" কাকের ভাষা, খাসা নাকি কোণঠাসা "
আলীম খান
একেবারে কয়েক হাত দূরেই একটা গাছের ছাওয়া দেখে সেখানে গিয়ে একটা বড়ো পাথর দেখতে পেয়ে সেটার উপর বসে পড়লাম । বসে বসে দূরে সড়কের উপর যানবাহন চলাচলের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে লাগলাম । আমার পায়ের কাছে কয়েকটা ছাগলছানাকে খেলা করতে দেখে খুব ভালো লাগছিল । হঠাৎ একটা কটু শব্দ ঘ্যাঁচাৎ করে সোজা কানে এসে ধাক্কা দিল, যেটা মোটেই আমার ভালো লাগল না । প্রথমে একবার শব্দটা কানে আসে, তার একটুখানি বাদে সেই কর্কশ শব্দটা কানের বারোটা বাজাতে শুরু করে দিল । আর সেই শব্দটা ঠিক এইরকম,
অর্থাৎ একটা কাক ঠিক আমার মাথার উপরে ওই গাছটার ডালে বসে এক নাগাড়ে কাঁ-কাঁ করে চিৎকার করেই চলেছে, থামবার নামই নেয় না । কেন উনি চেঁচাচ্ছেন তা জানার জো নেই, তবে এতটুকু বুঝতে পারছিলাম যে এখানে আমার বসে থাকাটা বাবুর পছন্দ হচ্ছে না, এই আরকি !
তা কাকবাবু ! এটা কি তোমার বাপের জায়গা । তোমার বাবা কি এটা তোমাকে রেজিষ্টার করে দিয়ে গেছে । গরম লাগছিল বলেই কিনা একটু ছাওয়াতে জিরিয়ে নিতে এসেছি ! একটু বসেছি, তাতে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল বাপু ! তুমি তোমার গাছে আছো , আর আমি নিচে রয়েছি । এর মধ্যে অন্যায়টা কি করলাম, মশায় !
তৎক্ষণাৎ কাক'টা জবাবে বলল,
আমি খুব আপসেট হলাম । একটা কাক'কে প্রশ্ন করাটাই আমার সদর-ঘাট হয়েছে । আমিও জেদ ধরলাম, ব্যাটা যত চেঁচাবে চেঁচাক আমি এখান থেকে এক কদমও হিলছি না ।
হঠাৎ চিৎকারের মাত্রা অনেকটা বেড়ে গেল ।
গাছের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কাক ডবল, মানে দুটো কাক একসাথে বেঘোরে কাঁ - কাঁ করছে !
আমি বললাম, "ব্যাটা, দল ভারী করছো । তাতে কোনো লাভ হবে না ।"
আমি রেগেমেগে ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করতে লাগলাম । এতে কাক দুটো আরো জোরে সুর চড়ালো ।
আমিও দাঁত খিঁচিয়ে বললাম, "ব্যাটা, ক্যামেরা ছুড়ে মেরে দেবো, রাগাস্ না, মাথা খারাপ করাস না ।"
এই বলে ক্যামেরাটা ছোড়ার ক্যালি দেখালাম । ব্যাটা দুজনায় চমকে গেল । এক মুহুর্তের জন্য কাঁ কাঁ বন্ধ হল ।
এত সব কিছু সহ্য করার পরও বসে আছি , ঠিক এমন সময় আমার একেবারে পায়ের কাছে কি একটা ধপ করে পড়ল । ভালো করে দেখতেই আমার মাথাই হাত । যেটা ধপ করে পড়ল সেটা আর কিছু না, ওটা আসলে কাকের হাগা । কাকের সাহস বলহারি !
মাথা উঁচিয়ে দেখলাম, একটা কাক ঠিক মাথার উপর থেকে আমাকে ঠুঁ মেরে দেখছে । কাক তার টারগেট মিস করেছে । ভাগ্যিস মিস করল, না হলে আমার গেটআপ'টাই চেঞ্জ হয়ে যেত । আমি চটপট উঠে দাঁড়ালাম । গালাগাল দিতে ইচ্ছে করল, কিন্তু লাভ হবে কী ! গালাগাল গুলো ওরা বুঝতে পারবে তো ! নাকি শুধু শুধু শব্দদূষণই করা হবে ।
আমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললাম, "আরে বাবা, তোদের আস্তানা দখল করতে আসিনি । সত্যি তোরা অদ্ভুত, তোদের মধ্যে এতটুকুও সহনশীলতা নেই ! তোদের বাবা-মা তোদের কি শিক্ষা দিয়েছে কে জানে !"
এতক্ষণ কাক দুটো আমার কথাগুলো চুপচাপ কান লাগিয়ে শুনছিল । তারপর দুজনায় একসাথে উত্তর দিল । উত্তর'টা ঠিক এইরকম -
-"কাঁ কাঁ ... কাঁ-কাঁ-কাঁ.... কাঁ কাঁ কাঁ ...
কি যে বলল কিছুই বুঝতে পারলাম না । মাথার চুল ছেঁড়ার মতো অবস্থা । ব্যাপারখানা বোঝার জন্য চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাকদুটোকে আর গাছটাকে দেখতে লাগলাম । হঠাৎ একটা পাখির বাসা আবিস্কার করলাম । পাখির বাসা মানে কাকের বাসা ।
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম যে, সমস্ত ঝঞ্ঝাটের মূল উৎস হল এই কাকের বাসা । নিশ্চয় বাসাতে কাকের ডিম রয়েছে । আর তার রক্ষার জন্য কাকের এত লড়াই, এত সংগ্রাম , এত লম্ফ ঝম্ফ ।
আমি বললাম, "ভাই, তোমাদের কথা এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি ।"
আমি তড়িঘড়ি ওখান থেকে অনেকটা দূরে চলে এলাম । তারপর কাক আর কাঁ-কাঁ করল না । সবই ঈশ্বরের দোষ । তিনি মানুষদের হাজার হাজার ভাষা দিয়েছেন, আর কাকের বেলা খালি ওই একটাই ভাষা' - "কাঁ.. কাঁ.. কাঁ-কাঁ-কাঁ.. কাঁ কাঁ কাঁ কাঁ কাঁ-কাঁ-কাঁ..." ।।
No comments:
Post a Comment