বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Saturday, 17 March 2018

ডুমুর গাছে ঝুমুর / চাম্পু অ্যাডভেঞ্চারস্' সিরিজের গল্প / হাসি মজার গল্প / কিশোরদের গল্প

 " ডুমুর গাছে  ঝুমুর "

      সকাল সকাল  মাঠে খেলতে এসেছি ।  কিছুক্ষণ খেলার পর  বলটা  কচুবনের ঝোপে হারিয়ে গেল,  অনেক খুঁজেও যখন  পেলাম না   তখন মাঠে  বসে গল্প করতে লাগলাম ।  
    চাম্পু হঠাৎ বলে উঠল,
 "আজকে দুপুর বেলায়  বাঁশতলায় চলে আসবি !  কুল পাড়তে যাবো  !"
 চাম্পু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, " কিরে বাবু !   নারকেলকুল তো  অনেক খেয়েছিস   আপেলকুল খেয়েছিস  কোনোদিন 
 বাপের কালে !"
আমি রেগে গিয়ে বললাম, " তোর বাপ খেয়েছে তো   আপেলকুল !"
 চাম্পুর বিকৃত মুখ দেখে ভালোই বুঝলাম   যে বাপ তুলে কথা বললে  সবারই গায়ে লাগে ।
চাম্পু  খ্যাঁক খ্যাঁক করে একগাল হেসে নিয়ে বলল,
" রাগ করছিস কেনে ভাই !  আগে কখনও খাসনি  তবে আজকে খাবি !  হেব্বি মিষ্টি !  সলিড খেতে,  খেলেই বুঝতে পারবি । "

  আমি মুখটা গোমড়া করে চাম্পুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম  কিন্তু  মুখে আর কিছু বললাম না ।  এই ধরনের কথাবার্তা  বলা  চাম্পুর স্বভাব ।
ওর কাছে ভালো আর ভদ্র ভাষার আশা করাটাই ভুল ।  যাগ্ গে,  এটা ঠিক যে   আমি আগে কোনোদিন আপেলকুল খাইনি ।
আপেলকুল আবার কি রকম ধরণের কুল হয়  কে জানে !
জিজ্ঞাসু চিত্তে চাম্পুকে বললাম, " আপেলকুল আবার কিরকম খেতে   রে ভাই !   আপেলের মতো মিষ্টি নাকি ! "

" শুধু কি মিষ্টি,  দেখলে  তোর চোখ  ছানাবড়া হয়ে যাবে  বুঝলি !  এক একটা কুলের সাইজ  আপেলের  চাইতেও বড়ো । "
আমি বিস্ময়স্বরে  বললাম, " তাই  নাকি ! "
চাম্পু বলল, " একদম ।   রাজুকে জিজ্ঞেস কর না !  ওকে তো খাইয়েচি !  কি রে  রাজু বল্  কেমন খেলি ! "

     রাজু একটু অন্যমনস্ক ছিল কিন্তুর চাম্পুর হাঁক কানে যেতেই  পাতি হাঁসের মতো প্যাঁক প্যাঁক করে উঠল,  " সলিড খেতে ভাই !  একদম রাপচিক খেতে । "
এই বলে রাজু আবার অন্যমনস্ক হয়ে গেল ।

 রাজুর বড়ো ভাই সানু ঝড়ের গতিতে কচুবন থেকে এসে বলল, " দেখলি তো ! আমি গেলাম আর বলটা নিয়ে চলে এলাম !
তোদের দ্বারা  বল খোঁজা হবে না  বরং  তোরা বসে বসে  ঘাস ছেড়  আর   খা ! "

   আমি দেখলাম চাম্পু সত্যিই ঘাস ছিঁড়ছে   তবে এখনও  মুখে তোলেনি ।   কেন যে মনে হল  এই বুঝি একমুঠো ঘাস  চাম্পু  মুখে পুড়ল বলে ।
আর যদি সত্যিই চাম্পু ঘাস খায়  তাতে আমি এতটুকু অবাক হবো না ।  কারন আমি জানি চাম্পু সব পারে ।   দরকার হলে ঘাসও খেতে পারে  আর 
ঘাস খেয়ে  দিব্যি হজমও করে ফেলবে  বলে  আমার পুরো বিশ্বাস ।

 বলটা  চাম্পুই মেরে কচুবনে পাঠিয়েছিল ।   ব্যাটা সোজা ব্যাটে খেলতে পারে না ।   আর খালি আংবাং চালায়,   ভাগ্যের জোরে একদুটো লেগেও যায় ।
  বল আসাতে  আমাদের খেলা আবার চালু হল ।   বোধহয় বেলা বারোটা পর্যন্ত খেলেছিলাম । 

 বাসায় এসে দেখলাম সত্যিই ঘড়িতে বারোটা বেজে গেছে   আর তার সাথে সাথে আমারও বারোটা বেজে গেল ।
বাড়ি ঢুকতে না ঢুকতেই মা  পেয়ারা গাছের একটা সরু মসৃণ ডাল দিয়ে মেরে   আমার গায়ের ছাল ছাড়িয়ে নিল ।   বাঁ পায়ে  দুটো লাল লাল রেখা ফুটে উঠল । 
দাঁত কটমট করে মা  বলল,
 " লাটের  বাঁট নাকি,     অ্যাঁ !
 সেই কোন  সকালে চা মুড়ি  খেয়ে বেরিয়েছে  হনুমান !  এখন ঘর ঢুকা হচ্ছে ! 
 খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেবো !  পড়াশোনার মাথা খেয়ে নিয়েছে একেবারে ।
  খালি টো টো করে ঘুরে বেড়ানো ।
বেরোনো বার করছি  দাঁড়া ! 
যা শিগগির স্নান করে নে ।   আর  খেয়ে দেয়ে ঘুমো !
দুপুরে  ঘর থেকে বেড়োলে ঠ্যাং দুটো খোঁড়া করে দেবো   বুঝেছো ! "

    মায়ের হাতে মার খেয়ে আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম ।   তারপর স্নানটান করে ভাত খেয়ে শোবার ঘরে  মিছিমিছি  শুয়ে পড়লাম ।   ঘুম পাবার কথায় না,  আমার কোনোদিন দুপুরে ঘুম পায় না ।
জোর করে কিভাবে ঘুমোতে হয় তা আমার জানা নেই ।   আর তাছাড়া দুপুর বেলায় বাঁশতলায় যাবার কথা ।   কুল পাড়তে যাবার প্লান করেছে চাম্পু ।
বাপের জন্মে আপেলকুল খাইনি  তাই তো আপেলকুল খাওয়ার ভারী স্বাদ হচ্ছে মনে ।   কিন্তু মায়ের শাষাণি উপেক্ষা করাটাও  যে  খুব সুবিধের হবে না ।
তাহলে কি করা যেতে পারে !
  এক দিকে আপেলকুলের লোভ  আর অন্যদিকে  মায়ের মারের ভীতি   এই দুইয়ের মধ্যে চরম সংঘর্ষ বেঁধে গেল ।
কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারলাম না  কারন কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম  তা  বুঝতেই পারেনি । 

   হঠাৎ পশ্চিমদিকের জানালার কাছ থেকে কিরকম একটা বিকট শব্দ কানে আসতে লাগল । 
ঘুমটা পুরোপুরি ছুটে গেছে ।   দেখলাম জানালার পর্দা সরিয়ে চাম্পু আর সানু উঁকি মারছে 
আর  চাম্পু মুখ দিয়ে কিরকম একটা ভয়ানক শব্দ বের করছে  ।  এটা কোন্ জন্তুজানোয়ারের ডাক তা ঠাহর করা মুশকিল ।
  চাম্পু ফিসফিস করে বলল, " কি রে যাবি না   নাকি !  আপেলকুল খাবি না ! "
তখনও  আমার মনটা ভারী বিষণ্ণ   তাই ভেংচিয়ে বললাম,
" যাবো না যা !  পালা এখান থেকে !  ফোট এখান থেকে !
 কিন্তু চাম্পু যাবার পাত্রই না ।  "
পালালো না তো বটেই  বরং  কাকুতিমিনতি করতে লাগল ।
যেন আমি না গেলে  ওর চলবে না । 
আমি বললাম, " মা আমাকে ফুলিয়ে দেবে । "
 চাম্পু বলল, " লুকিয়ে চুপিচুপি পালিয়ে চ !  তোর মা দ্যাগগা এখন ঘুমোচ্ছে !  বুঝতে পারবে না   চলে আয় । "

   চাম্পু ঠিকই বলেছে মা এতক্ষণে নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে ।  এই সুযোগে ফুড়ুৎ করে পালালেই হয় ।
 সেই বিকেলে যখন কলে জল আসবে  তখন মা উঠবে তার  আগে মা আর উঠছে না  গ্যারাণ্টি ।

    যায় এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ি এই ভেবে  আমি সড়াৎ করে কেটে পড়লাম ।   চাম্পু,  রাজু,  সানু  আর আমি  চারজনা মিলে বাঁশতলায় বসে পুরো প্লানটা সেড়ে ফেললাম । 
 সানু রাজু দুটো চিকচিকির থলে জোগাড় করেছে ।  কিন্তু আমার কাছে কোনো ব্যাগ অথবা থলে নেই,   চাম্পুর কাছেও নেই । 
চাম্পু বলল, " আমার জামা আর প্যাণ্টের পকেট তো রয়েছেই । "
চাম্পুর দেখাদেখি আমি বললাম, " আমারও পকেট আছে । "

   যেখানে আপেলকুল পাওয়া যায় সেই জায়গাটা মোটেও কাছে নয় ।  প্রায় কুড়ি পঁচিশ মিনিট হেঁটে সেখানে পৌঁছালাম ।  একটা বিশাল দিঘির মতো পুকুরে পাড়ে এসে আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম ।
এই জায়গাটাকে জঙ্গল  বললেও  কম বলা হবে না ।   চর্তুদিকে খালি বড়ো বড়ো গাছ ।
তেঁতুলগাছ  পলাশগাছ  নিমগাছ শিশুগাছ বেলগাছ  লেবুগাছ  কলাগাছ  কাঁঠালগাছ  পেয়ারাগাছ  জামগাছ  কুলগাছ ।   আরো হাজার রকমের গাছ,   সবকটার নাম জানি না ।

   "এত ফলের গাছ এই জঙ্গলে ।  কেউ এখানে আসে না নাকি,    এই গাছের ফলটল কেউ খায় না নাকি ! "  চাম্পুকে  প্রশ্ন করলাম ।
চাম্পু বলল, " এটা রাজাদের বাগান ছিল ।  এখন ইনিভার্সিটির লোকেরা দেখাশোনা করে । "
 আমি বললাম, " ওরা  ফল নিয়ে যায় না । "
 হঠাৎ বাঁদিক থেকে রাজু বলে উঠল, " ওরা ভীতু আছে !  ভয়ে এই জঙ্গলে ঢোকে না । "
- কিসের ভয় ।
 রাজু বলল, " ভূতের ভয়,  শাকচুন্নীর ভয়,  পেত্নীর ভয়,   ব্রক্ষ্মদৈতের ভয়   বুঝলি চাঁদু !
 চাম্পু বলে উঠল, " ভূত  না ছাই  এখানে কিস্যু নাই ! "
রাজুর কথা শুনে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু চাম্পুর আশ্বাসে বিশ্বাস আমার আছে । 
আমি বললাম, " ওই তো কত কুলের গাছ কিন্তু কই আপেলকুল তো দেখতে পাচ্ছি না । "
চাম্পু বলল, " ওদিকে পুকুরের ওপারে গাছটা আছে ! "

পায়ে পায়ে এগিয়ে চললাম যেদিকে আপেলকুলের গাছটা আছে ।   চাম্পুর কথায় এই কুলগাছ নাকি  বর্ধমানে আর কোথাও নেই ।  গাছের বয়স দুইশত পঞ্চাশ বছর ।
এটা রাজাদের আমলের বিলীতি কুল গাছ ।   রাজা উদয়চাঁদের পূর্বপুরুষরা এই গাছ লাগিয়ে বর্ধমানের লোকের উদ্ধার করেছিলেন ।

গাছেদের বয়স নির্ণয় করতে আমি জানি না,  চাম্পু জানে ।  সব রকমের হিসেবনিকেশ চাম্পুর জানা ।  আমাদের মহান চাম্পু । 
চাম্পু যখন বলছে আড়াইশো বছর  তবে  তাই হবে হয়ত ।  


   আগে দেখি না কিরকম আপেলকুল তারপর না হয় বিচার করবো ।  গন্তব্যে পৌঁছে দেখলাম  সত্যি আশ্চর্য্য রকমের কুলগাছ বটে ।
আগে কখনও এত বড়ো বড়ো কুল দেখি নি ।   প্রথমে ভেবেছিলাম  চাম্পু আমাকে ডপ দিয়েছে ।  কিন্তু না,  চাম্পু মোটেই ডপ দেয়নি ।
একেবারে ষোলা আনা সত্যি ।

   তবে এত বড়ো কুল কিসে নিয়ে যাবো  এক একটা পকেটে তো একটা কি দুটোর বেশি ধরবে বলে তো মনে হয় না  তাহলে কি হবে ।
আমার জামার পকেট টা খুব ছোটো ।  তবে চাম্পু ব্যাগথলে কেন নিয়ে আনল না ।  আমাকেও বলে নি  অবশ্য আমি না হয় সন্দেহ করেছিলাম  কিন্তু চাম্পু তো সব জানত তাহলে সে কেন ব্যাগ ট্যাগ আনেনি ।
এই প্রশ্নটা যেই ওকে করতে যাবো  অমনি দেখলাম চাম্পু একখানা বড়ো পলিথিন ব্যাগ বের করল ।   আমি হাবাবোবার মতো চাম্পুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।
চাম্পু আমাকে দেখে বোধহয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দাঁত দেখিয়ে ফ্যাঁক ফ্যাঁক করে ওর স্পেশাল হাসিটা হেসে ফেলল ।   আমি রাগ করলাম না কারন চাম্পুর এটা স্বভাবদোষ ।

    হঠাৎ পেছনদিকে তাকিয়ে দেখলাম  সানু আর রাজু গায়েব ।   চাম্পুকে বললাম, " ওরা দুভাই কোথায় গেল রে চাম্পু ।  "
চাম্পু আমার কথার উত্তর দিলনা ।  ব্যাটা কি ফন্দি আঁটছে কে জানে ।

    একটুপরেই  হঠাৎ পাশের বনকচুর বড় বড় পাতাগুলো সড়সড় করে নড়ে উঠল ।  তাকাতেই দেখলাম দুভাই বেরিয়ে আসছে । 
ওদের জিজ্ঞেস করলাম, " কোথায় গিয়েছিলি তোরা । "
ওরা কোনো উত্তর দিল না । 
এখানে এসে এরা এরকম করছে কেন ।   বোবা টোবা হয়ে গেল নাকি । 

    দুইভাই হাতে করে অনেকগুলো আধভাঙা আধলা ইঁট কোথা থেকে নিয়ে এসেছে  জানিনা ।
 দুটো করে আধলা ইঁট দুই হাতে নিয়ে দুইভাই মিলে  ঠোকাঠুকি করতে লাগল  ঠিক আদিম মানুষের মতো ।  যেমন করে আদিম মানুষরা পাথরে পাথরে ঠুকে আগুনের আবিস্কার করেছিল সেই কোন আদিম যুগে ।
আর হাজার হাজার যুগ পেরিয়ে এসে এই দুই ভাই  ইঁটের সাথে ইঁট ঠুকে  কি আবিস্কার করতে চাইছে ? 
নতুন কিছু আবিস্কার হবে ভেবে  ফ্যালফ্যাল করে ঠোকাঠুকি দেখতে লাগলাম ।
নতুন কিছু তো হলনা বরং দুটো আধলা ইঁট একে অপরকে আঘাত করে আরো কতকগুলো ইঁটের টুকরো হয়ে গেল ।   এর চেয়ে বেশি কিছু হওয়ার ছিল না ।

     ছোটো ছোটো ইঁটের টুকরোগুলো থেকে দুটো করে ঢেলা হাতে নিল চাম্পু সানু আর রাজু ।   তারপর একসাথে ওরা গায়ের জোরে ছুঁড়ে মারল কুল গাছের ডালে ।
অমনি কুলগাছটা  নেচে উঠল,  তারপর গাছ থেকে টপাটপ কুল পড়তে লাগল ।  ঢিল ছোড়া বন্ধ হলে আমরা সবাই মিলে কুলগুলো কুড়োতে লাগলাম ।
খালি  চাম্পু  না কুড়িয়ে  আমাকে পলিথিনের ব্যাগটা দিয়ে বলল, " নে  কুড়ো ! "

  ব্যাটা লাট সাহেবের মতো কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল আর নির্দেশ দিতে লাগল,
 " আরে  আরে   ওই তো   ঐ খানটাতে একটা পড়ে আছে !  হ্যাঁ হ্যাঁ  ঐ খানটাতেই খোঁজ  !   একটাও মিস করিস না যেন ! " 
আমিও আদেশ পালন করতে লাগলাম ।
একটা কুল হাতে নিয়ে আর লোভ সামলাতে না পেরে  তৎক্ষণাৎ আপেলকুলে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম ।  
আহা কি সুস্বাদু খেতে ।  দিব্যি আপেল খাচ্ছি মনে হচ্ছে । 
চাম্পু ধমক দিয়ে বলল, " এখন খাস নে !  পরে খাবি ক্ষণ,  এখন কুড়ো দেখি ।  "
আমি খেতে খেতে বললাম, " কুড়োচ্ছিই তো ! দেখছিস তো ! "
আবার চাম্পুরা  গাছে ঢেলা মারতে লাগল  আবার  টপাটপ কুল পড়তে লাগল আর  আমি পটাপট কুড়োতে লাগলাম ।
আমি পকেটে যটা আঁটল  ভরে নিলাম ।   আমরা পুরো ব্যাগ থলে পকেট সব ভরে নিয়েছি ।

এবার বাড়ীর দিকে রওনা হবো  ঠিক এমন সময় কে যেন খিলখিল করে হেসে উঠল মেয়েলি কণ্ঠে ।  খিল খিল করে বলে উঠল,
" কারা কুল পাড়ে রে !
এত সাহস কে দেয় রে ! "

   আমি ভাবলাম  এ নিশ্চয় চাম্পুর বেয়াদপি ।   ও ব্যাটা মেয়েলি গলা করতে পারে ।   আমাদের পিছনে চাম্পুই  ছিল  আর আমরা তিনজনা গল্প করছিলাম ।   তার মানে চাম্পু ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না ।
আমি বললাম, " দ্যাখ চাম্পু বেশি চালাকি মারিস না !  ইয়ারকি আমার  একদম  ভালো লাগে না ।  "
চাম্পুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম চাম্পু কেমন যেন  ভ্রূ কুঁচকে  আমাকে  রাজুকে  আর সানুকে দেখছে ।
দোষ করেও মুখখানা এমন করবে যেন কিছুই করেনি ।
 কিন্তু চাম্পুকে একটু বেশি গম্ভীর মনে হল । 
চাম্পু বলল, " এখানে আমরা ছাড়াও  অন্য কেউ আছে ।   আঁড়ালে আবডালে লুকিয়ে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে । "

   আমরা কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকলাম ।  দেখলাম চাম্পু কান খাঁড়া করে কি যেন শোনার চেষ্টা করছে ।   আওয়াজটা এসেছিল উত্তরপূর্ব দিক থেকে  ঠিক বাইশ তেইশ গজ দূর হবে ।
ক্রিকেট খেলে খেলে  তা আন্দাজ হয়ে গেছে ।   সঠিক  আন্দাজ করে বলে দিতে পারি বাইশ গজ কতটা হয় ।
ঠিক অতটাই দূরে  রয়েছে  একটা ডুমুর গাছ  আর  আশেপাশে সজনেগাছ  ধুতুরাগাছ ।   তবে ডুমুর গাছটা লম্বায় খুব বড়ো না হলেও   এত চওড়া যে অনেকটা জায়গা অধিকার করে আছে ।
পাতাগুলো এতটাই ঘন হয়ে গাছটাকে ঢেকে রেখেছে   যে গাছের ওপারে কিছু দেখা যায় না   এমনকি  গাছের ভিতরের ডালপালা পর্যন্ত দেখার উপায় নেই ।
তার ওপর আবার কিরকম একটা লতানো গাছ  পুরো ডুমুর গাছটাকে অলঙ্কারের মতো জড়িয়ে আছে  যেমন করে  ক্রিস্টমাসট্রি তে    এল. ই. ডি.  লাইট দিয়ে সাজানো হয়  ঠিক সেই রকম ।

   কেমন যেন  মনে হল হাসিটা  এই ডুমুর গাছটার কাছ থেকে এসেছিল ।  বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না ।  আবার সেই খিলখিল মেয়েলি হাসিটা শুনলাম একেবারে ওই ডুমুর গাছটার কাছ থেকেই ।
সত্যিই কেউ লুকিয়ে গাছের ওপারে আর আমাদের ভয় দেখাচ্ছে ।

     চাম্পুর মাথা পুরো গরম হয়ে গেছে ইতিমধ্যে ।   চাম্পু বিড়বিড় করে বলে উঠল, " আমাকে ভয় দেখানো ! "
  'দাঁড়া ব্যাটা' এই বলে চাম্পু চিৎকার করে বলল, " ডুমুর গাছে কে রে ? "
এক ডাকেই ওখান থেকে ভাঙা ভাঙা ক্ষণা গলায় উত্তর  এল -
 কেঁন রেঁ ?
 তোঁর তাঁতে কিঁ রে ?
 এখানে তোঁর কি চাঁই রে ?

   চাম্পু ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে বলল,
 " একবার বেরিয়ে আয় রে !
 দেখাচ্ছি  ভারী মজা রে ! "

কেন জানিনা আমার বুকটা ঢিপ ঢিপ করতে লাগল ।
এক অজানা ভয়ে গা ছমছম করতে লাগল ।  ডুমুর গাছে কোনো মানুষ আছে,  নাকি অন্য কিছু ?
এই ভেবে গায়ে কাঁটা দিল ।   কি ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর রে বাবা !  শুনলে পরে গা শির শির করে ।
 কোন এক অদৃশ্য চুম্বকীয় আকর্ষণে গায়ের লোমগুলো খাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়ে গেল ।   সানু আবার আমার থেকেও ভীতু ।  ওর মুখখানা কেমন বিবর্ণ টাইপের হয়ে গেছে ।
এদিকে চাম্পু রাগে গজগজ করছে ।  চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে । 
চাম্পু বলল, " তুই কে ? কি চাস ?"
 আবার ডুমুর গাছটা থেকে সেই ভয়ঙ্কর হাড়কাঁপানো খিলখিল হাসিটা কানে বিঁধতে লাগল ।
 হিঁ... হিঁ... হিঁ... হিঁ... হিঁ... ।
ক্ষণা গলায় আবার  বলে উঠল,
"আমি শাকচুন্নীর মাসি !
 আমার নাম ঝুমুর ;
 ডুমুর গাছে থাকি
দিন দুপুরে বাগে পেলে
নোনতা সুরে ডাঁকি !
কে আমায় দেবে ফাঁকি !!
হিঁঃ... হিঁঃ... হিঁঃ... হিঁঃ... !!

 চাম্পু বলল,
 " তুই যদি শাকচুন্নীর মাসি হোস,  তবে আমি হলাম  শাকচুন্নীর বাপ ! "

   এই কথা শুনে শাকচুন্নীর মাসি  আরো জোরে জোরে  সেই বিকট হাসি হাসতে লাগল ।
আমি সানু আর রাজু ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলাম ।  কিন্তু চাম্পু যেন পাগলের প্রলাপ বকতে লাগল ।  বিড়বিড় করে কিসব বলতে লাগল,  ভালো করে বোঝা যায় না ।
 মন্ত্রটন্ত্র পড়ছে বোধহয় !
 পড়ুক  পড়ুক ! মন্ত্র পড়ুক ।
 এই বিপদের সময় যদি ওর মন্ত্র শুনে শাকচুন্নীর মাসি পালায়  তবে আমরা বেঁচে যাবো ।   না হলে  সে যদি আমাদের ঘাড়  মটকে দিয়ে  রক্ত চুষে খায়  তাহলে তো  মরে যাবো ।
কিন্তু এত আস্তে আস্তে পড়া মন্ত্র  মাসির কান পর্যন্ত পৌঁছোচ্ছে তো আবার ।   জোরে জোরে চণ্ডীপাঠের মতো করে পড়লে কি হতো না !  কি জানি বাবা ! চাম্পুই জানে কিভাবে মন্ত্র পড়তে হয় ।

   এখান থেকে পালাতে পারলেই বাঁচি আর তাছাড়া কুল তো পাড়া হয়েই গেছে ব্যাগ আর পকেট সব ভর্তি করে নিয়েছি ।  তবে এখানে থেকে খামকা শাকচুন্নীর মাসির সাথে লড়াই করার কি কোনো মানে হয় !
কাঁপতে কাঁপতে চাম্পুকে বললাম, " ভাই  পালিয়ে চল ! "
সানুও আমার সাথে একমত হয়ে বলল, " হ্যাঁ ভাই চাম্পু  পালিয়ে চল ভাই ! "
কিন্তু  চাম্পু আমাদের কথায় কান দিল না ।
উন্মাদ হয়ে এদিকে ওদিকে কি যেন খুঁজতে শুরু করে দিল ।
 কি খুঁজছে ও ?
শাকচুন্নীর সাথে লড়াইযুদ্ধ  করবে নাকি !  চাম্পু কি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেল নাকি !

 আমি আবার বলে উঠলাম, " কি হল তোর চাম্পু ! ক্ষেপে গেলি নাকি রে ! "
 চল্ বলছি' এই বলে চাম্পুর জামা ধরে টান দিলাম ।   সঙ্গে সঙ্গে চাম্পু একটা 'হুঁমঃ' শব্দ করে হাত ঝিনকিয়ে আমাকে প্রায় ঢেলেই দিল ।  আমি নিজেকে কোনোরকম সামলে নিলাম ।

   এক্ষুণি এখান থেকে পালানো দরকার  আর তা নাহলে শাকচুন্নী ভূতপেত্নীর কবলে অকালে প্রাণটা যাবে ।  কিন্তু চাম্পু তো যেতেই চায়না  ।  ওকে একা ফেলে যায় কি করে ।  শেষে বিশ্বাসঘাতকের তকমা নিয়ে বাড়ি ফিরব । 
আমি কতটা দেশপ্রেমী আর  দোস্তিপ্রেমী  হতে পেরেছি  তা জানি না   তবে চাম্পুর পাগলামির কারনে খালিপিলি মহামূল্যবান জীবনটার সর্বনাশ করার  কোনো ইচ্ছে আমার নেই । 
তাহলে কি চাম্পুকে ছেড়ে পালিয়ে যাবো ?
সানু আর রাজু একসাথে হঠাৎ  বলে উঠল, " বাবু  পালিয়ে চল ! "

   হঠাৎ যেন সন্ধ্যা নেমে এল ।  আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি কোথা থেকে একরাশি ধূসর ঘন মেঘ এসে মাথার ওপর ভাসছে ।
বসন্তের শুরুতে এরকম কালো মেঘের আর্বিভাব হওয়াটা কেমন একটা অশুভসূচক বলে  মনে হল ।  মনে হল এবার বোধহয় কোনো অঘটন ঘটবে ।
আর অঘটনটা চাম্পুই ঘটালো কতকগুলো ইঁটের টুকরো হাতে নিয়ে ধড়াধড় ছুড়তে লাগল ডুমুর গাছটাতে । 
হঠাৎ ডুমুর গাছটা একবার সড়্ সড়্ করে কেঁপে উঠল ।
তারপর অদ্ভুতভাবে  গাছটা দুলতে লাগল ।   ঝোড়ো হাওয়ার ধাক্কায় গাছপালা যেমন এদিক ওদিক কাত হয়ে দুলতে থাকে ঠিক সেইভাবে ডুমুর গাছটাও দুলতে শুরু করে দিল । 
কিন্তু কোথাও কোনো ঝোড়ো হাওয়া বাতাস বয়ছিল না ।  তাহলে ডুমুর গাছটা এরকম করছে কেন ?
শাকচুন্নীর মাসি দেখা দিচ্ছে না কেন ?  ডুমুরের ফুল   নাকি ?

 খানিকক্ষণ বাদে আবার  সেই ভয়ঙ্কর পিলেচমকানো হাসিটা শোনা গেল ।  এইবার হাসিটা  আরো তীব্র ও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল । 
ভালো করে শুনে বুঝতে পারলাম  এ যেন হাসি নয়  বরং কান্নার শঙ্খনিনাদ ।

   চাম্পুর ছোড়া ঢিল নিশ্চয় ঐ শাকচুন্নী কিংবা পেত্নীটার গায়ে লেগেছে আর সেই জন্যই  সে এরকমভাবে কেঁদে উঠল ।   কি বিষাদময় কান্না !  এর চেয়ে ওর খিলখির হাসিটা ঢের ভালো ছিল ।
এ কোথায় এসে পড়লাম ।   কেন যে চাম্পুর কথায় এখানে এলাম ?  এই আপেলকুলের লোভ  আমাকে হুলস্থূল করে ছাড়ল । 
চাম্পুর সাথে কোনো জায়গায় যাওয়া ঠিক না ।  ব্যাটা যেখানে যাবে বিপদও ওর পিছন পিছন যাবে ।
একদম কুপয়া ।   ব্যাটা  নিজেই একখানা আপদ । 
পালাবো পালাবো ভাবছি ঠিক এমন সময় শক্তমতো কি একটা সোজা কপালে এসে লাগল ।  প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হল  ধড়াস্  করে কপালে হাতে দিয়ে মাটিতে বসে পড়লাম ।
কপাল ফুলে আলু হয়ে গেছে কিন্তু রক্ত বেরোয়নি ।  মাথাটা চিনচিন করতে লাগল ।  হঠাৎ সানু আর রাজুর মুখ থেকে উঃ আঃ শব্দ হতে লাগল অর্থাৎ তারাও আহত ।   কিন্তু চাম্পু এক নাগাড়ে ঢেলা ছুড়েই চলেছে ।

   হতভম্ব হয়ে দেখলাম  একি ! ডুমুর গাছটা থেকে তীরের গতিতে মোটা মোটা ডুমুর ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে । 
শাকচুন্নীটা ডুমুর ছুড়ে মারছে ! প্রতিহিংসায়  প্রত্যাঘাত করছে !
আমি ভয়ে  প্রকাণ্ড একটা তেঁতুলগাছের গোঁড়ায় গা ঢাকা দিলাম ।  আমার দেখাদেখি দুইভাইও আমার পিছনে এসে লুকোলো ।
আমার বুকটা আরো জোরে ঢিপঢিপ করতে লাগল শ্বাসপ্রশ্বাসের গতিটা  বেড়ে গেল ।   সানু ও তার ভাই রাজুরও  একই হাল । 

   কিন্তু চাম্পু এখন হার মানেনি ।  ও  যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ।
একটার পর একটা ডুমুরের আঘাত সহ্য করেও চাম্পু এখনও ময়দানে টিকে আছে ।  কিন্তু ওদিক থেকে ডুমুরের গোলা বর্ষিত হয়েই চলেছে ।   হঠাৎ চাম্পুর ঢেলা শেষ হয়ে গেল ।
এইবার বুঝি চাম্পু ময়দান ছাড়ল বলে ।  কিন্তু না চাম্পু হাল ছাড়ল না  ওর পলিথিন ব্যাগটা থেকে কুলগুলোকে মাটিতে ঢেলে দিল ।  তারপর একটার পর একটা আপেলকুল ডুমুরগাছে ছুড়তে লাগল ।


  এ কি করছে চাম্পু ?
অত কষ্ট করে কুড়োনো কুলগুলো এভাবে ছুড়ছে কেন ?
তাহলে খাবো কি ?
চাম্পু মুখ থেকে  'আহঃ উহঃ  হুঃ হুঃ'  শব্দ  করতে করতে সব কুলগুলো ছুড়ে দিল ।  তাতেও  ব্যাটার স্বাদ মিটলো না ।
নিজের টা তো গেছেই আর  সাথে সাথে সানুর ও রাজুর থলের  কুলগুলোও ছুড়ে দিল ডুমুরগাছে । 
কেন যে থলে গুলো সাথে করে এখানে নিয়ে এলাম না ।   বড় রকমের মিসটেক করে ফেললাম ।
 ওরা দুই ভাই আপষোস করতে করতে কপাল চাপড়াতে লাগল ।  কে জানত চাম্পু এরকম করবে ।  সব মাটি করে দেবে ।


   এখন কি হবে ।  সব কুল ওই ডুমুর গাছে অথবা ঝুমুরের কাছে আছে ।   সেখান থেকে কুল কুড়িয়ে আনার কোনো প্রশ্নই হয়না ।   মনটা ভারী বিষণ্ণ হয়ে গেল ।
উদাসী মন নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।  যুদ্ধ বোধহয় শেষ হয়ে গেছে   কারন কোনো শব্দ পাচ্ছি না  ।   পুরো জঙ্গলটা নিরব নিস্তব্দ্ধ ।
শাকচুন্নী পালিয়ে গেছে মনে হয়,   কোনো কান্না অথবা সেই বিটখাবড়া খিলখিল হাসিটাও কানে আসছে না ।   চাম্পুরও চিৎকার শোনা যাচ্ছে না ।  কে জিতেছে কে হেরেছে বোঝার উপায় নেই ।
সব কিছু যেন থেমে গেছে ।  আকাশে আর কোনো মেঘ নেই,  সূর্যের আলোর ছটায় পুকুরে জল ঝিলিক দিচ্ছে,   নানা রকমের নাম না জানা পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে ।

   এমন সময় হঠাৎ রাজু বলে উঠল, " ভাই চাম্পুর কি হয়ে গেছে দ্যাখ ।  "
সম্বিত ফিরতেই দেখলাম চাম্পু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে ।   একটুও দেড়ি না করে দৌড়ে আমরা তিনজনায় চাম্পুর কাছে পৌঁছালাম ।
চাম্পু বেহোঁশ হয়ে গেছে ।  শ্বাস চলছে খুব ধীরে ধীরে । 
আমরা প্রায় একসাথে ডেকে উঠলাম,  চাম্পু ।  এ  চাম্পু !
 আমি ধাক্কা দিয়ে চললাম কিন্তু তবুও চাম্পুর কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না ।  রাজুকে বললাম,  " একটু জল নিয়ে আয় । "
রাজু একছুটে পুকুর থেকে অঞ্জলিভরে জল নিয়ে এল  তারপর সেই জল চাম্পুর চোখেমুখে ঢেলে দিল ।  সঙ্গে সঙ্গে চাম্পু তড়াক্ করে উঠে বসে পড়ল ।
 হাত দিয়ে চোখ মুছতে লাগল ।   বেচারা চাম্পুর মুখটা কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে ।
গোটা মুখের এখানে ওখানে কালচেলাল রঙের স্পট পড়েছে ।   শাকচুন্নী ঝুমুর  বেজায় টিপ দিয়ে ডুমুর ছুড়ে মেরেছে ।    চাম্পুর মুখটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে । 
চাম্পুরই দোষ !  কেন শুধু শুধু  ওর সাথা পাঙ্গা নিতে গেল ।

    চাম্পু আধখোলা ঘোলাটে চোখে আমাদেরকে দেখতে লাগল । 
আর বলতে লাগল, " আমার কুল কই ?  আমি কুল খাবো !"
 আমি বললাম, "তুই রাগের মাথায় সব কুলগুলোকে  কিনারায় লাগিয়ে দিয়েছিস ।   আমাদের একুল ওকুল  সবকুল গেছে ।  "
চাম্পু ব্যাকুল হয়ে আমাকে কিছু বলতে চাইল কিন্তু বলতে পারল না ।  একদম চুপ মেরে গেল । 
আমরা চাম্পুকে ধরে ধরে বাড়ি নিয়ে এলাম । 

কিছুদিন কেটে গেল ।  পরে চাম্পু একদিন বলল, " ঐ জঙ্গলে আর যাবো না ওখানে  গাদা ভূত প্রেতের বাস ।   ওই কারনেই কেউ ওদিকে যায়না । "
 চাম্পু কার কাছে জেনেছে ওই ডুমুর গাছটাতে নাকি একটা মেয়ে গলায় দড়ি দিয়েছিল ।  মেয়েটার নাম ছিল ঝুমুর ।

    জীবনে আর  কোনোদিন ঐ জঙ্গলে ঢুকবো না প্রতিজ্ঞা করলাম ।
আজও ঐ আপেলকুলের গাছটা এখনও ওখানটাতেই আছে বোধহয় ।
তোমরা যেতে চাইলে   যেতে পারো,  আমি  আর  যাচ্ছি না ।।  

সমাপ্ত

written by:-   Aalim Khan





Copyrighted.com Registered & Protected

No comments:

Post a Comment