বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Sunday, 28 January 2018

গিরগিটির খপ্পরে / ঝন্টু ও ঝঞ্ঝাট' সিরিজের গল্প / ছোটোদের গল্প / শিশুসাহিত্য

 

গিরগিটির  খপ্পরে

আলীম খান


          শনিবার দিন    স্কুল  হাফবেলা ছুটি  হয়ে  যায় ।    আজ  শনিবার   তাই   হাফবেলায়  ছুটি হয়ে গেল ।
  সব ছেলেমেয়েরা  নিজের নিজের  তল্পিতল্পা নিয়ে  যে যার   বাড়ীর দিকে দৌড় দিল ।
  ঝন্টুও   তার ভারী ব্যাগখানা  পিঠে নিয়ে  রওনা দিল বাড়ীর উদ্দেশ্যে ।    ঝন্টুর বন্ধু পটা    আজ স্কুলে গ্যাপ দিয়েছে,
  তাই  ঝন্টুর মন খারাপ,    তাকে একা একা বাড়ী ফিরতে হবে ।    আজ  অঙ্কের ক্লাসে  সবকটা অঙ্ক  ঠিক করাই স্যারের বাহবা পেয়েছে,
    তাই মনের আনন্দে শিস্  বাজাতে  বাজাতে  বাড়ীর দিকে হেঁটে চলেছে ঝন্টু ।     তারপর  আবার   বিকেল বেলায়
  পগারের ছেলেদের সাথে ক্রিকেট ম্যাচ আছে ।    সুতরাং   ঝন্টু আজ খুব  উৎসাহিত । 

          হাঁটতে হাঁটতে কখন যে আধেক পথ চলে এসেছে   তা বোঝায় গেল না ।   পথ চলার সময়  এদিক ওদিক   না দেখলে তার একদমই চলে না ।
   রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়  আশেপাশের লোকজন   কি করছে না করছে,   এরকম যতসব ছাইপাস দেখা ঝন্টুর   স্বভাবদোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
     তবে মাঝেমধ্যে অবশ্য রাস্তার পীঠস্থলের  দিকেও নজর রাখতে হয়    আর  তা  নাহলে   হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায় ।  কারণ রাস্তায়  যেখানে সেখানে  খাল, গর্ত-টর্ত     আর   ইঁট-পাথর তো  পড়ে রয়েছেই । 

         একদিন হয়েছিল কি   ঝন্টু  একেবারে ঠিক হারুর চায়ের দোকানের সামনেই হোঁচট খায়,   একখানা  আধলা ইঁটে  পা লেগে যায়   আর তারপর ব্যালেন্স করতে পারিনি  সে ।
   ব্যাস্   ওমনি চিৎপটাং !   আর তা দেখে  চায়ের দোকানের সব কটা লোক    ফ্যাঁকফ্যাঁক করে হেসেছিল । 
       "আহা ! কোথাও লাগেনি তো বাবা !"    
  কোথায় না এরকমটা বলে একটু সহানুভূতি দেবে,      তা না করে   লোকগুলোকে ফ্যাঁকফ্যাঁক করে    
  খ্যাঁকখ্যাঁক করে   হাসতে দেখে   ঝন্টুর   খুব  রাগও হয়েছিল  সেদিন । 

       আর ঠিক সেই কারণে  ঝন্টু বরাবর রাস্তা দেখে চলাফেরা করে । 
  গাছপালা পশুপাখি দেখতে দেখতে ঝন্টুর চোখ গেল একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে ।
 গাছটাকে  দেখতে দেখতে   ঝন্টু  ভাবখেয়ালি হটখেয়ালি  হয়ে পড়ল ।   মনে মনে বলতে লাগল,
   "আহা ! কি সুন্দর, কি দারুণ ফুল ফুটেছে !   লাল রঙের ফুল ও সবুজ রঙের পাতা  মিলেমিশে গাছটাকে কি অপূর্বই না লাগছে । 
  যেন প্রকান্ড এক  রঙিন ছাতা । "
 গাছের ছাওয়ায়  খুব ঠান্ডা   ও মনোরম । 
  তাই ঝন্টু গাছের ছাওয়ায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল,  ঠান্ডা ছাওয়ায় মনোরম আমেজকে উপভোগ করতে লাগল । 

        কিন্তু  হঠাৎ একটা জিনিসের দিকে চোখ পড়তেই   ঝন্টুর সমস্ত আনন্দ উল্লাস উচ্ছ্বাস   এক নিমেষে কোথায় যেন ফুরুৎ করে  উড়ে পালিয়ে  গেল ।
 মুখের মধ্যে আশঙ্ক্ষার ছাপ পরিস্কার দেখা দিল    যেন তার চোখ দুটো   অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে ।
      গাছের প্রকান্ড গুড়িটার ঠিক মাঝখানটাতে ওটা কি !   
  ভালো করে দেখতেই   ঝন্টু পরিস্কার বুঝতে পারল   যেমনটা সে আশা করেছিল ঠিক তাই ।
    ওটা একটা গিরগিটি !  
    চোখ পাকিয়ে ফ্যালফ্যাল করে   ঝন্টুর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে  ।     ঝন্টু ভয় পেল ।      
ভীত  ক্ষিপ্ত  হয়ে  ঝন্টু হাত দিয়ে তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলল,
  " হেঁই ! হেঁই !   যা !  যা ! "
কিন্তু ঝন্টুর রোষের প্রতি বিন্দুমাত্র  কর্ণপাত করল না গিরগিটিটা ।
   সে যেন  আরও বেশি বেশি করে  চোখ পাকাতে লাগল
 আর মাঝেমাঝে দুএকবার মুন্ডুটা  উপরনীচ করে  হুমকি দিতে লাগল ।
যেন বলতে লাগল,

তোকে এবার বাঁচাবে কে !
 কে বাঁচাবে তোকে !

হাপিস করে দেবো ! 
সব চালাকি  বের করে দেবো !

         ঝন্টুর হূঁশ যায় যায় আরকি !  মুহুর্তের মধ্যে মনে পড়ে গেল  গত পরশু দিনের  সেই  হরিবল্ ঘটনা ।
  পরিস্কার চোখের সামনে  ভেসে  উঠল  সদ্য ঘটে যাওয়া সেই বুক কাঁপানো  বিষয়টা । 
  তাহলে কি আনোয়ার ঠিকই বলেছিল আমিই ভুল ছিলাম,   এমনটাই ভাবতে লাগল  ঝন্টু ।

        সেদিন  ঝন্টু  তার চোখের  সামনে  একটা জ্যান্ত গিরগিটিকে মরতে দেখেছে ।
ওই অবলা প্রাণীটার গলায় ফাঁস লাগিয়ে ল্যাম্পপোষ্টে  টাঙিয়ে দিয়েছিল  বেলতলার  আনোয়ার ।
 পটকিয়ে পটকিয়ে মেরেছিল অসহায় নিরীহ জীবটাকে ।   ঝন্টু প্রতিবাদ করেছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়নি ।
   গিরগিটিটার প্রাণ বাঁচাতে পারেনি সে । 

      আনোয়ার  ঝন্টুর থেকে বয়সে অনেক বড়  এবং  দেহাকারে ঝন্টুর ডবল । 
  তাই   প্রতিবাদী ঝন্টুর  বিদ্রোহ, সংগ্রাম   আর  লড়াই    ধোপে টেঁকেনি,
  সবটাই মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছিল  তাঁকে ।

    সেদিন আনোয়ার বুক ফুলিয়ে  জোর গলায়  বলল  "ওকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করিলাম ।
 ওর উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে,   ওকে  আমার  রক্তের দাম দিতে হয়েছে । "

      এসব কথার কিছুই ঝন্টু বুঝতে উঠতে পারে নি ।
  ঝন্টু  জিজ্ঞেস করল,  রক্তের দাম মানে !
 তুমি কিসব বলছ  আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
 তুমি শুধু শুধু গিরগিটি টাকে মেরে ফেললে,  ও  তোমার কি দোষ   করেছিল । 

আনোয়ার  একেবারে  কটমট কড়মড়  করে  উঠেছিল   ঝন্টুর উপর ।
   বলল  দোষ মানে,  চরম অপরাধ করেছে  এই গিরগিটি ! এই শয়তান !
 এ আমার রক্ত খেয়েছে ।    আমার রক্ত কি    সস্তা নাকি !

   ঝন্টু অবাক হয়ে বলল,  ও কি তোমাকে কামড়েছে !

- আরে  না  না !   ও কি কামড়াবে !  ওর বাপের সাধ্য নাই   আমাকে কামড়ানোর !
 - তাহলে,   জিজ্ঞাসু হয়ে  ঝন্টু বলল ।

- তুই তো দেখছি কিছুই জানিস না রে ঝন্টু ! এই জন্যই বলি আড্ডায় একটু আধটু বসবি ।
  ঘরে বসে থাকলে চলবে কি করে,   তুই যে বড় হচ্ছিস, 
তোর  এসব জানা উচিত !  এগুলো স্কুলে শেখাবে না,  বুঝলি ।   তাই বলছি মাঠের আড্ডায় আসবি,
   তোর জ্ঞান বাড়বে,   আনোয়ার বলল ।  

   ঝন্টু উত্তরে  হ্যাঁ বা না কিছুই বলে নি,  খালি ফ্যালফ্যাল করে  আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে ছিল  আর কিছুটা  ভাবুক  হয়ে পড়েছিল ।  
আনোয়ার বলল,  বুঝতে পারলি না  তো !    শোন তবে    পুরো বিষয়টা   তোকে খুলে বলি ।    

      আনোয়ার  ঝন্টু কে যা যা বলেছিল  তা  ঠিক  এইরকম :

      দুপুরে পেট পুরে খেয়ে দেয়ে  আনোয়ার তখন     মাঠের এক ধারের ওই  উঁচুমত ঢিবিটাতে    হাত দুটোকে বালিশের মতো ভাঁজ করে
    তাতে মাথাটা এলিয়ে  দিয়ে  শুয়ে শুয়ে  একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল ।    পকেটে  ভাজা  মটর  নিয়ে এসেছিল,
     কুটুর কুটুর করে ওই মটর  চিবোচ্ছিল ।    এমন সময় সে অনুভব করল যে তার শরীর টা গরম হয়ে আসছে ।
   হাত দুটো চিন্ চিন্ করছে ।   মাথা ঘুরছে,  হাত দুটো অবশ হয়ে আসছে ।
   কিন্তু কেন !

       হঠাৎ কেন এরকম হতে লাগল   তা কিছুতেই আনোয়ার বুঝতে পারছিল না । 
তার মনে হল কেউ যেন তার শরীরের বহুমূল্য রক্ত চঁ চঁ করে টেনে নিচ্ছে । 
 সে সামনের দিকে, ডানদিকে, বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখল   কিন্তু কোনোকিছুই দেখতে পেল না ।

   এবার পিছন দিকে ঘুরতেই সে যা দেখল তাতে আনোয়ারের মাথার
ঘিলুটা গব্ গব্ করতে লাগল ।   কারন পাশেই  শুকিয়ে যাওয়া ন্যাড়া আকন্দ গাছটার একেবারে মগডালে একটা গিরগিটি ।
  আর সেটা স্থিরভাবে একদৃষ্টিতে আনোয়ারকে  দেখছে ।  গিরগিটি তার মুন্ডুটা উপরনীচ করে চলেছে ।
 এমন সময় তার ধূসর গলাটা  টকটকে লাল রঙে  পরিবর্তিত হতে লাগল ।
  আনোয়ারের  বুঝতে  আর  দেরি হল না যে      এই  শয়তান গিরগিটিটাই তার রক্ত চুষে খাচ্ছে ।
  বিলম্ব না করে   আনোয়ার   একটা ঢিল ছুঁড়ে দিল শয়তানটার দিকে । 
  দুর্দান্ত টিপ তার,   এক  ঢিলেই    গিরগিটি ভ্যাট ।

     ঝন্টু চোখের পাতা এক করল ।   তারপর যা যা ঘটেছে সবই   তার নিজের চোখে দেখা । 
এসব দেখে শুনে ঝন্টু হতভম্ব হয়ে পড়েছিল কারণ এর আগে সে এরকম
কিছু বাপের কালে দেখেওনি আর শোনেওনি ।   পুরো বিষয়টাই তার কাছে গাঁজাখুরি মনে হয়েছিল ।
  কারন ঝন্টু জানত    আনোয়ার কিসব আজেবাজে ছাইপাশ খাই,  নেশা করে । 
 ঝন্টু অনেকবার দেখেছে মাঠের পাশের কচুবন টাই ভোঁস ভোঁস করে কি সব টানতে  আর   ধোঁয়া ছাড়তে ।  
হয়ত তখনও সে নেশা করেছিল,  হতেও তো পারে ।

        সেদিনের এই  ঘটনাটা   ঝন্টুর মাথার চারধারে চক্রাকারে ঘুরপাক খেতে লাগল ।   সেই ভয়ঙ্কর হত্যালীলা
  চলচ্চিত্রের ন্যায়  তার চোখের সামনে ফ্ল্যাশব্যাক  হতে লাগল ।    হঠাৎ ঝন্টু  সেই ভাব জগৎ   থেকে  ইহজগতে ফিরলো ।
 হুঁশ ফিরতেই ঝন্টু দেখতে চাইল যে    কৃষ্ণচূড়া গাছটিতে গিরগিটিটা  রয়েছে কিনা ।
 হ্যাঁ ওটা ঠিক তার আগের জায়গাতেই  রয়েছে  আর  সেটা স্থিরদৃষ্টিতে ঝন্টুর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
  এবার ঝন্টু পুরোপুরি  ভীতিগ্রস্থ  হয়ে পড়ল ।

 সেদিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে ।   এবার শিকার আনোয়ার নয়      স্বয়ং  ঝন্টু ।
এই আশঙ্কায় ঝন্টুর মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিল ।   তাহলে কি এবার ঝন্টুর পালা ।

    কিন্তু সেদিন তো  আনোয়ার গিরগিটি টাকে মেরে ফেলেছিল ।   এটা কি অন্য গিরগিটি,   নাকি  ওটাই ।
 এই চিন্তা মাথায় আসতেই  সে হকচকিয়ে গেল ।   কারণ  সেদিনের হত্যাকান্ড  ঘটেছিল ঠিক এই জায়গায়,
   তবে কয়েক গজ দূরে  আর  ওই ল্যাম্পপোষ্টে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল ।  
আরে  এই তো ল্যাম্পপোষ্ট,  ঝন্টু পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে ।
  কিন্তু যেই জিনিসটা সে দেখতে চেয়েছিল
  সেটা কিন্তু ওই ল্যাম্পপোষ্টে ছিলনা ।
   মানে  গিরগিটি উধাও । 

     ঝন্টুর চোখে মুখে এক মহাশঙ্কার ছাপ ।    সে আবার গাছটার দিকে তাকালো ।   এবার যা দেখল তাতে ঝন্টুর গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল ।
 গিরগিটিটা ভয়ঙ্কর আকার   ধারণ করেছে,  রোগা পাতলা গিরগিটিটা কুনো ব্যাঙের মতো ফুলে গেছে ।
 তা দেখে  ঝন্টুর  শ্বাস প্রশ্বাস ওটানামা করতে লাগল,   হাঁপানি  হলে যেমনটা হয় ।
ঝন্টুর গলা শুকিয়ে কাঠ ।   কি করবে বুঝতে পারছে না ।    এবার   ঝন্টু পরিস্কার দেখল গিরগিটি  তার  গায়ের  রঙ  পাল্টাচ্ছে,
   গলা থেকে ঘাড় অবধি টকটকে   লাল হয়ে গেছে আর  চোখগুলো ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে  তীরের ফলার মতো । 

      এসব দেখে ঝন্টুর শরীরটা  অসাড় হয়ে  গেল ।    মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরতে লাগল ।   গা গুলোতে লাগল,   পা দুটো নিজেথেকেই  কাঁপতে লাগল ।
 ঝন্টু মনে মনে ভাবতে লাগল,   তার মানে  আনোয়ার ঠিকই বলেছিল ।    সত্যি সত্যিই গিরগিটি  মানুষের রক্ত চুষে খায় ।
 এটাই  সেই শয়তান  গিরগিটিটা,  আবার জ্যান্ত হয়ে গেছে ।  ওরা কখনও  মরে না,  ওরা শুধু  মারে ।
   ও  শিকার করতে বেরিয়েছে,   মানুষ শিকার ।

 না না কিছু একটা করতেই হবে ।
 নাহলে যে  অকালে প্রাণটা যাবে । 

     রাগ ভয় ক্রোধ মিলে মিশে  ঝন্টুর মধ্যে  এক অদ্ভুত রকমের  পরিবর্তন দেখা গেল ।    সহজ  সরল  ঝন্টু    এখন যেন এক হিংস্র জীব । 
 ক্ষিপ্ত ঝন্টু কি যেন খুঁজতে শুরু করে দিল ।     ঝন্টু  পাথর  ঢেলা খুঁজতে লাগল ।   সে একটা ইঁটের টুকরো হাতে নিয়ে
সজোরে ছুড়ে দিল গিরগিটিটাকে লক্ষ্য করে ।    কিন্তু তাতে কোনো লাভ হল না ।   গিরগিটি  অক্ষত   তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি ।
 আবার ঝন্টু কয়েকটা ইঁটের ঢেলা হাতে তুলে নিল আর একটার পর একটা ছুঁড়তে লাগল ।   একটা ঢিল  মনে হল তার লেজে  লেগেছে
 কারণ   ফুরুৎ করে গিরগিটিটা  কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেল । 

    ঝন্টু ভাবল,  গিরগিটি ভয়ে পেয়েছে  তার কাছে হার মেনেছে,   তাই ল্যাজ গুটিয়ে ধাঁ ।    তার জয় হয়েছে  আর  শয়তানের পরাজয় ।
   নিজের উপর  তার  গর্ব হতে লাগল ।

      কিন্তু না,  পরক্ষণেই ঝন্টুর সমস্ত গর্ব    মাটি ধুলো বালি ছাই    হল । 
    গিরিগিটি আবার ফিরে এসেছে ।   ও পালায় নি,
  ও  ভয় পায়নি ।      এবার একেবারে  ঝন্টুর সম্মুখে এসে  মুন্ডুটাকে লাগাতার উপর-নীচ করতে লাগল ।
   এবার বোধ হয় চরম কিছু ঘটবে,  শয়তান তার   শেষ চেষ্টা চালাচ্ছে ।

       ঝন্টুর শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগল ।   ঝন্টুর মনে সংশয়,  এখানে থাকলে  তার  প্রাণনাশ  ঘটবেই ঘটবে ।
  শয়তান গিরগিটিটার সাথে   সে পেরে উঠবে না  কারণ গিরগিটির  ক্ষমতা  অপার ।    শেষমেষ নিজের প্রাণটাই যাবে ।
   কিন্তু ঝন্টুকে  কিছু একটা করতেই  হবে,  আর তা নাহলে...
   ঝন্টু আর ভাবতে পারল না । 

   বেগতিক দেখে ঝন্টু দৌড় লাগালো ।   পিছন ফিরে তাকানোর সময় নেই ।    কাধেঁ ভারী ব্যাগ আর পায়ে চপ্পল  তা সত্ত্বেও  ঝন্টু দৌড়চ্ছে ।
 রাস্তার ধারে সারি সারি শিশু গাছগুলো পিছনে ফেলে এগিয়ে চলল সে ।   শংকরদের  বাঁশবনটাও  পার হল সে ।   কিন্তু তার দৌড় আর  থামল না ।
প্রাণ বাঁচাবার তাগিদে   প্রাণ হাতে নিয়ে   সে দৌড়চ্ছে ।    আজ  কোনো বাঁধা  তাকে  আঁটকাতে পারবে না ।

 কোথাও কেউ নেই ।   ভরদুপুর রাস্তাঘাট ফাঁকা । 
এই সময় ঝন্টু  পটাকে খুব মিস করতে লাগল ।   পটা  থাকলে  হয়ত  এই অবস্থা হত না ।   আজ সে বড় একা । 
  চপ্পল পরে ভালো করে দৌড়তে পারছে না,   স্লিপ কাটছে ।    হঠাৎ সে রাস্তায় পড়ে গেল  হাতটা আর হাঁটুটা  একটু ছোঁড়ে গেল,
   একটা  চপ্পলের  ফিতে  খুলে গেল ।    তার ওপর ভারী ব্যাগটা পিঠের উপর  ধড়াস্ ধড়াস্ করে আছড়ে পড়ছে,  ব্যথা হচ্ছে ।
   কিন্তু তাতে কি !
 আজ ঝন্টুকে  এই টুকু কষ্ট   সহ্য করতেই হবে    নাহলে অকালে প্রাণটা খোয়াতে হবে ।    পায়ের জুতোজোড়া  সে  বাঁহাতে নিল
  আর ডান হাতটা  বাঁকিয়ে ব্যাগটাকে চেপে ধরল ।
  ব্যস্ তারপর আবার দৌড়তে শুরু করল ।    আর বেশি পথ নেই ।    সামনেই  হারুর চায়ের দোকান,
   সেখানে পৌঁছতে পারলেই হল ।   একটা গভীর দৃঢ়  শ্বাস নিয়ে এক  দমে  ছুট দিল,
  একবারের জন্যও সে পিছন ফিরে  তাকালো  না ।
  আর একটু...    আর একটু...    আর একটু...

   ব্যস্ আর না !

   ঝন্টু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ।   সে এখন হারুর চায়ের দোকানের সামনে এসে পড়েছে ।
  আর চিন্তা নেই,  বিপদ কেটে গেছে ।   চাওয়ালা হারু  ঝন্টুকে হাঁপাতে দেখে জিজ্ঞাসু হয়ে  বলল,
 " কিরে রে ব্যাটা  কি হয়েছে ।   দৌড়াচ্ছিলি কেন বাবা !  রাস্তা  দেখে চল্ ব্যাটা
নাহলে সেদিনকার মতো আবার হোঁচট খাবি যে ! "

      ঝন্টুর খানিক রাগ হল  কিন্তু   সে  জবাব দিল না ।   আসল কথা হল   ঝন্টু  কথাই  বলতে পারছিল না ।
  ও  হাঁপাতেই  ব্যস্ত ।   বেচারা  ঝন্টু  নির্বাক হয়ে রইল । 
 একমাত্র  ঝন্টুই জানে  যে তার সাথে   কি ঘটতে চলেছিল ।
  আর কেউ  এসব বুঝবে না    কারণ   যার হয়  সেই  বোঝে । 



       পরদিন  সকালে  পটা  ঝন্টুদের বাড়ীতে  এসেছে  ঘুড়ি উড়োতে ।   ঝন্টু  আগের দিনের সমস্ত  ঘটনাটা পটাকে বলল । 
কিভাবে সে  শয়তান  গিরগিটির হাত থেকে নিজের প্রাণ  বাঁচিয়েছে ।    সব শুনে  পটার  চোখদুটো বিস্ফারিত হয়ে গেল  আর  মুখটা  হাঁ  হয়ে  রইল ।
পটা  ঝন্টুর  পিঠে হাল্কা  চাঁপড়  দিয়ে  ঝন্টুকে  তার সাহসিকতার জন্য সাবাসী  দিল । 
 তারপর  দুজনাতে  বাড়ীর ছাদের  একধারে ঘুড়ি উড়োতে  ব্যস্ত  হয়ে পড়ল । 
 ছাদের অন্য ধারে   ঝন্টুর  ছোটো কাকা  ব্যায়াম আর  কসরত  করছিল ।

 এমন সময় ঝন্টু  হঠাৎ  আঁতকে  উঠল ।
 সে কি যেন একটা দেখেছে  ।   ছাদে ওঠা সিঁড়িঘরের  কার্ণিসে  ওটা কি !
টিকটিকি...  না ওটা  টিকটিকি  নয়  ।  টিকটিকি তো  ওভাবে মাথাটা  দুলোয়  না  ।   চোখ  পাকিয়ে  একভাবে  ঝন্টুর দিকেই তাকিয়ে  আছে ।  এটা  সেই শয়তান  গিরগিটি টা ।   রক্তচোষা   গিরগিটি  ।   সে  আবার  রক্ত  খেতে  এসেছে,  শরীরের  সমস্ত  রক্ত  চুষে  নিতে  এসেছে । 

    ঝন্টু  প্রচন্ড  ভয়  পেয়ে গেল  ।   গিরগিটিটাকে  মারার জন্য   উদ্যত  হল ।    ছাদের  এককোণে  পড়ে থাকা  কাক তাড়ানো  লাঠিটা  দিয়ে  গিরগিটিটাকে  মারতে  গেল ।

   এমন  সময়  ছোটো কাকা  ঝন্টুকে  থামিয়ে  দিয়ে  বলল,
  একি রে ঝন্টু ।  এ কি  করছিস !  কেন  ওকে  মারতে  চাইছিস্ !
   ওই  নিরীহ  গিরগিটিটা   তোর  কি  দোষ  করল !

    ও  আমার  রক্ত  খেতে  এসেছে,    ঝন্টু  বলল । 
একথা  শুনে  ছোটকা   হো  হো  করে হেসে ফেলল । 
ছোটো কাকাকে  এভাবে হাসতে   দেখে
ঝন্টুর  মুখটা  একেবারে  ফ্যাকাশে  হয়ে  গেল   আর   পটাও  হতভম্ব  । 

  কে বলেছে  ওরা  রক্ত   খায় !  কোন  পাগল ছাগলদের  কাছ থেকে  এসব  শুনেছিস,    কাকা বলল  । 

তাহলে  ওর  গলাটা,  বুকটা  লাল  হয়ে  যায়  কেন !  আর কেনই  বা  আমার  শরীর টা  অবশ  হয়ে  আসছিল,   ঝন্টু বলল ।

     ছোটোকাকা চিন্তিত হল ।   ঝন্টুর এইরকম অপ্রীতিকর ভুল ভ্রান্তি  ভাঙাতেই হবে ।    নাহলে সে বিপজ্জনক কুসংস্কারে ডুবে যাবে । 
  ছোটোকাকা কখনও এমনটা হতে দিতে পারে না ।

   ছোটোকাকা    ঝন্টুকে  বোঝালো  :
গিরগিটি  একপ্রকার  নিরীহ  সরীসৃপ   প্রাণী ।   ওরা মানুষের  রক্ত  খায় না,   ওরা  প্রধানত  কীটপতঙ্গভোজী ।   ওরা  গায়ের  রঙ  পরিবর্তন   করতে পারে,   শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য গায়ের  রঙ পাল্টিয়ে  নিজেকে লুকোনোর চেষ্টা করে । 
 বিশেষ  করে প্রজনন কালে পুরুষ গিরগিটির গলা থেকে পেট অবধি লালচে কালো রঙে পরিবর্তন হয়   এবং   গলা ফুলিয়ে স্ত্রী গিরগিটিকে
আকর্ষিত করে ।   তাছাড়া  শত্রুদের ভয় দেখানোর জন্যও   ওরকম করে থাকে ।

    তবে কি জানিস এক ধরণের গিরগিটি আছে  যারা জল শুষে নেয়  তবে  মুখ দিয়ে নয় পায়ের চামড়ার  মধ্য দিয়ে ।   জলের ওপর পা রাখা মাত্র
কিছুক্ষণের  মধ্যে জল আপনাআপনি  মুখ  পর্যন্ত  চলে  যায় ।   আরও  এক ধরণের  গিরগিটি  আছে  যারা শত্রু নিবারণের   কারনে চোখ  দিয়ে
রক্তের  ফোয়ারা  বের করে   যাতে  শত্রু  ভয় পেয়ে পালিয়ে  যায় । 

    তাই  আবার  বলছি যে    গিরগিটি   মানুষের  রক্ত  চোষে না ।
   আর  তোর শরীরটা  অবশ  হয়ে গেছিল  কারণ   তুই  খুব  পেয়েছিলিস । 
ভয় পেলে  সব  মানুষেরই  গা  গুলোয়,  আবার  অবশ অবশ  ভাব  হয়    বুঝেছিস ।

       ঝন্টু  তার কাকার  সমস্ত  কথা   মন  দিয়ে   শুনল  এবং   বিশ্বাসও  করল ।   কারণ  ছোটোকাকা মিথ্যে কথা  বলে না ।    ছোটোকাকা  সদ্য   বি. এস.সি
অনার্স  কমপ্লিট  করেছে  ।   প্রাণী বিশেষজ্ঞ  না  হলেও   অনেক কিছুই  জানে  ঝন্টুর  ছোটোকাকা ।   লজ্জা পেয়ে  ঝন্টু  এক বার  পটার   দিকে তাকালো
আর তারপর  আকাশে  দিকে তাকিয়ে কেটে যাওয়া   ঘুড়িটা  দেখে  বলে   উঠল,
      ভোঁ কাটা !  ভোঁ কাটা !    প্যাকেট কর্    আর  বেরিয়ে  যা  !





                                               Written  By :-    Aalim  Khan
Copyrighted.com Registered & Protected

No comments:

Post a Comment