"বুদু চিরকানি"
"আলীম খান"
সটান চলে এলাম পড়ার ঘরে । প্রাইভেট স্যার এখনও আসেননি, হয়ত কোনো প্রাইভেট কাজে বাইরে গেছেন । খানিকক্ষণ বাদে চাম্পু এসে গেল । ওর সাথে হাঁদাভোঁদা বুদুটাও এসেছে । হঠাৎ চাম্পু প্যান্টের পকেট থেকে একটা আচারের প্যাকেট বের করল, তেঁতুলের আচার । আর আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেতে লাগল । আমি বললাম, "একটু দে ভাই চাম্পু !"
একটু পরে এক এক করে সবাই চলে এল । স্যারও এসে গেলেন । আমাদের পড়াশোনা শুরু হল। স্যার দাঁতে দাঁত চেপে নেঁকো সুরে বললেন, "যার যার পড়া হয়নি, সে সে ওইখানটাই গিয়ে কান ধরে উঠবোস করগে যা !"
কিন্তু আমরা কেউই সেইখানটাই গেলাম না, যেইখানটাই স্যার আঙুল দেখিয়ে দিলেন । সবাই নিজের নিজের পড়া করতে লাগল । আমিও পড়তে লাগলাম । হঠাৎ স্যার আবার বলে উঠলেন, "পড়া ধরবো আর না পারলে একটা করে কানমোলা, আর একটা করে গাঁট্টা । কোনো অজুহাত চলবে না । "
আমরা আরও যত্ন করে পড়তে লাগলাম । কোন আহম্মকই বা স্যারের গাঁট্টা খেতে চাইবে । চার চারটে আঙুলে মোটা মোটা পাথরের আংটী পড়া মুঠো হাতের গাঁট্টা যে খেয়েছে সেই বুঝেছে, আর যে খাবে সেই টের পাবে । গাঁট্টা মেরে শুধু বাবার কেন, বাবারও বাবার এমনকি চোদ্দগুষ্টির নাম ভুলিয়ে দেয় আরকি !
আমার পাশে বসে চাম্পু হেলেদুলে পড়ছে । আর আমাকে দেখে ফ্যাঁকফ্যাঁক করে হাসছে । ওর এই রকম শয়তানি হাসিটা আমার একদম ভালো লাগে না । ওর ধারণা আজ আমার টাকে গাঁট্টা বসবেই, কিন্তু কার কপাল খারাপ সেটাতো সময়ই বলবে । যাইহোক পড়া চলতে থাকল । চাম্পুর ডান পাশে ল্যাল-বুদুটা বসে আছে । বুদু কোনো রকম শব্দ না করে বইটার দিকে তাকিয়ে কেমন একটা করছে, মনে হচ্ছে যেন ওর কোনো কষ্ট হচ্ছে । ভাবলাম একবার জিজ্ঞেস করি ! না ! না ! ওর ব্যাপারে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই । বরং আমার নিজের পড়াটাই করা উচিৎ । তা নাহলে কানমোলা আর রামগাঁট্টা খেতে হবে । ওরে বাবা, সর্বনাশ !
এইভাবেই কয়েক মিনিট কেটে গেল । পড়াটা বেশ হয়ে এসেছে, আর দুইখানা লাইন মুখস্থ করে নিলেই হয়ে যাবে । আমি মন দিয়ে পড়ছি ঠিক তখনই ফড়াৎ করে কি একটা শব্দ হল । শব্দটা স্পষ্ট সকলের কানে গেল কিন্তু শব্দের বিশ্লেষণ করা গেল না । পড়ার খুব হৈ চৈ কিনা !
"অ্যাঁ.. ছিঁ.." চাম্পু নাকে হাত দিয়ে বলল, "কি গন্ধ, মাগো ! বাবাগো ! স্যারগো !" -এই বলে একবার ওয়াক্ করল । স্যার বললেন, "চাম্পু ! কি হয়েছে বাবা, ওরকম কর কেন ? পেটে গ্যাস হয়েছে নাকি ?"
চাম্পু বলল, "না স্যার, কি রকম একটা বিশ্রী গন্ধ পাচ্ছি স্যার !"
"কিসের গন্ধ !" - এই কথা টা বলতে গিয়েই মুখখানা বেঁকিয়ে স্যার চিৎকার করতে লাগলেন, "ওরে বাবা রে ! কি ভয়ঙ্কর গ্যাস ! কোথা থেকে রে ! ওরে বমি করে দেবো ! ওরে হার্টফেল করে দেবো । ওরে গেলাম রে !" - এইবলে স্যার নিজের আসন ছেড়ে উঠে পড়লেন আর সোনা ব্যাঙের মতো একলাফে ঐ দূরে সবেদা গাছটার কাছে গিয়ে পড়লেন ।
দুর্গন্ধের উৎস সন্ধানে সকলে ব্যস্ত । এদিকে চাম্পু তার নাক দিয়ে শুঁকতে শুঁকতে গ্যাসের উৎস খুঁজতে লাগল । তারপর স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল, "গ্যাস এইখান থেকে আসছে স্যার ! " -এই বলে আঙুল দিয়ে বুদুর পিছনে প্যান্টের দিকে দেখিয়ে দিল । সঙ্গে সঙ্গে বুদুর মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে টাইপের হয়ে গেল । মনে হচ্ছে যেন কোনো কঠিন অপরাধ করে বসেছে । ভ্যাবাচাকা খাওয়ার মতো হয়ে বুদু বলল, "না ! না ! আমি কিছু করিনি স্যার ! আমি কিছু করিনি !"
স্যার বললেন, "তো বাবা , কিছু করোনি যদি তবে ওরকম করছ কেন !"
স্যার ওই সবেদা গাছটার ওখান থেকেই জিজ্ঞেস করলেন, "কি খেয়েছিলি বাবা বুদু ! এমন কিই বা খেলি যে এইভাবে প্যান্টে চিরকিয়ে দিলি !"
চাম্পুর এমন আচরণে বুদুর চোখমুখ রাগে লাল হয়ে গেল । বুদু রাগে গজগজ করছে, ঠিক এমন সময় চাম্পু আবার পেনের খোঁচা মারতে গেল । বুদু আর সহ্য করতে পারল না । বুদু চিৎকার করে বলল, "স্যার ! তেঁতুলের আচারটা খাওয়ার পর থেকেই পেটটা গুঁড়গুঁড় করতে লাগল । আমি খেতে চাইনি স্যার, চাম্পু আমাকে জোর করে খাইয়েছে । আর সেইজন্যেই এসব হয়ে গেল ।"
চাম্পু থতমত খেয়ে না না বলতে যাচ্ছিল, ফট করে আমি বললাম, "হ্যাঁ স্যার আমি নিজের চোখে দেখেছি । চাম্পুই বুদুকে জোর করে আচার টা খাওয়ালো । আমি চাইলাম তো আমাকে একটুও দিল না !" স্যার এমনভাবে চাম্পুকে দেখতে লাগল যেন আজই চাম্পুর শেষ দিন । স্যার দাঁতে দাঁত পিষতে লাগল । আমরা সবাই চুপ । আমরা বুঝতেই পারলাম যে স্যার কিছু একটা অঘটন ঘটিয়েই ছাড়বেন ।
স্যার চাম্পুকে নিজের কাছে ডাকলেন । অবলা পোষ্যের মতো চাম্পু স্যারের কাছে গিয়ে হাজির হল । স্যার এক মুহুর্ত দেরি না করে চাম্পুর একটা কান ধরে এক পাঁক ঘুরিয়ে দেওয়ার পর টকাটক দুটো গাঁট্টা বসিয়ে দিলেন । গাঁট্টা খেয়ে চাম্পু চুপচাপ নিজের জায়গায় এসে বসে পড়ল । চাম্পু আর হাসলও না আর কোনো কথাও বলল না শুধু বইটার দিকে তাকিয়ে থাকল ।
স্যার বললেন, "অ্যাঁই বুদু ! ব্যাগপত্তর নিয়ে এক ছুটে বাড়ী যা । আজকে তোকে আর পড়তে হবে না । পড়ে একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছো !"
বুদুও বিলম্ব না করে বইপত্তর গুটিয়ে ব্যাগটা নিয়ে দৌড় দিল । কেউ কেউ পড়া পারল আবার কেউ কেউ পারল না । কিন্তু স্যারের কানমোলা আর রামগাঁট্টা শুধু একজনকেই ভোগ করতে হল । বেচারা চাম্পু !! 😓😓😟
No comments:
Post a Comment