দুপুরে আমার ঘুমোতে একদমই ভালো লাগে না । কিন্তু মা যখন ধমক দিয়ে ঘুমোতে বলে তখন বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পড়ি । তবে ঘুমবাবাজি কিছুতেই চোখে হাত বুলোয়না বরং খোঁচা দেয় । গ্রীষ্মের দুপুরে ঘুমোনোর মতো বিরক্তকর আর কিছু হতে পারে না ।
গরমের ছুটিটাকে ইনঞ্জয় না করলে হয় ! কদিন বাদে তো আবার স্কুল খুলে যাবে, তখন কি এই দিনগুলো আর পাবো !
তাই সুযোগ বুঝে কেটে পড়লাম । আর সোজা চলে এলাম চাম্পুদের বাঁশতলায় । এসে দেখি চাম্পুরা আঁটপিল খেলছে । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখতে লাগলাম । তিনবার আঁট করে যেরকম আশ্চর্য্য কায়দায় পিলটা করল তাতে চাম্পুর প্রশংসা না করলেই নয় ।
আমি উচ্ছসিত কন্ঠে বলে উঠলাম, বাঃ চাম্পু ! বাহ্ ! তুই সেরা ভাই ! তুই সেরা !
চাম্পু এতক্ষণ আমাকে লক্ষ্যই করেনি । তবে আমার গলা পেয়ে সটান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, " কিরে বাবু ! আজ দুপুরে তোর মা তোকে ঘুম পাড়ায়নি ; নাকি আজ ঘুমপাড়ানি গান শোনায়নি ! "
এই বলে ফ্যাঁকফ্যাঁক করে তার সেই কুখ্যাত হাসি হাসতে লাগলো আর তার দেখাদেখি বাকিরাও হাঃ হাঃ হোঃ হোঃ খ্যাঁকঃ খ্যাঁকঃ করে দাঁত কেলাতে শুরু করে দিল ।
ঠিক এইধরণের গা জ্বলানো কথাবার্তার জন্যই চাম্পুর উপর আমার ভীষণ রাগ হয় । মাথা গরম হয়ে যায় । মেরে চাম্পুর মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে । কিন্তু শুধুমাত্র ইচ্ছেই করে তবে সেই ইচ্ছাপূরণে মোটেও ইচ্ছে করে না । কারণ আমি জানি যে চাম্পু আর কুকুরের ল্যাজ কোনোদিনই সোজা হবার নয় ।
আমার আঁটপিল খেলতে ভালো লাগে তবে চাম্পুর মতো টিপ আমার নেই আর তাছাড়া ওর মতো দুতিন গজ দূর থেকে সহজেই পিল করে দেওয়ার ক্ষমতাও আমার নেই । তবে চাম্পুর দেখাদেখি অনেকটা শিখে নিয়েছি । আমিও খেলায় অংশগ্রহণ করলাম । মোটামুটি আধঘন্টা কি পৌনে একঘন্টা খেলা চলেছিল । খেলা চলাকালীন চাম্পু হঠাৎ একটা চমকপ্রদ প্রস্তাব রাখল আর তাতে
আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারলাম না ।
বিজয়বাহারের সব গাছের ফলগুলো নাকি পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । খাবার লোক নাই । নিশ্চয় এই বিজয়বাহারের কথা চাম্পুর মাথায় এসেছিল জিৎ কে দেখে । কারন জিতের বাবার সাথে বিজয়বাহারের মালী ভজাইকাকার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব । জিৎ থাকলে সহজেই গেটপাসটা পাওয়া যাবে কিনা ।
জিৎ কে বলামাত্রই একচান্সে রাজি হয়ে গেল সে ।
আর বলল, " চল্ চল্ ! এখুনি চল্ ভাই ! ভজাইকাকু দুপুরে বাগানে কাজ করে । আমি বললেই ঢুকতে দেবে ! "
আমি রাজি হয়ে গেলাম । সানু রাজি আর রাজুও রাজি । দুই ভাইয়ের জিভে জল এসেছে নিশ্চয়, হাঁ করে দুজনই চাম্পুকে দেখতে লাগল । ওরা যে যাবার জন্য একদম তৈরী তা আর বুঝতে বাকি রইল না । কিন্তু আসল সিদ্ধান্তটা নেবে চাম্পু । চাম্পু না চাইলে আমাদের সব পরিকল্পনায় মাটি । তবে চাম্পুরও চোখদুটো জ্বলজ্বল করতে দেখলাম । বুঝলাম চাম্পুও একদম রেডি ।
- চাম্পু বলল, চল্ তাহলে !
আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম । জায়গাটা খুব বেশি দূরে নয় । খুব জোর আধমাইল হবে, তবে তার থেকেও কম হতে পারে । আমরা পাঁচজনা ফল খাবার লোভে দ্রুত হাঁটতে শুরু করে দিলাম ।
বিজয়বাহারে পৌঁছতে আমাদের বোধহয় পাঁচমিনিটও লাগেনি । ওখানে পৌঁছে দেখলাম, সদর দরজা ভিতরদিক থেকে বন্ধ করা রয়েছে । এখন যা করার সবই জিৎ-কেই করতে হবে ।
চাম্পু বলল, "নে রে জিৎ এবার ভজাকে ডাক !"
আমি প্রতিবাদ করে বললাম, "চাম্পু ! তোর মুখের ভাষাটা একটু ঠিক কর্ । অতবড়ো লোকটাকে নাম ধরে ডাকছিস যে বড়ো !"
এই কথা বলাতে চাম্পু তার মুখখানা কেমন একটা বিতিখিচ্ছড়ি করে বলল, "তুই বেশি রোল লিস্ না । নিজের চরকায় তেল লাগা । "
আমি চুপ করে গেলাম । কাকে কি বুঝাচ্ছি । ওকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই ।
এদিকে জিৎ চিৎকার করতে লাগল ।
-"ও ভজা কাকু ! "
-"ও ভজা কাকু ! "
কয়েকবার ডাকার পর ভজাইকাকা এসে দরজা খুলে দিল ।
প্রথমে ঢুকতে দিতে নারাজ হলেও পরে জিতের অনুগ্রহে ভজাইকাকা মজে গেল ।
আর বলল, "লিচুগাছে হাত দিবি না । নইলে আর কখনো ঢুকতে দেবো না । পাঁচজনা পাঁচখানা বেল পেড়ে নিয়ে শিগগির বাড়ি ফিরবি আর বেশি চেঁচামিচি করিস না যেন । "
আমরা সবাই মিলে একসাথে বললাম । ঠিক আছে । তাই হবে ।
কিন্তু আদৌ কি তাই হবে । কারন চাম্পু যেখানে উপস্থিত সেখানে শান্তি শৃঙ্খলা, নিয়মকানুন কখনও বজায় থাকে কি ? আমি একটুখানি চিন্তিত হলাম ।
কিন্তু অন্যভাবে বললে মনে মনে খুব আনন্দ হচ্ছিল কারন চাম্পুর সান্নিধ্যেই আজ ফল খাবো অন্তত একটা বেল তো উপভোগ করব । খুব মজা হবে ।
আমরা এক এক করে ভিতরে ঢুকলাম ।
ভজাইকাকা বলল, "তোরা যখন আছিস্ তাহলে আমি বাড়ি থেকে একটু ঠুঁ মেরে আসি । তোরা আবার ফুলগাছে হাত দিস না । " - এই বলে ভজাইকাকা চলে গেল ।
সদর দরজা ভিতর দিকথেকে বন্ধ করে তালা দিয়ে যেদিকে বেল গাছগুলো রয়েছে আমরা সেদিকে যেতে লাগলাম । বেশ সুন্দর জায়গা এটা । চারিদিকে নানাধরনের ফুলের বাগান । নানারকমের ফলের গাছ মাথা চাড়া দিয়ে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, আর বেলগাছগুলো রয়েছে দক্ষিণদিকে সারিবদ্ধভাবে । মাঝখানে একটা পুকুর আর পুকুরের চারদিকে বাঁধানো পাকা ঘাট । পুকুরের চতুর্দিকে রয়েছে অপূর্ব সুন্দর বহু পুরোনো শিব মন্দির । তবে কেবলমাত্র উত্তরের মন্দিরটাতেই নিয়মিত পূজাপাঠ হয় । আর বাকি মন্দিরগুলোতে বিশেষ বিশেষ পার্বনে পূজো হয়ে থাকে । প্রতিবছর শিবরাত্রীর সময় এখানে মস্তবড়ো এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । রাজা বিজয়ানন্দের বংশধরেরা এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন । আমরা প্রতিবছর এইদিনে এখানে আসি আর খুব ইঞ্জয় করি ।
রাস্তার দুদিক ইঁটের সারি দিয়ে বাঁধানো । সেই রাস্তা দিয়ে ধীর কদমে এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে এগিয়ে চললাম । প্রকান্ড আমগাছগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাতে আর আম নেই, সব আম পেড়ে নেওয়া হয়েছে । তবে কাঁঠালগাছে ফল পাকতে লেগেছে, কাঁঠালগুলো যেন গাছে আর ঝুলে থাকতে চাই না । এই বুঝি মাটিতে ধড়াস্ করে পড়ল বলে ! লিচু গাছগুলো আবার মশারির জাল দিয়ে ঘেরা । সেই জালের ভিতর থেকে গোলাপি বর্ণের লিচুগুলো যেন কুকি মেরে উঁকি দিচ্ছে । আরও যে কত রকমের ফলগাছ রয়েছে তার ঠিক নাই । কলাগাছ, লেবু গাছ, পেয়ারা গাছ, কাজুবাদামের গাছ আরও কত কি ।
তবে সেগুলো রয়েছে ভিতরের বাগানটাতে । আর সেখানে যাওয়ার জো নেই, পৌঁছতে হলে অতিকায় প্রাচীর ভেদ করতে হয় । আর এই প্রাচীর টপকানো আমাদের সাধ্য নয় , তবে শুনেছি চাম্পু নাকি একবার টপকে ছিল ।
আহা ! এ যেন কোনো বাগান নয় ? এ যেন সাক্ষাৎ স্বর্গ । বর্ধমানে এরকম জায়গা আর কটায় বা আছে । অপূর্ব বাগান ! অপূর্ব ফলের বাহার । অপূর্ব বিজয়বাহার !!
আমার অবস্থা কাকেই বা বোঝায় ! আর তাছাড়া বাকিদেরও আমার মতোই হাল । রাজু সানু দুইভায়ের জিভগুলো আধেকটা বেরিয়ে এসে টস্ টস্ করে জল পড়ছে । আর জিৎ খালি লিচুগাছের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে । তবে জানি লিচু খাওয়ার কোনো উপায় নেই । কারণ চারটে লিচুগাছেই নিচের দিক থেকে জাল দিয়ে ঘেরা ।
কিন্তু চাম্পুর নজর পার্টিকুলারলি কোনদিকে তা বোঝার উপায় নেই । ওর চোখ একবার এদিকে তো একবার ওদিকে । ও কি ভাবছে, কে জানে ? কোনো কুমতলব মাথায় এসেছে কি না তাও বুঝতে পারছি না ।
হঠাৎ চাম্পু আঙুল দেখিয়ে বলল, "ঐ কাঁঠালটার সাইজখানা দ্যাখ !"
আমরা সবাই কাঁঠালগাছটার দিকে তাকালাম । দেখলাম একটা বিশাল আকারের কাঁঠাল পাঁচ-ছ হাত উঁচুতে ঝুলছে । তার আশেপাশে অনেকগুলো কাঁঠাল ঝুলে রয়েছে তবে কোনোটাই অত বড়ো সাইজের নয় । কাঁঠালটা দেখে আমার ভীষণ লোভ হল । তাহলে চাম্পুর কি হচ্ছে তা কি আর বলতে হবে ।
আবার চাম্পু বলে উঠল, "চল্ কাঁঠালটা পেড়ে সবাই মিলে ভাগ করে খেয়ে নিই !"
এই কথা শোনামাত্র জিৎ অতিশীঘ্র প্রতিবাদ করে বলল, "খেপেছিস নাকি ! ভজাইকাকু জানতে পারলে আর আস্ত রাখবে না ! বেশি পাঁইতাড়া না মেরে চল্ বেল পাড়ি গে । "
-চাম্পু বলল, "ভজা দেখলে তবে না !"
জিৎ ভেংচিয়ে বলল, "কাকুর সব জানাগোণা আছে । কোন গাছে কটা কাঁঠাল সব হিসেব করা আছে বুঝলি, ঠিক টের পাবে । তুই আবার সব চাইতে বড়ো কাঁঠালটাতে নজর দিয়েছিস । "
চাম্পু বলল, "তোর মাথা ! গোণা আছে না ছাই !"
জিৎ আরো জোর গলায় বলল, "ভজাইকাকু এমনিতে খুব ভালো কিন্তু রেগে গেলে কেমন ভয়ঙ্কর হয়ে যায় তা তো জানিস । কেন তোর মনে নেই সেই একবার যেদিন কাজুবাদাম পাড়তে এসেছিলি কেমন তাড়া করেছিল ? ভুলে গেছিস !
ধরতে পেলে একেবারে তুলে কাছড়ে দিত । "
চাম্পুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর মুখখানা শুকিয়ে একদম শুকনো কাজুবাদামের মতো হয়ে গেছে ।
চাম্পু একটু বিরক্ত হয়ে বলল, "আর আমি ছেড়ে দিতাম নাকি ! আমার গায়ে যদি হাত লাগাত না, তবে ব্যাটা ভজাকে মজাটা দেখিয়ে দিতাম । "
কিছুক্ষণ আমরা সবাই চুপ করে রইলাম । কেউ টুঁ শব্দটাও করলো না । তারপর হঠাৎ চাম্পু বেলগাছের দিকে এগুতে লাগল । বুঝলাম চাম্পু মত পাল্টেছে । যাক্ গে ভালোই হয়েছে । আমরাও চাম্পুর পিছে পিছে চলতে লাগলাম ।
বেলতলায় এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জটলা করতে লাগলাম । গাছের গোঁড়ায় সবাই নিজের নিজের জুতোগুলো খুলে রাখলাম । জটলা বেঁধে গেল গাছে কে চাপবে তা নিয়ে । এদিকে চাম্পু যে মুখভার করে রয়েছে ।
চাম্পুকে বললাম, "কিরে বেল পাড়বি না নাকি ? "
চাম্পু কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ গোমড়া করে রইল । স্পষ্ট বুঝলাম ব্যাটা গাছে চড়তে নারাজ । সানু আর রাজুকে কোনোদিনই গাছে চাপতে দেখিনি । আর জানলেও ভীতুগুলো বেলগাছে চাপবে বলেও মনে হয় না । ওদের ধারণা বেলগাছে নাকি ব্রহ্মদৈত্যের বাস । তাছাড়া আমিও ভালো করে গাছে চড়তে পারি না । কাজেই জিতের দিকে তাকালাম কিন্তু ওর বিকৃত মুখাভঙ্গিতে নেতিবাচক উত্তরটাই পেলাম ।
তাহলে বেল পাড়বে কে ?
আমরা চাম্পুকে মানাতে লাগলাম কিন্তু সুফলের বদলে কুফলটাই পেলাম । ব্যাটা নিজ সিদ্ধান্তে অনড় । কিছুতেই রাজি হয় না । তাহলে কি আজ খালি হাতে ফিরব ?
চাম্পুর সাথে কোনো জায়গায় গিয়ে শান্তি নাই । ব্যাটা নাটকবাজীর যম !
আমি জিৎকে বললাম, "তুই তো ভালোই গাছে চড়তে জানিস, তুই গাছে ওঠ্ না !"
তৎক্ষণাৎ জিৎ মুন্ডু হিলিয়ে নাকচ করে বলল, "আমাদের বেলগাছে চড়তে নেই । আমরা বেলগাছে পূজো দিই কিনা । চরম ক্ষতি হবে । "
" তোর বাপের মাথা হবে । তোর দাদুর __ এই হবে ; __ ওই হবে " বলে অসভ্য নোংরা ভাষায় যা তাই বলে গেল চাম্পু । এতে জিৎ ভীষণভাবে রেগে গেল । প্রায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েই গেছিল কিন্তু আমি রাজু আর সানু তিনজনা মিলে কোনোরকম এই মহাযুদ্ধের ভয়াবহ প্রলয় হতে তৃতীয় বিশ্বকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হলাম । কিন্তু জিতের বুকের ভিতরটা তখনও পর্যন্ত জীবন্ত আগ্নেয়গিরির ফুটন্ত লাভার মতো টগবগ টগবগ করে ফুটতে থাকল ।
কিন্তু চাম্পুকে দেখে বিস্মৃত হলাম কারন, ওর মুখমন্ডলে না আছে আতঙ্কের করুণ ছাপ , না আছে রাগের গজগজ আস্ফালন , না আছে লজ্জার বিন্দুমাত্র লেশ । মানে ব্যাটা একদম শান্তশিষ্ট ভদ্রছেলের মূর্তি ধারণ করে বড়ো বড়ো ঘাসের ওপর বসে রইল ।
আবার কিছুক্ষণের জন্য শব্দবিরাম । কারো মুখে কোনো কথা নেই । সকলের মুখে কুলুপ আঁটা । জানি চাম্পুকে তেঁলিয়ে কোনো লাভ হবে না তাই জিৎকে অনুগ্রহ করতে লাগলাম আর
বললাম, " ভাই জিৎ তুই একটা কাজ কর, ঠাকুরের নাম নিয়ে তিনবার প্রণাম করে দিব্যি উঠে পর ! দেখবি কিচ্ছু হবে না । ঠাকুর রাগ করবেন না ! "
প্রথমদিকে জিৎ কুঁইকাঁই করলেও পরে রাজি হয়ে গেল । রাজু সানুর শুকনো মুখ আবার রসালো হয়ে এলো । জিৎ প্রণাম টনাম করে নিয়ে বেলগাছে চড়তে লাগল । যে বেলগাছটাতে জিৎ চড়তে লাগল সেটা বেশ বড়োসড়ো । গাছে চড়তে প্রথম প্রথম জিৎ হিমসিম খাচ্চিল কিন্তু একটু চেষ্টা করে কিছুটা উঠে পড়ল ।
কিন্তু গাছে ওঠা মাত্র জিতের হাবভাবে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিল । গাছের বেশি উপরে উঠেনি সে । যেখান পর্যন্ত উঠেছিল সেখানকার মোটা ডালটাকে আঁকড়ে ধরে বসে পড়ল এবং পাগলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে কিসব বলতে শুরু করে দিল । জিতের এইরকম ব্যবহারে আমার ভীষণ ভয় করতে লাগল । দেখলাম সানু আর রাজু ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে । কিন্তু চাম্পুর মধ্যে কিঞ্চিৎ পরিমাণেও ভয়ডরের কোনো লক্ষণ দেখতে পেলাম না ।
বরং মুখ বেঁকিয়ে চাম্পু বলে ফেলল, "বেশি চালাকি মারিস না জিৎ ! আক্টিং করা বন্ধ কর । "
এই কথার বলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা বিকট চিৎকার করে জিৎ ধড়াস্ করে গাছ থেকে মাটিতে পড়ে গেল । বোধহয় মাটিতে পড়েই জিৎ বেহোঁশ হয়ে গেছিল কারণ তারপর আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না । কিছুক্ষণ ওভাবেই মাটিতে শুয়ে রইল কিন্তু আমাদের কারো মধ্যেই সাহস হল না ওর কাছে যাওয়ার ।
কিন্তু চাম্পুর তখনও বিশ্বাস জিৎ নাটক করছে ।
আমরা স্পষ্ট দেখলাম, জিতের মুখ থেকে গলগল করে ফেনা বেরোতে আর হেঁড়ে গলায় গোঁ গোঁ করতেও শুনলাম । ভয়ে আমার গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে গেল । পাগুলো থরথর কাঁপতে শুরু করে দিল । মুখে কথা বলতে পারলাম না । হৃদপিন্ডটা ধড়াক্ ধড়াক্ করতে শুরু করে দিল । কি করব কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না ।
হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখলাম চাম্পু দৌড়চ্ছে সদর দরজার দিকে । আর তার পিছন পিছন দুভাই হাত ধরে দৌড়চ্ছে । আগেপিছে কিছু ভাববার আগেই আমার পাদুটো আপনাআপনি ওদের দিকে দৌড়তে লাগল ।
জিৎ এখন ব্রহ্মদৈত্যের কবজে । জিৎ এখন আর জিৎ নয়, ও এখন ভূতের কবলে । কিন্তু সদর দরজার কাছে পৌঁছে দেখলাম চাম্পু চিৎকার করে গলা ফেঁড়ে ফেঁড়ে ভজাইকাকুকে ডাকছে ।
-ভজাকাকা বাঁচাও !
বাঁচাও ভজাকাকা !
আর সানু রাজু দরজায় ধড়াধড় আঘাত করেই চলেছে ।
এই বুঝি দরজাটা গুঁড়িয়ে ফেলল বলে । আমিও স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারলাম না, চাম্পুর জামাটা ধড়ে টানাটানি করতে লাগলাম । হঠাৎ বেলতলা থেকে আবার হেঁড়ে গলায় সেই বিকট চিৎকার শুনতে পেলাম । এটা জিতের গলা হতেই পারে না । সানু রাজু ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিল । কিন্তু ভজাইকাকুর কোনো পাত্তা নেই । আর দরজার চাবি তো জিতের পকেটে ।
তাহলে এবার কি হবে ? আমরা কি করে বাইরে বেরোবো ।
আজ নির্ঘাত আমাদের প্রাণগুলো যাবে, ব্রহ্মদৈত্য এক এক করে দিব্যি আমাদের ঘাড় মটকাবে । ব্রহ্মদৈত্যের হাত থেকে কেউই নিস্তার পাবো না । ধড়াস্ করে একটা শব্দ হওয়া মাত্র সম্বিত ফিরল ।
দেখলাম চাম্পু মাটিতে চিৎপটাং হয়ে পড়ে রয়েছে আর মুখে উঃ আহঃ করছে । চাম্পু প্রাচীর টপকাতে চেয়েছিল । কিন্তু এই প্রাচীর কোনো সাধারণ প্রাচীর নয় । রাজাদের আমলে তৈরী এই প্রাচীরের উচ্চতা দুইতিন মানুষের সমান ।
প্রাচীর ভেদ করা প্রায় অসম্ভব অর্থাৎ বাইরে বেরোনো কোনো রাস্তা নেই । আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে ভজাইকাকুকে ডাকতে লাগলাম । কিন্তু কোনো ফল হল না ।
হঠাৎ আবার সেই বিকট গোঁ গোঁ চিৎকারটা শুনলাম কিন্তু এইবার আওয়াজটা খুব কাছ থেকে মনে হল । রাজু ভাঙা ভাঙা গলায় বলল, " ঐ দ্যাখ ভাই, জিৎ এদিকে আসছে ।
আমরা সকলেই দৃষ্টিনিক্ষেপ করলাম । পরিস্কারভাবে দেখলাম জিৎ অদ্ভুদভাবে একটা পা মাটিতে টেনে হেঁচড়ে হেঁটে হেঁটে আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে । আকাশের শুন্যে মুখ করে জিৎ কি দেখছে কে জানে আর মুখে সেই ভয়ঙ্কর গোঁ... গোঁ... শব্দ । ওর হাত দুটো পিছনদিকে আঁকাবাঁকা গাছের শাখার মতো বেঁকে গেছে । খুব ধীরে ধীরে পা ফেলে আমাদের কাছে আসছে । আমাদের ধড়তে আসছে । ঘাড় মটকাতে আসছে ।
আজ আমাদের শেষ দিন ।
এই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন আগেও হয়েছি তবে কেন জানিনা এইবার নিজেকে সামলাতে পারছি না । মনে হচ্ছে এই বুঝি অজ্ঞান হয়ে গেলাম । মাথাটা বোঁ বোঁ করে ঘুরতে লাগল । পাগুলো যেন অবশ হয়ে আসছে । প্রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিলাম কিন্তু চাম্পু আমাকে সামলে নিল ।
আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে বলল, " চল্ শিব মন্দিরে ঢুকে পড়ি । তাহলে ও আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না । "
আমরা চারজনা প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়তে লাগলাম । এবং নিমেষের মধ্যেই উত্তরের শিবমন্দিরে পৌঁছে গেলাম । মন্দিরের দরজা খোলায় ছিল তাই সোজা মন্দিরে ঢুকে পড়লাম ।
মন্দিরে ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম । আমার বুকের ধকধকানি তাতেও কমলো না ।
আমার হাত পা গোটা গা ভিজে স্যাঁতস্যাতে হয়ে গেছে । দেহের প্রত্যেকটা লোমকূপ থেকে রাশি রাশি ঘাম বন্যাকারে বেরিয়ে আসছে । দিব্যি অনুভব করছি গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে । আমি থর থর করে কাঁপতে লাগলাম । সানু রাজুর অবস্থা বোধহয় আমার থেকে সঙ্গীন । ওদের লক্ষ্য করার মতো অবস্থায় আমি নেই ঠিকই কিন্তু ওদের ভাঙা কণ্ঠের গোঙানো শব্দ আমার কানের লতি ভেদ করে ভয়ঙ্কর ক্ষতি করছে তা ঠাহর করতে পারছিলাম ।
ছোট্ট বর্গাকার আবদ্ধ মন্দিরের দেওয়ালে ধাক্কা মেরে এই তীক্ষ্ণ কানফাটা কটু শব্দ শুধু কানেরই ক্ষতি নয় এমনকি চোখের জ্যোতি আর গুরুমস্তিষ্ককে লঘু করে মতিগতির চরম ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট । মহাপ্রলয় সৃষ্টিকারী এই মেগা ডেসিবলধারী শব্দ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাতদুটোকে রক্ষাকবচ করে দুই কানে দুহাত চেপে ধরে কিছুক্ষণ মন্দিরের এককোণে বসে রইলাম ।
চাম্পুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে চুপটি মেরে বসে আছে ঠিক আমার বিপরীত কোণে । আর মন্দিরের মাঝখানটাতে রয়েছে পাথরে শিবলিঙ্গ আর তারপাশেই রাখা আছে ছোট একটা স্টিলের ঘটি বেলপাতায় ঢাকা । মন্দিরের কাঠের দরজার একটা পাল্লা লাগাতে পারলাম । আর অন্য পাল্লাটা কিছুতেই ঠেসাতে পারলাম না বিস্তর মরচে ধরেছে । আর তাছাড়া গায়ের সমস্ত কার্য শক্তি বল একেবারে শূন্য ।
দেখলাম, চাম্পু অদ্ভুদভাবে চোখ ফেঁড়ে আমাকে দেখছে । চাম্পুর বিশ্রী মুখের ছিরি এতটাই বিগড়েছে যে আমি নিশ্চিত এই কুশ্রী মুখ দেখলে ভূত দৈত্যরাও শ্রীজ্ঞান হারাবে । সুতরাং সটান আমি মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম । ঐ মুখ দেখে বুকের ধকাধকানিটা আর বাড়াতে চাই না । প্রায় দুআড়াই মিনিট ধরে সানু রাজুর শব্দবাজী সহ্য করতে হল । তারপর তারা চুপ মেরে গেল আর দেওয়াল ঘেঁষে জড়াজড়ি করে বসে পড়ল । ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল । কিন্তু চাম্পুর মুখে কোনো কথা নেই ।
কয়েক মুহুর্ত বিজয়বাহার একেবারে শান্ত হয়ে । কোথাও কোনো শব্দ নেই । পাখিদের কিচিরমিচির নেই , কাকের মুখে কা নেই, রা নেই ।
গাছের সমস্ত পাখি যেন উধাও হয়ে গেছে । এ যেন কোনো ভয়ঙ্কর বিপদের সংকেত ।
আমরা চারজনা কোনোরকম কথা না বলে একে অপরের মুখপানে চেয়ে রয়েছি ঠিক এমন সময় শুনলাম পিলে চমকানো হাড় কাঁপানো সেই গোঁ গোঁ আওয়াজ ।
খোলা পাল্লার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারতেই দেখলাম একেবারে মন্দিরের চৌহদ্দিতে দাঁড়িয়ে জিৎ গোঁ গোঁ করছে । মুখ দিয়ে ফেনা বেরিয়েই যাচ্ছে । চোখের মনিগুলো কপালে উঠেছে । আমি আর ওর দিকে তাকাতে পারলাম না ।
চাম্পু সানু রাজু ওরা আমাকে দেখতে লাগল । বাইরে তাকানোর সাহস দেখাতে পারলো না ।
দিনে দুপুরে কেন যে চাম্পুর সাথে এখানে মরতে এলাম কে জানে ! বেলগাছের ভূত কি দৈত্য বলতে পারব না, তবে জিতের এহেন অবস্থা দেখে মনে ভারী কষ্ট হতে লাগল । আমারই দোষ ! কেন যে ওকে গাছে চড়াতে জেদ করলাম !
এবার কি হবে ? দৈত্য এখন জিতের গায়ে । প্রথমে আমাদের মারবে তারপর জিৎকেও হয়ত মেরে ফেলবে । শঙ্কা আশঙ্কায় আমরা সকলেই জর্জরিত মর্মাহত । বেঁচে বাড়ি ফিরব কিনা জানিনা । জিৎ ওখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোঁ গোঁ করেই চলল ।
বোধহয় আমাদের বেড়োনোর অপেক্ষা করছে । অনেকটা সময় কেটে গেল । ভজাইকাকার টিঁকিটুকুরও দেখা মেলে না । ভজাইকাকার উপর খুব রাগ হল । মনে মনে দুচারখানা খিস্তিও দিতে ছাড়লাম না ।
কি করা যায় ? কি উপায়ে ব্রহ্মদৈত্যের হাত থেকে রেহায় পাওয়া যায় সেসব ভাবতে লাগলাম ।
ঠিক তখনই ব্রহ্মদৈত্য ভয়ঙ্কর হেঁড়ে গলায় বলল,
" বেরিয়ে আয় চাম্পু ! আমি তোর হাড় ভাঙবো ! তোর ঘাড় মটকাবো ! হাঃ হাঃ হাঃ ! "
এ কি ব্রহ্মদৈত্য যে চাম্পুর নাম ধরে ডাকে ? আশ্চর্য ব্যাপার ! তার মানে কি ব্রহ্মদৈত্য চাম্পুকে চেনে ? কিন্তু কি করে চিনল ? নিশ্চয় চাম্পুর সাথে ব্রহ্মদৈত্যের কোনো ক্ষার আছে । হয়ত কোনো পুরনো বোঝাপড়া বাকি রয়েছে । হয়ত কোনো এক কালে চাম্পু নিশ্চয় ঐ ব্রহ্মদৈত্যকে কাঠি করেছিল আর তাই আজ বাগে পেয়ে ব্রহ্মদৈত্য চাম্পুকে বাঁশ দিতে এসেছে ।
আমরা অবাক হয়ে একভাবে চাম্পুর মুখের তাকিয়ে থাকলাম ।
আবার ব্রহ্মদৈত্য হুঙ্কার দিয়ে ডাকল, " বেরিয়ে চাম্পু ! বেরিয়ে আয় বলছি, বেরিয়ে আয় হারামজাদা ! সেদিন তুই আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ঐ ছাতিমগাছের গোড়ায় মুতে গেছিলি মনে আছে । তোর কুকর্মের জন্য আজ আমি ঘরছাড়া ! ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধে গাছে টেকা দায় হয়ে উঠল ! কি খাস রে ব্যাটা ! লাফ মেরে পা ভেঙ্গেছি, বাঁ পা টা অবশ হয়ে গেছে !
পড়ে গিয়ে হাতদুটো বেঁকে গেছে আজও সোজা হয়নি রে হারামজাদা ! ছাতিম গাছে আর চাপতে পারছি না । কোনোরকম হাড়ভাঙা কষ্টে টেনে হেঁচড়ে এই বেলগাছটায় চেপে বসলাম ।
মাঝে মাঝে ঘাড়ের ব্যথায় শিউড়ে উঠি । আহঃ এখনো ব্যথা করছে । আজ তোকে বাগে পেয়েচি । আজ তোর পা ভাঙবো, হাত মচকাবো, ঘাড় মটকাবো । আজ তোকে ঠেলা বোঝাবো । "
চাম্পুর অবস্থাটা কি ? তা দেখার জন্য যেই চাম্পুর দিকে তাকিয়েছি ঠিক তখনই চাম্পু তড়াক্ উঠে দাঁড়াল । তারপর এদিক ওদিক দিকবিদিক পাগলের মতো মুন্ডটাকে দোলাতে শুরু করে দিল
আর ফিসফিস করে মুখে কিসব বলতে লাগল ।
এই মরেছে চাম্পুর আবার কি হল ? ব্রহ্মদৈত্যের সম্মোহনে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল নাকি ? তাহলে কি চাম্পু আপনাআপনিই ব্রহ্মদৈত্যের হাতে ধরা দেবে ? কিন্তু ব্রহ্মদৈত্য যে ঘাড় মটকাবে বলছে ?
চাম্পুকে মারার পর হয়ত আমাদেরও মেরে ফেলবে ।
না না আমি ভূতের হাতে মরতে চাই না ।
সানু রাজুও উঠে দাঁড়িয়ে "না চাম্পু যাস না, যাস না'... বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল ।
দ্রুত চাম্পুর হাতটা ধরে বললাম, " না চাম্পু তুই যাস না । ও তোকে মেরে ফেলবে ! তুই যাস না, তুই যাস না । "
কিন্তু চাম্পু কারো কথায় কান দেবার পাত্র নয় !
পাগলের প্রলাপ বকতে লাগল চাম্পু, অসভ্য ভাষায় ব্রহ্মদৈত্যকে নোংরা নোংরা খিস্তি দিতে লাগল । তারপর সে হঠাৎ বাইরে বেরোতে চাইল কিন্তু আমরা তিনজনা মিলে চাম্পুকে কোনোরকম আগলে রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম ।
কিন্তু আশ্চর্য্য, আমরা তিনজনা মিলেও চাম্পুকে ধরে রাখতে পারলাম না । চাম্পু আমাদের তিনজনাকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিল । আমরা তিনজনা তিনদিকে ছিটকে পড়লাম ।
আর ওদিকে ব্রহ্মদৈত্য "আয় বেরিয়ে আয়"... "আয় বেরিয়ে আয়"... বলে হুঙ্কার দিতেই থাকল ।
খাঁচায় বন্ধ খোঁচাহত বাঘের মতো চাম্পু মন্দিরের এপাশ ওপাশ করতে লাগল । জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল । চাম্পু কেন এমনধারা করছে তা বুঝতে পারলাম না ।
ও কি জানে না যে ভূতের সাথে খালি হাতে লড়াই করা যায় না । অন্তত দুচারটে মন্ত্র জানতে হয় ! তেলপড়া জলপড়া লাগে ।
চাম্পুকে এই ব্যাপারে অবহিত করার চেষ্টা করতে লাগলাম । কিন্তু চাম্পু আমার কথায় কান দিল না ।
ক্ষিপ্ত অশান্ত চাম্পু ঠাকুরের ঘটি টা হাতে তুলে নিল । তারপর গায়ের জোরে টিপ করে ব্রহ্মদৈত্যের দিকে ছুড়ে মাড়ল ।
আশ্চর্য্য টিপ চাম্পুর ! ঘটি সোজা গিয়ে লাগল একেবারে জিতের কপালে মানে, ব্রহ্মদৈত্যের কপালে । আর তারপর একটা বিকট ভয়াবহ চিৎকার করে ব্রহ্মদৈত্য মাটিতে চিৎপটাং । এমন ভয়ঙ্কর চিৎকার আমি কোনোদিন শুনিনি । মেঘের গর্জনের থেকেও দশগুন বেশি তীব্র হবে হয়ত । এতটাই গুরুগম্ভীর যে মন্দিরটা সুদ্ধ কেঁপে উঠল ।
মুহুর্তের মধ্যে আবার সব শান্ত হয়ে গেল । আমার দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রাণপাখী আবার ফিরে এল । আবার পাখিদের কিচিরমিচির শুরু হয়ে গেল ।
দেখলাম জিতের জ্ঞান ফিরেছে । কাওকে দেখতে না পেয়ে জিৎ 'ভজাকাকু ভজাকাকু' বলে চেঁচাতে লাগল । আমরা সবাই মন্দির থেকে বেরিয়ে এলাম । জিতের কাছে গিয়ে দেখলাম ওর কপাল ফুলে আলু হয়ে গেছে । সেই আলুতে হাত বোলাতে বোলাতে আহ্ আহ্ করতে লাগল জিৎ । জিতের কিছুই মনে নেই । কি করে সে এখানটাতে এল আর কিভাবে তার কপালে আলু হল তা কিছুই নাকি সে মনে করতে পারছে না ।
এসব কিকরে হল তা জানতে চাইল জিৎ । আমি ওকে যেই বলতে যাবো অমনি চাম্পু বলল, " বাবু তুই থাম, আমি বলছি । "
তারপর চাম্পু বলতে লাগল,
" ও কিছু না । গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তুই অজ্ঞান হয়ে গেলি । আমরা তুলে নিয়ে এই মন্দিরে নিয়ে এলাম । তারপর তোর জন্য ভোলেবাবার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম । ভোলেবাবা তোকে ঠিক করে দিল । "
এই কথাগুলো বলার পর চাম্পু জোরে জোরে বলতে লাগল,
" জয় ভোলেনাথ ! বাম্ বাম্ ভোলে ।
প্রভু কি জয় হো ! প্রভু কি জয় হো !! "
Written by:- Aalim Khan

No comments:
Post a Comment