বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Wednesday, 18 September 2019

বিজয়বাহারে ব্রহ্মদৈত্য / চাম্পু অ্যাডভেঞ্চারস্' সিরিজের গল্প / ভৌতিক মজার গল্প / কিশোরদের গল্প





  বিজয়বাহারে ব্রহ্মদৈত্য

দুপুরে  আমার ঘুমোতে একদমই ভালো লাগে না ।   কিন্তু মা যখন ধমক দিয়ে ঘুমোতে বলে   তখন বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পড়ি ।   তবে ঘুমবাবাজি কিছুতেই চোখে হাত বুলোয়না   বরং খোঁচা দেয় । গ্রীষ্মের দুপুরে  ঘুমোনোর মতো বিরক্তকর   আর কিছু হতে পারে না ।

  গরমের ছুটিটাকে ইনঞ্জয় না করলে হয় ! কদিন বাদে তো  আবার  স্কুল খুলে যাবে,  তখন কি এই দিনগুলো  আর পাবো !

   তাই সুযোগ বুঝে কেটে পড়লাম ।  আর সোজা চলে এলাম চাম্পুদের বাঁশতলায় ।   এসে দেখি চাম্পুরা আঁটপিল খেলছে ।  দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখতে লাগলাম । তিনবার আঁট করে  যেরকম আশ্চর্য্য কায়দায় পিলটা করল  তাতে চাম্পুর প্রশংসা না করলেই নয় ।
আমি উচ্ছসিত কন্ঠে বলে উঠলাম,  বাঃ চাম্পু !  বাহ্ !  তুই সেরা ভাই ! তুই সেরা !

       চাম্পু এতক্ষণ আমাকে লক্ষ্যই করেনি ।   তবে আমার গলা পেয়ে সটান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, " কিরে বাবু ! আজ দুপুরে তোর মা   তোকে ঘুম পাড়ায়নি ;     নাকি আজ ঘুমপাড়ানি গান শোনায়নি ! "

এই বলে ফ্যাঁকফ্যাঁক করে  তার সেই কুখ্যাত হাসি  হাসতে লাগলো  আর  তার দেখাদেখি বাকিরাও   হাঃ হাঃ   হোঃ হোঃ   খ্যাঁকঃ খ্যাঁকঃ   করে দাঁত কেলাতে শুরু করে দিল ।

     ঠিক এইধরণের গা জ্বলানো কথাবার্তার জন্যই চাম্পুর উপর আমার ভীষণ রাগ হয় ।   মাথা গরম হয়ে যায় ।   মেরে চাম্পুর মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে ।  কিন্তু শুধুমাত্র ইচ্ছেই করে   তবে সেই ইচ্ছাপূরণে মোটেও ইচ্ছে করে না ।  কারণ আমি জানি   যে  চাম্পু আর কুকুরের ল্যাজ   কোনোদিনই সোজা হবার নয় । 

   আমার আঁটপিল খেলতে ভালো লাগে তবে চাম্পুর মতো টিপ আমার নেই  আর তাছাড়া  ওর মতো  দুতিন গজ দূর থেকে সহজেই পিল করে দেওয়ার  ক্ষমতাও  আমার নেই ।  তবে চাম্পুর দেখাদেখি অনেকটা শিখে নিয়েছি ।   আমিও  খেলায় অংশগ্রহণ করলাম ।   মোটামুটি আধঘন্টা কি পৌনে একঘন্টা  খেলা চলেছিল ।  খেলা চলাকালীন চাম্পু  হঠাৎ  একটা চমকপ্রদ প্রস্তাব রাখল আর তাতে
আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারলাম না । 

          বিজয়বাহারের  সব গাছের ফলগুলো নাকি পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।  খাবার লোক নাই ।   নিশ্চয় এই বিজয়বাহারের কথা  চাম্পুর মাথায় এসেছিল  জিৎ কে দেখে ।  কারন জিতের বাবার সাথে  বিজয়বাহারের মালী ভজাইকাকার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব  ।   জিৎ থাকলে সহজেই গেটপাসটা পাওয়া যাবে কিনা ।

 জিৎ কে বলামাত্রই একচান্সে রাজি হয়ে গেল সে ।
আর বলল, " চল্ চল্ !  এখুনি চল্ ভাই !  ভজাইকাকু  দুপুরে বাগানে কাজ করে ।   আমি বললেই ঢুকতে দেবে ! "

  আমি রাজি হয়ে গেলাম ।   সানু রাজি আর রাজুও রাজি ।   দুই ভাইয়ের জিভে  জল এসেছে নিশ্চয়, হাঁ করে দুজনই  চাম্পুকে দেখতে লাগল ।  ওরা যে যাবার জন্য একদম তৈরী   তা আর বুঝতে বাকি রইল না ।  কিন্তু আসল সিদ্ধান্তটা নেবে  চাম্পু ।  চাম্পু  না চাইলে  আমাদের সব পরিকল্পনায় মাটি ।   তবে চাম্পুরও চোখদুটো জ্বলজ্বল করতে দেখলাম ।  বুঝলাম চাম্পুও একদম রেডি ।

 - চাম্পু বলল,  চল্ তাহলে !

    আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম ।  জায়গাটা খুব বেশি দূরে নয় ।  খুব জোর আধমাইল হবে,   তবে তার থেকেও  কম হতে পারে ।  আমরা পাঁচজনা ফল খাবার লোভে   দ্রুত হাঁটতে শুরু করে দিলাম ।

বিজয়বাহারে পৌঁছতে আমাদের বোধহয় পাঁচমিনিটও লাগেনি ।   ওখানে পৌঁছে দেখলাম,   সদর দরজা ভিতরদিক থেকে বন্ধ করা রয়েছে ।   এখন যা করার সবই  জিৎ-কেই করতে হবে । 

চাম্পু বলল,  "নে রে জিৎ   এবার ভজাকে ডাক !"

 আমি প্রতিবাদ করে বললাম, "চাম্পু ! তোর মুখের ভাষাটা একটু ঠিক কর্ ।   অতবড়ো লোকটাকে নাম ধরে ডাকছিস যে   বড়ো !"

এই কথা বলাতে চাম্পু তার মুখখানা কেমন একটা বিতিখিচ্ছড়ি করে বলল,  "তুই বেশি রোল লিস্ না ।   নিজের চরকায় তেল লাগা । "

আমি চুপ করে গেলাম ।   কাকে কি বুঝাচ্ছি ।   ওকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই । 

এদিকে জিৎ চিৎকার করতে লাগল ।
-"ও ভজা কাকু ! "
-"ও ভজা কাকু ! "

   কয়েকবার ডাকার পর ভজাইকাকা এসে দরজা খুলে দিল ।
প্রথমে ঢুকতে দিতে নারাজ হলেও   পরে জিতের অনুগ্রহে ভজাইকাকা মজে গেল ।
আর বলল,   "লিচুগাছে হাত দিবি না ।   নইলে আর কখনো ঢুকতে দেবো না ।   পাঁচজনা পাঁচখানা বেল পেড়ে নিয়ে শিগগির বাড়ি ফিরবি  আর বেশি চেঁচামিচি করিস না  যেন । "

আমরা সবাই মিলে একসাথে বললাম ।   ঠিক আছে ।   তাই হবে ।

    কিন্তু আদৌ কি তাই হবে ।   কারন চাম্পু যেখানে উপস্থিত সেখানে শান্তি শৃঙ্খলা, নিয়মকানুন  কখনও বজায় থাকে কি ?  আমি একটুখানি চিন্তিত হলাম ।
কিন্তু অন্যভাবে বললে  মনে মনে খুব আনন্দ হচ্ছিল  কারন চাম্পুর সান্নিধ্যেই আজ ফল খাবো   অন্তত একটা বেল তো উপভোগ করব ।   খুব মজা হবে ।

    আমরা এক এক করে ভিতরে ঢুকলাম ।
 ভজাইকাকা বলল,  "তোরা যখন আছিস্  তাহলে আমি বাড়ি থেকে একটু ঠুঁ মেরে আসি ।   তোরা আবার ফুলগাছে হাত দিস না । " -  এই বলে ভজাইকাকা চলে গেল ।

    সদর দরজা ভিতর দিকথেকে বন্ধ করে তালা  দিয়ে  যেদিকে বেল গাছগুলো   রয়েছে আমরা সেদিকে যেতে লাগলাম ।   বেশ সুন্দর জায়গা এটা ।  চারিদিকে নানাধরনের ফুলের বাগান ।  নানারকমের ফলের গাছ মাথা চাড়া দিয়ে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু,   আর   বেলগাছগুলো  রয়েছে দক্ষিণদিকে সারিবদ্ধভাবে ।  মাঝখানে একটা পুকুর  আর পুকুরের চারদিকে  বাঁধানো পাকা ঘাট ।  পুকুরের চতুর্দিকে রয়েছে   অপূর্ব সুন্দর বহু পুরোনো শিব মন্দির ।   তবে কেবলমাত্র উত্তরের মন্দিরটাতেই  নিয়মিত পূজাপাঠ হয় ।   আর বাকি মন্দিরগুলোতে বিশেষ বিশেষ পার্বনে পূজো হয়ে থাকে ।   প্রতিবছর শিবরাত্রীর সময় এখানে মস্তবড়ো এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।  রাজা বিজয়ানন্দের বংশধরেরা এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন ।  আমরা প্রতিবছর এইদিনে এখানে আসি আর খুব ইঞ্জয় করি ।

    রাস্তার দুদিক ইঁটের সারি দিয়ে বাঁধানো ।  সেই রাস্তা দিয়ে ধীর কদমে এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে এগিয়ে চললাম ।  প্রকান্ড আমগাছগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাতে আর আম নেই,  সব আম পেড়ে নেওয়া হয়েছে ।  তবে কাঁঠালগাছে ফল পাকতে লেগেছে,  কাঁঠালগুলো যেন  গাছে আর ঝুলে থাকতে চাই না ।  এই বুঝি মাটিতে ধড়াস্ করে পড়ল বলে ! লিচু গাছগুলো  আবার মশারির জাল দিয়ে ঘেরা ।  সেই জালের ভিতর থেকে গোলাপি বর্ণের লিচুগুলো যেন কুকি মেরে উঁকি দিচ্ছে ।   আরও যে কত রকমের ফলগাছ রয়েছে   তার ঠিক নাই ।   কলাগাছ,  লেবু গাছ,  পেয়ারা গাছ,  কাজুবাদামের গাছ   আরও কত কি ।

তবে সেগুলো রয়েছে ভিতরের বাগানটাতে ।  আর সেখানে যাওয়ার জো নেই,  পৌঁছতে হলে অতিকায় প্রাচীর ভেদ করতে হয় ।  আর এই প্রাচীর টপকানো  আমাদের  সাধ্য নয় , তবে শুনেছি চাম্পু নাকি একবার টপকে ছিল । 

  আহা ! এ যেন কোনো বাগান নয় ? এ যেন সাক্ষাৎ স্বর্গ ।  বর্ধমানে এরকম জায়গা   আর কটায় বা আছে ।   অপূর্ব বাগান ! অপূর্ব ফলের বাহার ।   অপূর্ব বিজয়বাহার !!

  আমার অবস্থা কাকেই বা বোঝায় ! আর তাছাড়া  বাকিদেরও আমার মতোই হাল ।   রাজু সানু দুইভায়ের জিভগুলো আধেকটা বেরিয়ে এসে টস্ টস্ করে জল পড়ছে ।  আর জিৎ খালি লিচুগাছের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে ।  তবে জানি লিচু খাওয়ার কোনো উপায় নেই ।  কারণ চারটে লিচুগাছেই নিচের দিক থেকে জাল দিয়ে ঘেরা ।

কিন্তু চাম্পুর নজর পার্টিকুলারলি কোনদিকে তা বোঝার উপায় নেই ।  ওর চোখ একবার এদিকে তো   একবার ওদিকে ।   ও কি ভাবছে, কে জানে ?  কোনো কুমতলব মাথায় এসেছে কি না তাও বুঝতে পারছি না ।

 হঠাৎ চাম্পু আঙুল দেখিয়ে বলল, "ঐ কাঁঠালটার সাইজখানা দ্যাখ !"

 আমরা সবাই কাঁঠালগাছটার দিকে তাকালাম ।   দেখলাম একটা বিশাল আকারের কাঁঠাল পাঁচ-ছ হাত উঁচুতে ঝুলছে ।  তার আশেপাশে অনেকগুলো কাঁঠাল ঝুলে রয়েছে তবে কোনোটাই অত বড়ো সাইজের নয় ।   কাঁঠালটা দেখে আমার ভীষণ লোভ হল ।  তাহলে চাম্পুর কি হচ্ছে তা কি আর বলতে হবে ।

আবার চাম্পু বলে উঠল,  "চল্ কাঁঠালটা পেড়ে সবাই মিলে ভাগ করে খেয়ে নিই !"

এই কথা শোনামাত্র জিৎ অতিশীঘ্র প্রতিবাদ করে বলল,  "খেপেছিস নাকি ! ভজাইকাকু জানতে পারলে আর আস্ত রাখবে না ! বেশি পাঁইতাড়া না মেরে চল্ বেল পাড়ি গে । "
 -চাম্পু বলল, "ভজা দেখলে তবে না !"
 জিৎ ভেংচিয়ে বলল,  "কাকুর সব জানাগোণা আছে ।  কোন গাছে কটা কাঁঠাল সব হিসেব করা আছে বুঝলি,  ঠিক টের পাবে ।  তুই আবার সব চাইতে বড়ো কাঁঠালটাতে নজর দিয়েছিস । "

 চাম্পু বলল,  "তোর মাথা ! গোণা আছে না ছাই !"

জিৎ আরো জোর গলায় বলল,   "ভজাইকাকু এমনিতে খুব ভালো কিন্তু রেগে গেলে কেমন ভয়ঙ্কর হয়ে যায় তা তো জানিস ।   কেন তোর মনে নেই সেই একবার যেদিন কাজুবাদাম পাড়তে এসেছিলি কেমন তাড়া করেছিল ? ভুলে গেছিস !
 ধরতে পেলে একেবারে তুলে কাছড়ে দিত । "

  চাম্পুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম  ওর মুখখানা শুকিয়ে একদম শুকনো কাজুবাদামের মতো হয়ে গেছে । 

চাম্পু একটু বিরক্ত হয়ে বলল, "আর আমি ছেড়ে দিতাম নাকি !  আমার গায়ে যদি হাত লাগাত না, তবে ব্যাটা ভজাকে মজাটা দেখিয়ে দিতাম । "

    কিছুক্ষণ আমরা সবাই চুপ করে রইলাম ।  কেউ টুঁ শব্দটাও করলো না ।   তারপর হঠাৎ চাম্পু বেলগাছের দিকে এগুতে লাগল ।   বুঝলাম চাম্পু মত পাল্টেছে ।   যাক্ গে ভালোই হয়েছে ।  আমরাও চাম্পুর পিছে পিছে চলতে লাগলাম ।
বেলতলায় এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জটলা করতে লাগলাম ।   গাছের গোঁড়ায় সবাই নিজের নিজের জুতোগুলো খুলে রাখলাম ।  জটলা বেঁধে গেল  গাছে কে চাপবে  তা নিয়ে ।   এদিকে চাম্পু যে মুখভার করে রয়েছে ।

 চাম্পুকে বললাম,  "কিরে বেল পাড়বি না নাকি ? "

 চাম্পু কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ গোমড়া করে রইল ।  স্পষ্ট বুঝলাম ব্যাটা গাছে চড়তে নারাজ ।    সানু আর রাজুকে কোনোদিনই গাছে চাপতে দেখিনি ।  আর জানলেও ভীতুগুলো বেলগাছে চাপবে বলেও মনে হয় না ।   ওদের ধারণা বেলগাছে  নাকি ব্রহ্মদৈত্যের বাস ।   তাছাড়া আমিও ভালো করে গাছে চড়তে পারি না ।  কাজেই জিতের দিকে তাকালাম  কিন্তু ওর বিকৃত মুখাভঙ্গিতে নেতিবাচক উত্তরটাই পেলাম ।

 তাহলে বেল পাড়বে কে ? 

   আমরা চাম্পুকে মানাতে  লাগলাম কিন্তু সুফলের বদলে কুফলটাই পেলাম ।   ব্যাটা নিজ সিদ্ধান্তে অনড় ।  কিছুতেই রাজি হয় না ।  তাহলে কি আজ খালি হাতে ফিরব ?
চাম্পুর সাথে কোনো জায়গায় গিয়ে শান্তি নাই ।   ব্যাটা নাটকবাজীর যম !

আমি জিৎকে বললাম,  "তুই তো ভালোই গাছে চড়তে জানিস, তুই গাছে ওঠ্ না !"
তৎক্ষণাৎ জিৎ মুন্ডু হিলিয়ে নাকচ করে বলল,  "আমাদের বেলগাছে চড়তে নেই ।   আমরা বেলগাছে পূজো দিই কিনা ।   চরম ক্ষতি হবে । "

  " তোর বাপের মাথা হবে ।   তোর দাদুর __ এই হবে ; __ ওই হবে "  বলে অসভ্য নোংরা ভাষায় যা তাই বলে গেল চাম্পু ।   এতে জিৎ ভীষণভাবে রেগে গেল ।  প্রায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েই গেছিল কিন্তু আমি রাজু আর সানু  তিনজনা মিলে কোনোরকম এই মহাযুদ্ধের ভয়াবহ প্রলয় হতে  তৃতীয় বিশ্বকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হলাম ।  কিন্তু জিতের বুকের ভিতরটা তখনও পর্যন্ত জীবন্ত আগ্নেয়গিরির ফুটন্ত লাভার মতো টগবগ টগবগ করে ফুটতে থাকল ।

কিন্তু চাম্পুকে দেখে বিস্মৃত হলাম  কারন,  ওর মুখমন্ডলে না আছে আতঙ্কের করুণ ছাপ , না আছে রাগের গজগজ আস্ফালন , না আছে লজ্জার বিন্দুমাত্র লেশ ।  মানে ব্যাটা একদম শান্তশিষ্ট ভদ্রছেলের মূর্তি ধারণ করে  বড়ো বড়ো ঘাসের ওপর বসে রইল ।

  আবার কিছুক্ষণের জন্য শব্দবিরাম ।  কারো মুখে কোনো কথা নেই ।  সকলের মুখে কুলুপ আঁটা ।  জানি চাম্পুকে তেঁলিয়ে কোনো লাভ হবে না তাই জিৎকে অনুগ্রহ করতে লাগলাম  আর
বললাম, " ভাই জিৎ তুই একটা কাজ কর,  ঠাকুরের নাম নিয়ে  তিনবার প্রণাম করে  দিব্যি উঠে পর ! দেখবি কিচ্ছু হবে না ।  ঠাকুর রাগ করবেন না ! "

 প্রথমদিকে জিৎ কুঁইকাঁই করলেও পরে রাজি হয়ে গেল ।  রাজু সানুর শুকনো মুখ আবার রসালো হয়ে এলো ।  জিৎ  প্রণাম টনাম করে নিয়ে বেলগাছে চড়তে লাগল ।   যে বেলগাছটাতে জিৎ চড়তে লাগল সেটা বেশ বড়োসড়ো ।   গাছে চড়তে প্রথম প্রথম জিৎ হিমসিম খাচ্চিল কিন্তু একটু চেষ্টা করে কিছুটা উঠে পড়ল ।

     কিন্তু গাছে ওঠা মাত্র জিতের হাবভাবে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিল ।  গাছের বেশি উপরে উঠেনি সে ।  যেখান পর্যন্ত উঠেছিল সেখানকার মোটা ডালটাকে আঁকড়ে ধরে বসে পড়ল এবং পাগলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে কিসব বলতে শুরু করে দিল ।  জিতের এইরকম ব্যবহারে আমার ভীষণ ভয় করতে লাগল ।  দেখলাম সানু আর রাজু ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে ।  কিন্তু চাম্পুর মধ্যে কিঞ্চিৎ পরিমাণেও ভয়ডরের কোনো লক্ষণ দেখতে পেলাম না ।

বরং মুখ বেঁকিয়ে চাম্পু বলে ফেলল, "বেশি চালাকি মারিস না জিৎ ! আক্টিং করা বন্ধ কর ।  "

এই কথার বলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা বিকট চিৎকার করে জিৎ ধড়াস্ করে গাছ থেকে মাটিতে পড়ে গেল । বোধহয় মাটিতে পড়েই জিৎ বেহোঁশ হয়ে গেছিল কারণ  তারপর  আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না ।  কিছুক্ষণ ওভাবেই মাটিতে শুয়ে রইল কিন্তু আমাদের কারো মধ্যেই সাহস হল না ওর কাছে যাওয়ার ।

কিন্তু চাম্পুর তখনও বিশ্বাস জিৎ নাটক করছে ।
 আমরা স্পষ্ট দেখলাম,  জিতের মুখ থেকে গলগল করে ফেনা বেরোতে আর হেঁড়ে গলায় গোঁ গোঁ করতেও শুনলাম ।  ভয়ে আমার গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে গেল ।  পাগুলো থরথর কাঁপতে শুরু করে দিল ।  মুখে কথা বলতে পারলাম না ।   হৃদপিন্ডটা ধড়াক্ ধড়াক্ করতে শুরু করে দিল ।  কি করব কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না ।

    হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখলাম চাম্পু দৌড়চ্ছে সদর দরজার দিকে ।   আর তার পিছন পিছন দুভাই হাত ধরে দৌড়চ্ছে ।   আগেপিছে কিছু ভাববার আগেই আমার পাদুটো আপনাআপনি ওদের দিকে দৌড়তে লাগল ।

জিৎ এখন ব্রহ্মদৈত্যের কবজে ।  জিৎ এখন আর জিৎ নয়, ও এখন ভূতের কবলে ।    কিন্তু সদর দরজার কাছে পৌঁছে দেখলাম চাম্পু চিৎকার করে গলা ফেঁড়ে ফেঁড়ে ভজাইকাকুকে ডাকছে ।

-ভজাকাকা বাঁচাও !
 বাঁচাও ভজাকাকা !

 আর সানু রাজু দরজায় ধড়াধড় আঘাত করেই চলেছে ।
এই বুঝি দরজাটা গুঁড়িয়ে ফেলল বলে ।  আমিও স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারলাম না,  চাম্পুর জামাটা ধড়ে টানাটানি করতে লাগলাম ।   হঠাৎ বেলতলা থেকে আবার হেঁড়ে গলায় সেই বিকট চিৎকার শুনতে পেলাম ।  এটা জিতের গলা হতেই পারে না ।  সানু রাজু ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিল ।  কিন্তু ভজাইকাকুর কোনো পাত্তা নেই ।  আর দরজার চাবি তো জিতের পকেটে ।

 তাহলে এবার কি হবে ?  আমরা কি করে বাইরে বেরোবো ।
আজ নির্ঘাত আমাদের প্রাণগুলো যাবে,  ব্রহ্মদৈত্য এক এক করে দিব্যি আমাদের ঘাড় মটকাবে ।  ব্রহ্মদৈত্যের হাত থেকে কেউই নিস্তার পাবো না ।  ধড়াস্ করে একটা শব্দ হওয়া মাত্র সম্বিত ফিরল ।
দেখলাম চাম্পু মাটিতে চিৎপটাং হয়ে পড়ে রয়েছে আর মুখে উঃ আহঃ করছে ।  চাম্পু প্রাচীর টপকাতে চেয়েছিল ।   কিন্তু এই প্রাচীর কোনো সাধারণ প্রাচীর নয় ।  রাজাদের আমলে তৈরী এই প্রাচীরের উচ্চতা দুইতিন মানুষের সমান ।
প্রাচীর ভেদ করা প্রায় অসম্ভব  অর্থাৎ বাইরে বেরোনো কোনো রাস্তা নেই ।  আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে ভজাইকাকুকে ডাকতে লাগলাম ।  কিন্তু কোনো ফল হল না ।

    হঠাৎ আবার সেই বিকট গোঁ গোঁ চিৎকারটা শুনলাম কিন্তু এইবার আওয়াজটা খুব কাছ থেকে মনে হল ।  রাজু ভাঙা ভাঙা গলায় বলল, " ঐ দ্যাখ ভাই,  জিৎ এদিকে আসছে । 
আমরা সকলেই দৃষ্টিনিক্ষেপ করলাম ।   পরিস্কারভাবে দেখলাম জিৎ অদ্ভুদভাবে একটা পা মাটিতে টেনে হেঁচড়ে  হেঁটে হেঁটে  আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে ।  আকাশের শুন্যে মুখ করে জিৎ কি দেখছে কে জানে  আর মুখে সেই ভয়ঙ্কর গোঁ... গোঁ... শব্দ ।   ওর হাত দুটো পিছনদিকে আঁকাবাঁকা গাছের শাখার মতো বেঁকে গেছে ।   খুব ধীরে ধীরে পা ফেলে আমাদের কাছে আসছে ।  আমাদের ধড়তে আসছে ।  ঘাড় মটকাতে আসছে ।
 আজ আমাদের শেষ দিন ।

    এই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন আগেও হয়েছি তবে কেন জানিনা এইবার নিজেকে সামলাতে পারছি না ।  মনে হচ্ছে এই বুঝি অজ্ঞান হয়ে গেলাম ।  মাথাটা বোঁ বোঁ করে ঘুরতে লাগল ।  পাগুলো যেন অবশ হয়ে আসছে ।  প্রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিলাম কিন্তু চাম্পু আমাকে সামলে নিল ।
 আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে বলল, " চল্ শিব মন্দিরে ঢুকে পড়ি ।  তাহলে ও আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না ।  "

আমরা চারজনা প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়তে লাগলাম ।   এবং নিমেষের মধ্যেই উত্তরের শিবমন্দিরে পৌঁছে গেলাম ।  মন্দিরের দরজা খোলায় ছিল  তাই সোজা মন্দিরে ঢুকে পড়লাম ।
 মন্দিরে ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ।  আমার বুকের ধকধকানি  তাতেও কমলো না ।
আমার হাত পা  গোটা গা  ভিজে স্যাঁতস্যাতে হয়ে গেছে ।  দেহের প্রত্যেকটা লোমকূপ থেকে রাশি রাশি ঘাম বন্যাকারে বেরিয়ে আসছে ।   দিব্যি অনুভব করছি   গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ।   আমি থর থর করে কাঁপতে লাগলাম ।  সানু রাজুর অবস্থা বোধহয় আমার থেকে সঙ্গীন ।  ওদের লক্ষ্য করার মতো অবস্থায় আমি নেই ঠিকই কিন্তু ওদের ভাঙা কণ্ঠের গোঙানো শব্দ  আমার কানের লতি ভেদ করে ভয়ঙ্কর ক্ষতি করছে  তা ঠাহর করতে পারছিলাম ।

   ছোট্ট বর্গাকার আবদ্ধ মন্দিরের দেওয়ালে ধাক্কা মেরে  এই তীক্ষ্ণ কানফাটা কটু শব্দ   শুধু কানেরই ক্ষতি নয়  এমনকি চোখের জ্যোতি আর গুরুমস্তিষ্ককে লঘু করে মতিগতির  চরম ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট ।  মহাপ্রলয় সৃষ্টিকারী এই মেগা ডেসিবলধারী শব্দ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাতদুটোকে রক্ষাকবচ করে দুই কানে দুহাত চেপে ধরে কিছুক্ষণ মন্দিরের এককোণে বসে রইলাম ।

   চাম্পুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে চুপটি মেরে বসে আছে ঠিক আমার বিপরীত কোণে ।  আর মন্দিরের মাঝখানটাতে রয়েছে পাথরে শিবলিঙ্গ আর তারপাশেই রাখা আছে ছোট একটা স্টিলের ঘটি বেলপাতায় ঢাকা ।  মন্দিরের কাঠের দরজার একটা পাল্লা লাগাতে পারলাম ।   আর অন্য পাল্লাটা কিছুতেই ঠেসাতে পারলাম না বিস্তর মরচে ধরেছে ।  আর তাছাড়া গায়ের সমস্ত কার্য শক্তি বল  একেবারে শূন্য ।

দেখলাম,   চাম্পু অদ্ভুদভাবে চোখ ফেঁড়ে আমাকে দেখছে ।  চাম্পুর বিশ্রী মুখের ছিরি এতটাই বিগড়েছে যে আমি নিশ্চিত এই কুশ্রী মুখ দেখলে ভূত দৈত্যরাও শ্রীজ্ঞান হারাবে ।   সুতরাং সটান আমি মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম ।  ঐ মুখ দেখে বুকের ধকাধকানিটা আর বাড়াতে চাই না ।  প্রায় দুআড়াই মিনিট ধরে সানু রাজুর শব্দবাজী সহ্য করতে হল ।  তারপর তারা চুপ মেরে গেল আর দেওয়াল ঘেঁষে জড়াজড়ি করে বসে পড়ল ।  ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল ।   কিন্তু চাম্পুর মুখে কোনো কথা নেই । 

কয়েক মুহুর্ত বিজয়বাহার একেবারে শান্ত হয়ে ।  কোথাও কোনো শব্দ নেই ।   পাখিদের কিচিরমিচির নেই ,   কাকের মুখে কা নেই,  রা নেই ।
গাছের সমস্ত পাখি যেন উধাও হয়ে গেছে ।  এ যেন কোনো ভয়ঙ্কর বিপদের সংকেত ।
আমরা চারজনা কোনোরকম কথা না বলে একে অপরের মুখপানে চেয়ে রয়েছি ঠিক এমন সময় শুনলাম পিলে চমকানো হাড় কাঁপানো সেই গোঁ গোঁ আওয়াজ ।
 খোলা পাল্লার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারতেই দেখলাম   একেবারে মন্দিরের চৌহদ্দিতে দাঁড়িয়ে জিৎ গোঁ গোঁ করছে ।   মুখ দিয়ে ফেনা বেরিয়েই যাচ্ছে ।  চোখের মনিগুলো কপালে উঠেছে ।  আমি আর ওর দিকে তাকাতে পারলাম না ।
চাম্পু সানু রাজু ওরা আমাকে দেখতে লাগল ।  বাইরে তাকানোর সাহস দেখাতে পারলো না ।

দিনে দুপুরে কেন যে চাম্পুর সাথে এখানে মরতে এলাম কে জানে !  বেলগাছের ভূত কি দৈত্য বলতে পারব না,  তবে জিতের এহেন অবস্থা দেখে মনে ভারী কষ্ট হতে লাগল ।  আমারই দোষ !  কেন যে ওকে গাছে চড়াতে জেদ করলাম !

এবার কি হবে ? দৈত্য এখন জিতের গায়ে ।   প্রথমে আমাদের মারবে  তারপর জিৎকেও হয়ত মেরে ফেলবে ।  শঙ্কা আশঙ্কায় আমরা সকলেই জর্জরিত মর্মাহত ।  বেঁচে বাড়ি ফিরব কিনা জানিনা ।  জিৎ ওখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোঁ গোঁ করেই চলল । 
বোধহয় আমাদের বেড়োনোর অপেক্ষা করছে ।  অনেকটা সময় কেটে গেল ।  ভজাইকাকার টিঁকিটুকুরও দেখা মেলে না ।  ভজাইকাকার উপর খুব রাগ হল ।  মনে মনে দুচারখানা খিস্তিও দিতে ছাড়লাম না ।

    কি করা যায় ? কি উপায়ে ব্রহ্মদৈত্যের হাত থেকে রেহায় পাওয়া যায় সেসব ভাবতে লাগলাম ।
ঠিক তখনই ব্রহ্মদৈত্য ভয়ঙ্কর হেঁড়ে গলায় বলল,
" বেরিয়ে আয় চাম্পু ! আমি তোর হাড় ভাঙবো ! তোর ঘাড় মটকাবো ! হাঃ হাঃ হাঃ ! "

এ কি ব্রহ্মদৈত্য যে চাম্পুর নাম ধরে ডাকে ?  আশ্চর্য ব্যাপার !  তার মানে কি  ব্রহ্মদৈত্য চাম্পুকে চেনে ?  কিন্তু কি করে চিনল ?  নিশ্চয় চাম্পুর সাথে ব্রহ্মদৈত্যের কোনো ক্ষার আছে ।   হয়ত কোনো পুরনো বোঝাপড়া বাকি রয়েছে ।   হয়ত কোনো এক কালে চাম্পু নিশ্চয় ঐ ব্রহ্মদৈত্যকে কাঠি করেছিল আর তাই আজ বাগে পেয়ে ব্রহ্মদৈত্য চাম্পুকে বাঁশ দিতে এসেছে ।
 আমরা অবাক হয়ে একভাবে চাম্পুর মুখের তাকিয়ে থাকলাম ।

    আবার ব্রহ্মদৈত্য হুঙ্কার দিয়ে ডাকল, " বেরিয়ে চাম্পু ! বেরিয়ে আয় বলছি,  বেরিয়ে আয় হারামজাদা !  সেদিন তুই আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ঐ ছাতিমগাছের গোড়ায় মুতে গেছিলি  মনে আছে । তোর কুকর্মের জন্য আজ আমি ঘরছাড়া !  ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধে  গাছে টেকা দায় হয়ে উঠল !  কি খাস রে ব্যাটা !  লাফ মেরে পা ভেঙ্গেছি,   বাঁ পা টা অবশ হয়ে গেছে  !
 পড়ে গিয়ে হাতদুটো বেঁকে গেছে আজও সোজা হয়নি রে হারামজাদা !  ছাতিম গাছে আর চাপতে পারছি না ।  কোনোরকম হাড়ভাঙা কষ্টে টেনে হেঁচড়ে এই বেলগাছটায় চেপে বসলাম । 
মাঝে মাঝে ঘাড়ের ব্যথায় শিউড়ে উঠি ।  আহঃ এখনো ব্যথা করছে ।  আজ তোকে বাগে পেয়েচি ।   আজ তোর পা ভাঙবো, হাত মচকাবো, ঘাড় মটকাবো ।  আজ তোকে ঠেলা বোঝাবো ।  "


     চাম্পুর অবস্থাটা কি ? তা দেখার জন্য যেই চাম্পুর দিকে তাকিয়েছি  ঠিক তখনই চাম্পু তড়াক্ উঠে দাঁড়াল ।   তারপর এদিক ওদিক দিকবিদিক পাগলের মতো মুন্ডটাকে দোলাতে শুরু করে দিল
 আর ফিসফিস করে মুখে কিসব বলতে লাগল ।
 এই মরেছে চাম্পুর আবার কি হল ?  ব্রহ্মদৈত্যের সম্মোহনে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল নাকি ?  তাহলে কি চাম্পু আপনাআপনিই ব্রহ্মদৈত্যের হাতে ধরা দেবে ?  কিন্তু ব্রহ্মদৈত্য যে  ঘাড় মটকাবে বলছে ?
চাম্পুকে মারার পর হয়ত আমাদেরও মেরে ফেলবে । 
না না আমি ভূতের হাতে মরতে চাই না ।
সানু রাজুও উঠে দাঁড়িয়ে "না চাম্পু যাস না,  যাস না'... বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল ।
 দ্রুত চাম্পুর হাতটা ধরে বললাম, " না চাম্পু তুই যাস না ।  ও  তোকে মেরে ফেলবে !  তুই যাস না,  তুই যাস না । "

 কিন্তু চাম্পু কারো কথায় কান দেবার পাত্র নয় !
পাগলের প্রলাপ বকতে লাগল চাম্পু,   অসভ্য ভাষায় ব্রহ্মদৈত্যকে  নোংরা নোংরা খিস্তি দিতে লাগল ।  তারপর সে হঠাৎ বাইরে বেরোতে চাইল  কিন্তু আমরা তিনজনা মিলে চাম্পুকে কোনোরকম আগলে রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম ।

কিন্তু আশ্চর্য্য,  আমরা তিনজনা মিলেও চাম্পুকে ধরে রাখতে পারলাম না ।  চাম্পু আমাদের তিনজনাকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিল ।  আমরা তিনজনা তিনদিকে ছিটকে পড়লাম ।
আর  ওদিকে ব্রহ্মদৈত্য "আয় বেরিয়ে আয়"... "আয় বেরিয়ে আয়"...  বলে হুঙ্কার দিতেই থাকল ।

 খাঁচায় বন্ধ খোঁচাহত বাঘের মতো চাম্পু মন্দিরের এপাশ ওপাশ করতে লাগল ।  জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল ।  চাম্পু কেন এমনধারা করছে তা বুঝতে পারলাম না  । 
ও কি জানে না   যে ভূতের সাথে খালি হাতে লড়াই করা যায় না ।   অন্তত দুচারটে মন্ত্র জানতে হয় !  তেলপড়া  জলপড়া লাগে ।
 চাম্পুকে এই ব্যাপারে অবহিত করার চেষ্টা করতে লাগলাম ।  কিন্তু চাম্পু আমার কথায় কান দিল না ।
ক্ষিপ্ত অশান্ত চাম্পু ঠাকুরের ঘটি টা হাতে তুলে নিল ।   তারপর গায়ের জোরে  টিপ করে ব্রহ্মদৈত্যের দিকে ছুড়ে মাড়ল । 

  আশ্চর্য্য টিপ চাম্পুর !  ঘটি সোজা গিয়ে লাগল একেবারে জিতের কপালে মানে, ব্রহ্মদৈত্যের কপালে ।  আর তারপর একটা বিকট ভয়াবহ চিৎকার করে ব্রহ্মদৈত্য মাটিতে চিৎপটাং ।   এমন ভয়ঙ্কর চিৎকার আমি কোনোদিন শুনিনি ।  মেঘের গর্জনের থেকেও দশগুন বেশি তীব্র হবে হয়ত ।  এতটাই গুরুগম্ভীর যে মন্দিরটা সুদ্ধ কেঁপে উঠল ।


    মুহুর্তের মধ্যে আবার সব শান্ত হয়ে গেল ।   আমার দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রাণপাখী আবার ফিরে এল ।  আবার পাখিদের কিচিরমিচির শুরু হয়ে গেল ।

দেখলাম জিতের জ্ঞান ফিরেছে ।   কাওকে দেখতে না পেয়ে  জিৎ  'ভজাকাকু ভজাকাকু'  বলে চেঁচাতে লাগল ।  আমরা সবাই মন্দির থেকে বেরিয়ে এলাম ।  জিতের কাছে গিয়ে দেখলাম ওর কপাল ফুলে আলু হয়ে গেছে ।  সেই আলুতে হাত বোলাতে বোলাতে   আহ্ আহ্ করতে লাগল জিৎ ।   জিতের কিছুই মনে নেই ।  কি করে সে এখানটাতে এল  আর  কিভাবে  তার কপালে আলু হল   তা কিছুই নাকি সে মনে করতে পারছে না । 

এসব কিকরে হল তা জানতে চাইল জিৎ ।  আমি ওকে যেই বলতে যাবো  অমনি চাম্পু বলল, " বাবু  তুই থাম,  আমি বলছি । "
তারপর চাম্পু বলতে লাগল,
  " ও কিছু না ।  গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তুই অজ্ঞান হয়ে গেলি ।  আমরা তুলে নিয়ে এই মন্দিরে নিয়ে এলাম ।   তারপর তোর জন্য ভোলেবাবার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম ।   ভোলেবাবা তোকে ঠিক করে দিল । "

এই কথাগুলো বলার পর  চাম্পু জোরে জোরে বলতে লাগল,
 " জয় ভোলেনাথ ! বাম্ বাম্ ভোলে ।
প্রভু কি জয় হো !  প্রভু কি জয় হো !! "

Written by:- Aalim Khan









Copyrighted.com Registered & Protected

No comments:

Post a Comment