বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Friday, 4 September 2020

কান্তিপিসির সঙ্গলাভ / বাংলা গল্পসল্প নিবেদিত ছোট্ট একটি গল্প ।

 "কান্তিপিসির সঙ্গলাভ"

'মহঃ আজহার'

       কয়েক বছর আগের কথা। অতীন তার পিসিমা কান্তিদেবীকে নিয়ে ব্যস্ত। কান্তিদেবী অতীনের একমাত্র পিসি আর অতীন হল কান্তিপিসির একমাত্র ভাইপো। ছোটবেলা থেকেই অতীন তার বাবা-মাকে ছেড়ে কান্তিদেবীর কাছেই মানুষ। কান্তিদেবী নিঃসন্তান, তাই অতীনই হল তাঁর প্রানের দোসর।  অতীনের বাবা-মা অতীনকে কান্তিদেবীর কাছে রেখে যান। অতীনের এক দিদি এবং একটি ছোটো ভাইও রয়েছে। তবে মা-বাবাকে ভালোবাসলেও অতীন যে পিসিমা বলতেই অজ্ঞান।
      ছেলেবেলা থেকেই অতীনের লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় ভরণপোষণ সমস্ত কিছুই করতেন কান্তিদেবী। রীতিমতো ভালো পড়াশোনা করে অতীন এখন ডাক্তারী পাশ করে কলকাতায় মেডিসিন ডাক্তার হিসেবে প্রাক্টিস্ শুরু করেছে। পেশায় অতীন ডাক্তার হলেও মনের দিক থেকে ছিল তার পেশার প্রতি অদম্য শ্রদ্ধা। বিশেষ করে খেটেখাওয়া গরীব মানুষদের চিকিৎসা করতে চাই একেবারে নিখরচায়। এটাই ছিল কান্তিপিসির একমাত্র স্বপ্ন। দিনের পর দিন অতীনের প্রাক্টিস্ টা আরো ধারালো ও নিখুঁত হতে থাকে। পিসিমা ও পিসেমশাই তার এই সাকসেসে গর্ববোধ করেন।
     এরপর হঠাৎ করে একদিন পিসেমশায়ের শরীর খারাপ হয়। পিসেমশাইও অতীনের মতো খুব মেধাবী ও উচ্চবিচারসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন অ্যডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট্ জাজ্। তাঁর পেশা তাঁকে এক উন্নতির শিখরে নিয়ে যায়। পিসেমশাইও সারাদিন নিজেকে কাজকর্মে মসবুল রাখতেন। কাজকর্মকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তেমন খাওয়াদাওয়ার প্রতি মন দিতে পারতেন না। এইভাবে পিসেমশায়ের শরীরে এক কঠিন রোগ দানা বাঁধে। ইউএসজি রিপোর্ট থেকে জানা যায় পিসেমশায়ের কিডনিতে পাথর। অবশ্য কিডনিতে পাথরের সাইজ যথারীতি বড়ো আকারের দেখা দেয়। এর আগে যন্ত্রণা হতো কিন্তু কোনোদিনই তা বাড়িতে বলেননি। দোকান থেকে ঔষধ কিনে খেতেন। একটু কমলে আবার কাজকর্মে নিযুক্ত হয়ে যেতেন।
       অতীন সেই সমস্ত অজানা কথা পিসেমশায়ের কাছে জানতে পেরে পিসেমশায়কে বড্ড বকাবকি করে। তারপর সে নিজেই ডাক্তার হওয়ার জন্য পিসেমশায়কে অবজারভেশনে রেখে তার এক কিডনি বিশেষজ্ঞ বন্ধুর কাছে নিয়ে যায়। ডঃ সতীশ দে'র কাছে নিয়ে যেতেই সতীশবাবু ইম্মিডিয়েটলি অপারেশনের পরামর্শ দেন। অতীন অপারেশনের জন্য বন্ধু সতীশকে সায় দেয়।
       তারপর দীর্ঘ ৫ ঘন্টা অপারেশন থিয়েটারে কাটানোর পর অপারেশন সাকসেসফুলি হয়েছে বলে সতীশবাবু জানান। অতীন তার মূল্যবান কথা শোনার পর আশ্বস্থ্য হয়ে বন্ধুকে সাধুবাদ জানিয়ে বলে, "You're my Angel. You save my heart. You deserve, You're a fantastic doctor."
      যাইহোক উৎফুল্লিত হয়ে অতীন বন্ধু সতীশকে গলা জড়িয়ে ধরে নেয়। তারপর সমস্ত ফরমালিটি কম্প্লিট্ করে পিসেমশায়কে বাড়িতে নিয়ে আসে। কান্তিপিসি পিসেমশায়কে সুস্থ দেখে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান।
      তারপর অতীন তার কর্মজীবনে ফিরে যায় কলকাতায়। ফোনেই খোঁজ নিতে থাকে অতীন। তার ঠিক দুইদিন পরেই হঠাৎ পিসেমশায়ের শরীরের অবনতি দেখা দেয়। শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হতে শুরু হয়। পিসিমা কান্তিদেবী অতীনকে এই ব্যাপারটা জানালে অতীন তড়িঘড়ি কলকাতা থেকে ফিরে আসার মনস্থির করে। ঠিক সেই সময় পিসেমশায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পাড়ার লোকেরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই মাঝপথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তারপর অতীন বাড়ি পৌঁছলে পিসেমশায়ের মরামুখ দর্শন করে। অতীনের পক্ষে পিসিমাকে সামলানো বড্ড মুশকিল হয়ে পড়ে। সে কিছুতেই কান্তিদেবীর কান্না থামাতে পারে না। আর যাইহোক তাঁর প্রাণের একটা সুর ছিঁড়ে গেছে জীবন থেকে। অতীনও প্রচন্ড ভেঙে পড়ে।
       কিন্তু বাস্তবকে উপেক্ষা করে বিধাতার নিয়মকে ভঙ্গ করার থেকে মানুষ যে নিরুপায় সেটা অতীন উপলব্ধি করে পিসেমশায়ের শেষ কৃত্য সম্পন্ন করে। পিসিমা কান্তিদেবী একেবারে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন পিসেমশায়ের শোকে। অতীন হাজার চেষ্টা করে বুঝিয়েও পিসিমাকে খাওয়াতে পারতো না। অতীন যেহেতু নিজে একজন ডাক্তার তাই বুঝতে পারছিল পিসিমার স্বাস্থ্যের কতটা ক্ষতি হচ্ছে। শেষমেষ শত বুঝিয়ে কোনোরকম চেষ্টা করে এক দুইবার খাওয়াতে পারতো জোর করে।
      এই ভাবে ধীরে ধীরে পিসিমার শরীরের রঙ ফিকে হতে থাকে। অতীন নিজেই যাবতীয় ট্রিটমেন্ট করে ঔষধপত্র নিয়ে এসে খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পিসিমা ঔষধ খেতে চান না। আস্তে আস্তে শরীরে রক্ত কমতে থাকে এবং মারাত্মক রোগ বেঁধে যায়। কোনো এক রাতে প্রচন্ড বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে যায়। শহরের নামিদামী ডাক্তারের সাথে বৈঠক করে অতীন তার চিকিৎসা করতে সচেষ্ট হয় কিন্তু বিধাতার ডাক এলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তার মুখাপেক্ষী হয়না। হিসাবটা ঠিক তাই দাঁড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে ভেন্টিলেশনে রেখেও পিসিমা কান্তিদেবীকে বাঁচাতে পারলো না অতীন। পিসিমার শোকে অতীন প্রায় ভবঘুরে হয়ে যায়। চোখ মুখ সব শুকিয়ে যায়।
       পিসিমার সেই ভালোবাসা, ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো সব তার চোখে ভাসতে থাকে। জীবন থেকে অতীনের সব স্বার্থ যেন হারিয়ে গেছে। তানপুরার আওয়াজের মতো পিসিমার সুর অতীনের কানে সবসময় বাজতো। সেই সব সুর অতীন এখন আর শুনতে পাচ্ছে না। অতীন কান্নায় বিভোর হয়ে পিসিমা কান্তিদেবী আর পিসেমশায় যশোধর রায়কে খুঁজতে থাকে । কিন্তু সেটা কি আর সম্ভব ? জীবনের অন্তিম লগ্নে পিসিমা ও পিসেমশাই অতীনকে একা করে পরলোক গমনে পাড়ি দিয়েছেন। চন্দ্রযান রকেট মহাকাশে পাড়ি দিলে তার যেমন একটা ফেরার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু এখানে পিসিমা ও পিসেমশায়ের পরলোক থেকে ফেরার কোনো পথই নেই। জীবনের ধ্রুব সত্যটাকে মেনে নিয়ে অতীন পিসিমারও শেষ কৃত্যটা সম্পন্ন করল।
     পিসিমা কান্তিদেবীর ভালোবাসার স্মৃতিগুলো মনে করতে করতে অতীন গভীর নিদ্রায় মগ্ন হল তখন স্বপ্নে পিসিমা কান্তিদেবীকে দেখল। পিসিমা অতীনের জন্য তার পছন্দের খাবার ঘি-ভাত-পটলভাজা-পায়েস নিয়ে বাড়িরই উঠোনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অতীনও খেতে প্রস্তুত। তারপর অতীন যখন খুশি মনে চোখ খুলে সেই খাবার খেতে যায় তখন দেখে কোথাও কেউ নেই -- অতীন শুধু একা। তখন ঝর্ ঝর্ করে কেঁদে অতীন মনে মনে বলল,
      -- "ও পিসিমা, তুমি তো সবসময় আমার পাশেই আছো -- চোখ খুললে তোমায় দেখতে পাবো না ঠিকই -- কিন্তু চোখ বন্ধ করে তোমার ভালোবাসার স্মৃতির দ্বারা তোমার সান্নিধ্য তো লাভ করবো -- আমি সেটা ভেবেই খুশি ।।"

 

 

 

 

Written By - MD. AZHAR

Copyrighted.com Registered & Protected

 

No comments:

Post a Comment