বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Thursday, 17 August 2017

আলুপোড়া / চাম্পু অ্যাডভেঞ্চারস্' সিরিজের গল্প / হাসি মজার গল্প / কিশোরদের গল্প

 

                                          

 " আলুপোড়া "

"আলীম খান"

        কয়েক দিন আগের কথা । সেদিনটা ছিল মাঘ মাসের চরম এক শীতের সন্ধ্যা । তখন কয়েকদিন ধরেই আমরা আলুপোড়া আর খাওয়া নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম । সারা বিকেলটা ব্যাটবল নিয়ে যে যার কায়দা কেরামতি দেখাতাম, আর সন্ধ্যা হলেই শুরু হয়ে যেত  আলুপোড়া নিয়ে একধরণের এন্টারটেইনমেন্ট ।

      কেউ কেউ বাড়ি থেকে একটা দুটো আলু নিয়ে আসত । কেউ আবার দোকান থেকে একটাকার দুটাকার আলু কিনে আনত । আলু না নিয়ে আনলে তার এই আসরে অংশগ্রহন করার কোনো অধিকার নেই । তাই বেলা পড়তে পড়তে ভাগীদারির সংখ্যাও কমে যেত ।
 
     এত গেল সেইসব দিনকার আগডুম্ বাগডুম্ । এবার  আসল মজাতেই আসা যাক । সেদিন পাঁচজনের আলু, তাই পার্টিটাও হল পাঁচজনারই । আমি একটা বড় পারা আলু এনেছি, এটাই আমার কাছে এনাফ্ ।  সানু আর রাজু দুই ভাই , ওরা একটা করে দুটো বড় বড় আলু এনেছে,  যেন আলু নয় লাউ এনেছে । আকিব তার মতো করে ছোটো মতন দুটো আলু এনেছে। এবার শেষজন মানে সব চাইতে ইন্টারেস্টিং বয়,  আমাদের বাবুরবাগের  চাম্পু । ভালো কি একটা নাম আছে, তবে ঐ নামে কেউ চেনেও না আর জানেও না । সবাই চাম্পু নামে ডাকে আর এটাই ওর ডাকনাম । ও  ব্যাটা  পকেট ভর্তি  আলু এনেছে ।

    বেলা শেষ  আর তাই খেলাও শেষ । এবার আমাদের আদিমযুগে যাত্রা শুরু হল । সবার আলু এক জায়গায়, যে যার নিজের নিজের আলু আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে । মুদ্দা কথা হল  একে অপরকে শাষাণি দিচ্ছে  যেন কেউ কারোর টা মেরে না দেয়,  মানে সাঁটিয়ে না দেয় আরকি !

    এরার পালা সরঞ্জাম জোগাড় করার ।  অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে তাই ভালো করে কিছু দেখা  যায় না । সুতরাং হাতে যা পাওয়া গেল তাই নিয়ে সাজানো হল অগ্নিকুন্ড । কাগজ মাগজ কাঠ ফাট সব রেডি ।  আগুন ধরাতে হবে যে   আগুন কই । সে চিন্তা কি আর করতে হবে ? চাম্পু অমনি  ফট করে পকেট থেকে বের করল একটি দেশলাই ঠোল । বাবুরবাগের চ্যাংড়া-ঠ্যাংড়াগুলো লেখাপড়ায় উন্নতি করুক না করুক,  বিড়ি ফুঁকতে সব এক একটা উস্তাদ । 

     চারিদিকে শীতের আমেজ । কনকনে ঠান্ডায় আমরা সবাই ঠকঠক করে কাঁপছি আর চাম্পুর অপূর্ব সাদা চকচকে দাঁতদোপাটি কটকট শব্দ করতে লাগল । আর হাসিটা তো একেবারে বাঁধিয়ে রাখার মতো । যাইহোক, এক দুই তিন  করে পুরো বারোটা কাঠি নষ্ট করল  ব্যাটা ।  কিন্তু তেরো নম্বরটাই ঠিক জ্বলল । কে বলে আনলাকী থার্টিন ?

    আলু পড়ল আগুনের মাচায় ।  ফটফট শব্দ করে আলু পুড়ছে । সবার জিভে জল আর  চোখে আগুনের ছটা পড়ে   সেগুলো প্রদীপ্ত শিখার মতো জ্বলজ্বল করছে ।
আমি হাত সেঁকতে ব্যস্ত,  আর সানু বারবার পিছনে কি যেন দেখছে । আর আমাদের প্রিয় চাম্পুর তো শুধু এক দিকেয় মন,  আরে ভাই আলু পোড়ানোয় । ও বারবার কাঠি দিয়ে নিজের আলু এপিঠ ওপিঠ করে ভালো ভাবে পুড়িয়ে নিচ্ছে ।  
বাকিরা গা গরম করছে ।

    এইভাবে অনেকটা সময় কেটে গেল ।  চাম্পু ভূতের গল্প শুনিয়ে আমাদের ভয় দেখাচ্ছে । আর  আমাদের আলুগুলো  যে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে  সেদিকে আমাদের কোনো খেয়াল নেই । চারিদিক জনশূন্য খাঁ খাঁ করছে । একঘন্টা আগে এখানে গন্ডায় গন্ডায় ছোকরা ছুকরি, চ্যাংড়া চিংড়ি গুলো  হৈ হৈ থৈ থৈ  করছিল । বুড়িগুলোর ভ্যাকভ্যাকানি আর বুড়োগুলোর খ্যাঁকখ্যাঁকানি কানে কটু বাঁশির মতো বাজছিল ।   সেগুলো এখন আর নেই । একটু আগে যেমনি ধুমধাম, এখন ঠিক তেমনি শুমশাম ।  পোকার ডাকে কানগুলো চিঁ চিঁ করছে । আমাদের কথাগুলো ভেসে ভেসে আমাদের কানেই ঢুকছে । তার ওপর আবার প্রচন্ড শীত ।

    এমন সময় হঠাৎ পাশেরই বুনো কচুর ঝোপটা সড়সড় করে নড়তে লাগল ।  হঠাৎ  করে এমন হওয়াতে   আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম । দেখলাম বাকিদেরও একই হাল ।   সকলে নড়ে চড়ে বসলাম । ঝোপটাতে কি আছে জানার জন্য সবাই ছোটো ছোটো ঢিল মারতে লাগলাম । কিন্তু কোনো ফল হল না । কোনো শব্দই ওখান থেকে উঠে এল না ।  
সানু বলল, "আরে কিছু না, মেঠো ইঁদুর !" 
আমরা একটু স্বস্তিই পেলাম আরকি !

     কয়েক মিনিট সবকিছু ঠিকঠাক চলল , যে যার আলু নিয়ে কায়দা করতে লাগলাম মানে  অগ্নিকুন্ড থেকে  বের করার  উপায় করতে লাগলাম । এবার যেই পোড়া আলু গুলো বের করব,  ঠিক এমন সময় আবার   ঐ একই জায়গা থেকে   সড়সড় শব্দ করে  কচু পাতা হিলতে লাগল । এইবার কিন্তু চাম্পুর মাথা গরম, খাওয়ার সময় বিরক্ত করলে  ও একদম অসূর হয়ে যায় । হল ঠিক সেটাই,   মানে অসূর চাম্পু আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না । হাতের মুঠোয়  একটা বড় আদলা ইঁট  তুলে ছুড়ে দিল  ঐ কচুর ঝোপে । তারপর যা ঘটল তা আর মুখে বলা যায় না ।

      হঠাৎ একটা কালো মোটা ভোঁদকা শুয়োর   গোঁত গোঁত  করতে  করতে  লাফাতে লাফাতে  আমাদের দিকে এগোতে লাগল । ভয়ে আমার জানটা শুকিয়ে গেল  আর  বুকটা ধকধক করতে লাগল । আমি ছিটকে পেছনদিকে পড়লাম ।  সানু, রাজু আর আকিবেরও একই অবস্থা ।   কিন্তু চাম্পুর হাল দেখে কে !
   "ওরে বাবা রে.. ! ওরে বাবা রে... !"- বলতে বলতে   ওর পিছনটা গিয়ে পড়ল একেবারে গরম আঁচের ওপর । ব্যাস্ ! সমস্ত পোড়া আলু চটকে গেল, ধসে গেল । বেশি পিছন-পাকামি করতে গিয়ে   চাম্পুর পিছনটা  আগুনে ঝলসে গেল । 
     আমাদের  পোড়াআলু  আর খাওয়া হল না । সেদিন থেকে
চিরকালের মতো আমাদের আলু পার্টি বন্ধ হয়ে গেল ।।    😆😊😋
 


Written By-

 
 
 
 
Copyrighted.com Registered & Protected

No comments:

Post a Comment