বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Wednesday, 14 March 2018

The Gentleman / বাংলা গল্পসল্প' নিবেদিত একটি ছোটোগল্প

"দ্য জ্যেন্টলম্যান"

"আলীম খান"

    প্রবল  গ্রীষ্মের দাবদহে  পৃথিবীপৃষ্ঠ  তখন  এক অদৃশ্য আঁচের তাপে  দাঊ দাঊ  করে জ্বলছে ।   চারিদিক জনমানব শূন্য,  খাঁ খাঁ করছে  রাস্তাঘাট । ভরা দুপুরে সূর্য্যের তাপ  গায়ে ছ্যাঁকা দেয় । শুকনো মাটি  আর  পাকা রাস্তা থেকে গরম ভাব বেরোচ্ছে ।

   একটি বাস স্টপেজে  তখনও কোনো লোক ছিলনা  কিন্তু  হঠাৎ সেখানে একজন বুড়োলোক  এসে হাজির হল । একেই বয়সের দোষ তারওপর গরমের মারে  সে প্রায়  নাজেহাল হয়ে পড়েছে ।  একটু বিশ্রামের  একান্তই প্রয়োজন ।
 তাই সে  স্টপেজের পরিস্কার ঝকঝকে তকতকে সাফসুধরা বসার সীটে  বসে একটু জিরিয়ে নিতে চাইল ।
কোনো বাসের আশায়  তার মাথা ব্যথা নেই ।   পেশায় সে একজন ভিখারী,  সকাল থেকে ভিক্ষা করে করে  দুচার পয়সা উপার্জনও করেছে সে ।  হেঁটে হেঁটে পায়ে খুব ব্যথা ধরেছে । 
প্রচন্ড ক্লান্তি  তাকে  ঝাঁকিয়ে ধরেছিল,  তাই একটু জিরিয়ে নিতেই  কখন যে  ঘুমিয়ে পড়ল   তা সে নিজেই  বুঝতে পারল না ।

   হঠাৎ তার  ঘুম ভেঙে গেল একটা শোরগোলের আওয়াজে ।  যেন তার একেবারে কানের কাছে কেউ বকবক করছে । 
চোখ ফিরিয়ে তাকাতেই  সে দেখল   দুজন আগন্তুক স্টপেজে কথা বলছে নিজেদের মধ্যে   আর  মাঝেমধ্যে হো হো করে হাসছে । 
এতক্ষণ সে  হাত পা ঝোলাটোলা  ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়েছিল ।   কিন্তু অন্যদের আগমনে সে বেশ সচেতন হল,  পোটলাপুটলি সমেত হাত পা গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে  বসল ।

   সে লক্ষ্য করল  আগন্তুক ব্যক্তিরা  শ্যুটবুট পরিহিত  আর  তাদের পাশে রাখা রয়েছে   দামী লেদারের ব্যাগ । 
 বুড়োলোকটা ধারণা করল যে   ঐ  দুজন ভদ্দলোক  কোনো  অফিসটফিসের  চাকুরেজীবি  হবে হয়ত । 

   আসলে তারা দুজনায় একই  বি.ডি.ও.  অফিসের কর্মী ।
তেরো বছরর পরিচিতি রয়েছে তাদের ।  কয়েক বছর একসাথে কাজ করার ফলে তাদের  সম্পর্কটাও বেশ  মধুর এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ।   তাই পাশাপাশিই  বাসা করেছেন বছরখানেক আগে ।
এমনকি   তারা  অফিস যান একই বাসে   আর  অফিস ছুটির পর  একসাথেই বাসায় ফেরেন ।

     স্টপেজে  বসে  দুই ভদ্দলোক  গল্পগুজব করতে লাগল ।   সময়ের বাসটি মিস করেছেন তারা  এবং  পরের  বাসটি  আসতে  প্রায় পনেরো কুড়ি মিনিট দেরি ।
তাছাড়া  আজ  তাদের মোটেও তাড়া নেই ।   কারণ  অফিসের বার্ষিকী দিবসে  আজ  ভালোই আনন্দ উপভোগ করেছেন,  কাজটাজ  কিছুই করতে হয়নি ।   তাছাড়া  খাওয়া দাওয়াও হয়েছে খুব ।  
তবুও অফিসবয়  তাদের হাতে একটি করে খাবারের প্যাকেট  থামিয়ে দিয়েছে । 

   প্যাকেটগুলো হাতে রেখে  তারা পরের বাসটির জন্য  অপেক্ষায়  বসে রইলেন  ।   অবসর দেখে  তারা নানান জাতের গালগল্পে মেতে গেলেন ।
দেশের পিছিয়ে পড়া অর্থনীতির কড়া চর্চা,  নির্লজ্জ রাজনীতির দাম্ভিক সমালোচনা  প্রভৃতি   তাদের গল্পের মূল বিষয়বস্তু  তবে  তর্কবিতর্ক নেই বললেই চলে ।
পাশেই  বসে সেই বুড়োটা বাবুদের  এসব আলোচনাগুলো শুনতে লাগল,   কিছুটা বুঝতে পারল  আর কিছুটা  এক কানে ঢুকে অন্য কান দিয়ে  বেরিয়ে গেল । 

     তারা ঠিক করল যে এইভাবে প্যাকেটখানা হাতে করে বাড়ি না নিয়ে গিয়ে বরং এখানেই  খেয়ে নেবেন । আর  এমনিতেও  পেট ভরেই আছে   তবুও প্যাকেটগুলো  বয়ে  বাসায় নিয়ে যাওয়ার কোনো মানেই হয়না ।
তারা প্যাকেট খুলে দেখল  তাতে রয়েছে  রাধাবল্লভী, সীতাভোগ, দই, মিস্টিগজা আর সন্দেশ । 

   দুপুর পার হতে হতেই  বুড়োর মনে পড়ল  তার দুপুরের খাওয়াটা  এখনি সেড়ে নেওয়া দরকার ।   অবশ্য বাবুদের  হাতে  খাবারের প্যাকেট দেখেই  তার টনক নড়েছিল । প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে তার ।  তাই পায়ের কাছে রাখা  ধুলোময় নোংরা থলে থেকে   চটজলদি খাবারের  টিফিনটা বের করে নিল । টিফিনে কেবল দুখানা পোড়া রুটি  আর একটুখানি বাসি আলুভাজি রয়েছে,  এটাই তার কাছে যথেষ্ট ।   বুড়ো মানুষের পেট,  কত আর খাবে !
ঠিক তখনই  দুই ভদ্দলোক  তার দিকে বাঁকা চোখে তাকালো  কিন্তু বুড়োটা তা লক্ষ্য করল না । ভিখারিকে টিফিন হাতে দেখে  বাবুদের একজন মুখখানা এমনভাবে বিকৃত করল যেন  কোনো বন্য পশু  অথবা কোনো ঘৃণ্য প্রাণীর  দর্শন করেছেন ।
এতক্ষণ পাশেই বসে থাকা ভিখারিটিকে  অসুবিধের বস্তু বলে তাদের মনে হয়নি   কিন্তু এখন কেমন যেন  সেই ভিখারি বুড়োটা তাদের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়াল ।
  তারা পরস্পরের মধ্যে মিহি গলায় কিসব বলাবলি করতে লাগল  তা  বুড়োটা  শুনতে পেল ঠিকই  তবে  বুঝে উঠতে পারল না । 
বাবুদের  খাবারের প্যাকেট উধম  হয়ে রইল  কিন্তু সেই খাবার  আর বাবুদের  মুখ পর্যন্ত গেল না ।

   একজন  নোংরা অসভ্য  ভিখারীর সাথে  এক জায়গায়  প্রায় পাশাপাশি বসে লাঞ্চ করবে !  এই ব্যাপারটা কেমন যেন ঠেকল তাদের কাছে ।
তারা সভ্য সমাজের শিক্ষিত মার্জিত ব্যক্তি  আর  ওরা কিনা  একজন অসভ্য ভিখারির সাথে বসে লাঞ্চ করবে !
 এটা তো ব্যাপক অপমানজনক বিষয় !  বন্ধুস্থানীয়  কেউ দেখলে কি ভাববে !
 এতো খুব লজ্জার বিষয় ।

    বাবুরা ঠিক করল ভিখারীকে স্টপেজ  থেকে বিদেয় করবে ।
সুতরাং ততক্ষণাৎ একজন ভদ্দলোক  দাঁত খিচিয়ে  ভিখারীর উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে উঠল,
" এই যাও এখান থেকে ! যতসব  !
পরিস্কার সাফ জায়গাটাকেও নোংরা করবে দেখছি ।!
এদের জ্বালায় কোনো জায়গা  সাফ রইবে না  !
 সারা দেশটাকে নোংরা করে  ছাড়লে !
 যাও এখান থেকে ! যাও বলছি !
 যাও ! "

  ভিখারী বুড়োটা  বুঝল  বাবুরা  কোনো এক  অজানা কারণে  তার  উপর ভীষন রকমের চটে আছেন ।  কিন্তু  কারণটা বুঝতে পারল না । 
বুড়ো খানিক ভীতসন্ত্রস্ত  হয়ে তড়িঘড়ি  তার টিফিন আর পোটলাপুটলি নিয়ে  বাসস্টপেজ থেকে নেমে এল ।   তারপর  হাতখানেক দূরে  একটি বকুল গাছের ছাওয়ায় বসে পড়ল ।

    বুড়ো কেটে পড়াতে বাবুরা যেন তাদের হারিয়ে যাওয়া আত্মসম্মান ফিরে পেলেন ।  এইবার  খাওয়াটা  সেড়ে ফেলা যেতে পারে । 
 বাবুরা তাদের খাওয়া যেই  শুরু করতে যাবে,    ঠিক এমন সময় কোত্থেকে এক নেড়ি কুকুর এসে পৌঁছল  ওই বাস স্টপেজে  ।
  আর এসেই  ঠিক বাবুদের পায়ের কাছে বসে পড়ল ।
কুকুরের মুখ থেকে লালা ঝড়তে লাগল বাবুদেরকে খেতে দেখে ।  যদি বাবুরা কিছুটা দেয় । 

   কুকুরের শরীরের অবস্থা একেবারে জীর্ণশীর্ণ,   যেন কত কাল  পেট ভরে খেতে পাইনি  এই অবলা জীবটি ।
বাবুদের কাছে বসে  কুকুরটি  কুঁই কুঁই করতে লাগল ।  বোধহয় ভিক্ষা চাইল ।   কিন্তু কুকুর তো আর মানুষের মতো কথা বলতে পারেনা   তাই বাবুদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল । 

  কুকুরটি একটুখানি উচ্ছিষ্টের আশায় ওত পেতে তীর্থের কাকের মতো  বসে রইল ।   কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত দুই বাবুদের কেউই  কুকুরের ভাষা বুঝতে পারল না ।
আর তাছাড়া  গরু ছাগল বেড়াল কুকুরের  ভাষা বোঝা  সভ্য মানুষের  মস্তিষ্কপ্রসূত নয় ।  কুকুরের উপস্থিতি  বাবুদের বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়াল ।
একজন বাবু 'হেঁই হেঁই ছেঁই ছেঁই' করে কুকুরটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করল ।   কিন্তু কুকুরটি তার জায়গা থেকে  নড়েও না  সড়েও না !
তাই সেই ভদ্রলোক  একটু কোমরচাড়া দিয়ে  কুকুরটিকে লাথি মারার উপক্রম করল
 আর  তাতেই তিনি সফলতা পেলেন । 

  একেই গায়ে কিছু নাই তারওপর মার খাওয়ার ভয়ে কুকুরটি কোনোরকম আওয়াজ না করেই  সড়াৎ করে সড়ে পড়ল  এবং  সোজা ভিখারি বুড়োটার  কাছে গিয়ে  বসে পড়ল  ঠিক আগের মতো ।
বুড়োও  দুইতিনবার  তাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে   শেষে হাল ছেড়ে দিল ।   ইতিমধ্যে একখানা রুটি বুড়োর পেটে গেছে ।   দ্বিতীয়টা খেতে যাবে ঠিক এমন সময় বুড়োটা  করুণ দৃষ্টিতে প্রাণীটির দিকে
তাকিয়ে রইল ।   কুকুরের দেহের চরম অবনতি দেখে  সে  মর্মাহত হয়ে পড়ল ।
তাই  সে  তার রুটির আধেকটা আর খানিক আলুভাজি  কুকুরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, " এই নে খা । "

   খাবার  দেওয়ামাত্র  মুহুর্তে  শত্বরে  তা  কুকুরের উদরে পৌঁছে গেল । 
ঠিক তখনই বাস স্টপেজের কাছ  থেকে ধপ করে কি একটা শব্দ হল ।  বুড়োটা দেখল বাবুরা উঠে দাঁড়িয়েছেন,  বোধহয় যাবার জন্য তৈরি বাবুরা । 
 দূর থেকে বাসের হর্ন বাজার শব্দ শোনা যেতে লাগল ।   হঠাৎ  কুকুরটা উঠে দাঁড়িয়ে   সোজা স্টপেজের দিকে ছুটল ।

 ভিখারি বুড়োটা গাছের ছাওয়ায় বসে দেখল   বাবুরা বাসে চেপে চলে গেলেন ।   আর এদিকে কুকুরটি  ঝাঁপিয়ে পড়ল স্টপেজ সংলগ্ন ড্রেনটাই ।
আসলে  বাবুরা  যা খেতে পারেননি  তা  বাস স্টপেজ সংলগ্ন ড্রেনটাই  ফেলে দিয়ে গেছে ।।

 


  Written by-





Copyrighted.com Registered & Protected

No comments:

Post a Comment