেল ।

তারপর লোক দুটো নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করতে লাগল ।
  আমি ঐ লোকটার কথাগুলো পরিস্কার  শুনতে পেলাম ।
 সেই লোকটা অপরজনাকে বলছে,
 " নেশা করে পুরো দেশটা একেবারে শেষ হয়ে গল !
 জোয়ান জোয়ান ছেলেগুলো সব     মদ-গ্যাঞ্জা-ড্রাগস্ খেয়ে খেয়ে  শরীরের আর কিছু রাখল না " ।।

সমাপ্ত

written by :-

 

No comments:

Post a Comment