বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Saturday, 24 March 2018

কুলের আঁটি / ঝন্টু ও ঝঞ্ঝাট' সিরিজের গল্প / ছোটোদের গল্প / শিশুসাহিত্য

 " কুলের আঁটি "

লেখক - আলীম বাবু

      বাড়ির জানালা দিয়ে ঝন্টুকে   পটা সাড়া  দিল, “ কি রে ঝন্টু  খেলতে যাবি না ?
“একটু পরেই যাচ্ছি”- এই বলে ঝন্টু  ফুরুৎ করে ওই ঘরে চলে গেল ।   আর  পটা  ব্যাট হাতে নিয়ে  মেডিকেল মাঠের দিকে রওনা হল ।

    মাঠে পৌঁছতে ঝন্টুর খুব বেশি দেরি হল না,  খুব বেশি হলে ১৫ মিনিট লেট হবে ।   আর এর মধ্যেই ঝন্টু মাঠে পৌঁছে দেখল   পটা মাঠে নেই,   কামরান নেই,  মিলন নেই,  এমনকি কেউই নেই । 
 মাঠ একেবারে ফাঁকা ।   দুপুর আড়াইটা হবে ।  কেউ নেই  তার মানে পটারা এখনও মাঠেই আসেনি  বোধহয় ।   কিন্তু অনেকক্ষণ আগেই তো পটা হাঁক দিয়ে গেছে ।   তবে ওরা মাঠে না এসে  গেল কোথায়  সব ?

     এইসব ভাবতে ভাবতে  মাঠের পশ্চিমদিকের কোণটাই যেখানে বিল্ডিংয়ের ছাওয়া পড়েছে ;  যেখানে ঝন্টুরা রোজ শর্টবাউন্ডারি খেলে ;   ঠিক সেইদিকটাই  তাকাতেই ঝন্টু দেখল,  ইঁট সাজিয়ে  উইকেট করা রয়েছে ।
তার মানে নিশ্চয় পটারা এসেছে ।   তবে কোথায় গেল ওরা ?  এই ভেবে  ঝন্টু চিন্তায় পড়ে গেল ।   বাউন্ডারির ভিতরে বসে অপেক্ষা করতে লাগল ঝন্টু ।   কোনো দরকারি কাজে  হয়ত গেছে কোথাও ?
তাছাড়া একটা 'প্লাস্টিক বল' কেনার কথা ছিল !   সেটাই কিনতে যায়নি তো আবার ?  দুপুরবেলায় দোকান টোকান খোলা থাকবে তো ?

    ঝন্টুর রাগ হল  পটার উপর ।   চুপচাপ বসে বসে কুড়িয়ে পাওয়া একটা ব্লেড নিয়ে ঝন্টু  বনকচুর ডাঁটা কেটে এনে   সবজি বানানোর মতো কুচিকুচি করতে লাগল ।   অনেকটা সময় কেটে গেল ।  
ঝন্টুর ধৈর্য্যের বাঁধ প্রায় ভেঙেই পড়েছিল  ঠিক এমন সময়  পটার গলা পেল ।   ঝন্টু তাকিয়ে দেখল পটা,  মিলন,  কামরান  আর  শ্যামল হেঁটে হেঁটে  তার দিকেই  আসছে । 

     ঝন্টুর কাছে এসে পটা বলল,  “এত দেরি করলি কেন ?  একটু আগে যদি আসতিস্  তবে আমাদের সাথে যেতিস্ !”
 ঝন্টু গোমড়ামুখে বলল,  “আমার জন্য খানিকক্ষণ দাঁড়াতে পারলি না !“

   পটা ধপ্ করে ঝন্টুর কাছে বসে পড়ল ।   চোখে ইশারা করে পটা তার পকেটের দিকে  ঝন্টুকে তাকাতে বলল ।
- "বলতো  ঝন্টু  আমার পকেটে  কি এগুলো ?"  পটা প্রশ্ন করল ।    পটার দেখাদেখি  কামরান, মিলন,  আর শ্যামলও  বসে পড়ল  আর  একদৃষ্টিতে ওরা  ঝন্টুর দিকে তাকিয়ে রইল ।   পটা ঝন্টুকে একটা প্রশ্ন করেছে । 
 সেই প্রশ্নের উত্তর  ঝন্টুকে দিতেই হবে । 

    ঝন্টু   পটার প্যান্টের দিকে একভাবে তাকিয়ে  পর্যবেক্ষণ করতে লাগল ।   কি আছে পটার দুই পকেটে   তা ভাবতে লাগল ।   ঝন্টু দেখল পটার দুই পকেট  ফুলে ঢোল হয়ে রয়েছে ।   তাহলে কি সত্যিই বল কিনে এনেছে নাকি ?
 কিন্তু  দুটো বল কিনেছে কেন ?  একটা বলই তো কেনার কথা ছিল ।    হয়ত  দুটো কিনে নিয়েছে ।   ঝন্টু যেই বলতে যাবে " বল কিনে এনেছিস ? "  ঠিক তখনই পটা বলে উঠল,
 " দ্যাখ্  ঝন্টু,  ভালো করে দেখে ভেবেচিন্তে বল !  ভুল বললে কিন্তু  পাবি না ! "

    ঝন্টুর মনে  খটকা লাগল ।  পটা হঠাৎ  'পাবি না'  বলল কেন ?   কি পাবার কথা বলছে পটা ?
ঝন্টু চিন্তিত হল ।  ঝন্টু আরোও ভালো করে পটার পকেট দুটো  পরীক্ষা করতে লাগল ।   মনে হচ্ছে না  যে পকেটে  বল আছে ।   বরং ছোটো ছোটো  অনেকগুলো বলের মতো কিছু একটা রয়েছে তার দুই পকেটে ।
 ঝন্টু অন্যদের পকেটগুলোর দিকে তাকালো ।   ঝন্টু লক্ষ্য করল  যে ওদেরও পকেটগুলো  ব্যাঙফোলা হয়ে আছে ।   তারমানে বল নয় ;  অন্য কিছু !  কিন্তু কি হতে পারে ? ঝন্টুর মগজে প্রবল চাপ পড়ল ।

    কাপড়ের ওপর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে  জিনিসটা মার্বেলের সাইজের মতো ।   হঠাৎ ঝন্টুর মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল - এ নিশ্চয় কুল হবে  কারন ওরা ঐ ফুলবাগানটার ওদিক থেকে এল  
আর ওখানেই তো দুটো বড় বড় কুলের গাছ রয়েছে । 
 ঝন্টু তড়িৎ গতিতে বলল, “তোর পকেটে কুল আছে !  ঠিক বলেছি তো ?”

  পটা বলল, “একদম  ঠিক বলেছিস । “  তারপর  পটা পকেট থেকে কতকগুলো কুল বের করে ঝন্টুর দিকে বাড়িয়ে দিল ।   ঝন্টু দুই হাতে মুঠো করে কুলগুলো নিয়ে নিল । 
 তারপর একখানা কুল  মুখে তুলতে গিয়েও  আর মুখে পুড়ল না ।   কুল হাতে ঝন্টু  মানুষঝুলনের মূর্তির মতো  স্থির হয়ে বসে রইল ।

    মিলন বলে উঠল, “কি রে ঝন্টু,   কুল খাচ্ছিস না ?  তোর কুলে পোকা নাকি ? 
পাশ থেকে কামরান বলল,  “আরে  না  না ,  ঝন্টুর  দাঁতে পোকা ! 
ঝন্টু কিছু না বলে  এই অপমান সহ্য করে  চুপচাপ বসে রইল ।   কি যেন একটা ভাবছে সে !

   এইবার পটা জিজ্ঞেস করল,  “এই ঝন্টু,  তুই কুল খাবি না ?  টক নয় রে  মিষ্টি,  খেয়ে দ্যাখ্ ! "
ঝন্টু  বোধহয় কোনো চিন্তার মহাসাগরে ডুব দিয়েছে,  তাই কারো কথা শুনতেই পাই না  সে  !
 পটা হাতে করে ধাক্কা দিতেই ঝন্টুর সম্বিত ফিরল । 
ভয় কাতর হয়ে ঝন্টু বলল,  “এখনও তো সরস্বতী পূজো হয়নি ! পূজোর আগে কুল খেতে নেই,  ঠাকুর রাগ করবে !  বুলটিদি বলেছে । “

   মিলন  বলল,  “পালা এখান থেকে ! যতসব আজগুবি কথা ।   আমরা ওইসব মানি না,  বুঝলি !
ঝন্টু আবার বলল, " এই তো শনিবারদিন  বুলটিদি  এক চিকচিকি কুল কিনে এনেছিল ।   আমি চাইলে পরে বলল পূজোর আগে  নাকি কুল খেলে লেখাপড়া হবে না,  পরিক্ষায় গোল্লা পাবো ।
  তারপর ঠাকুমাকে জিজ্ঞেস করলাম  ঠাকুমাও তো  তাই বলল !"

 কামরান ঝন্টুকে বলল, " না  ভাই !  খাস না ! পাপ হবে !  পরিক্ষায় ফেল করবি  ভাই ! "  এই বলে কামরান একসাথে দুইতিনখানা কুল মুখে পুড়ে গরুছাগলের মতো চিবোতে লাগল ।
শ্যামল  আর মিলন  ঝন্টুর দিকে তাকিয়ে  হো হো করে হাসতে লাগল ।   পটা  কিন্তু  হাসল না   আর ঝন্টুর  হাতের কুল  হাতেই রয়ে গেল ।

   পটা আশ্বাস দিয়ে বলল,  “এইসব ফালতু কথা ।   তোর বুলটিদি তোকে ঠগিয়েছে,  তোকে ঢপ দিয়েছে !  যাতে তুই ওর কাছে কুল না চাস  সেই জন্যই তোকে ভয় দেখিয়েছে বুঝলি !
 পটা  ফের বলল, " জিজ্ঞেস করলি না   তাহলে তুমি  কেন কুল এনেছো ?"
ঝন্টু বলল,  “জিজ্ঞস করলাম তো !  বলল যে আচার করবে  !”

- কাঁচা কুল,  না  পাকা ?
- কাঁচা কুল !
- তার মানে  নির্ঘাত ঢপ !
- কেনে ?
- কাঁচা কুল দিয়ে তোর মাথায় আচার দেবে  নাকি !

   ঝন্টু চুপ করে গেল ।   তার মানে  বুলটিদি  তাকে  মিথ্যা কথা বলে  ঠকিয়েছে ।   পটার কথায়  ঝন্টু সাহস পেল ।   তারপর  একটা কুল  টপ করে মুখে পুড়ে নিল ।   কিন্তু  ভয়  এখনও  তার  গা ছাড়েনি ।
  বুকে ভীতি নিয়েই  পটার কথায়  ঝন্টু  মিষ্টি কুলগুলো  এক এক করে চিবোতে লাগল । 

   কিছুক্ষণ পর  হঠাৎ  একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল ।   কুল খেতে খেতে  অজান্তেই একটা কুলের আঁটি  গিলে ফেলল ঝন্টু ।   এর আগেও বহুবার কুল খেয়েছে ঝন্টু  কিন্তু কোনো দিন কুলের আঁটি  গেলেনি  ।  
কিন্তু  আজকে  ঝন্টু একখানা আঁটি গিলে ফেলেছে । 
এটা  কি করে ফেলল ঝন্টু ?  এবার কি হবে ?

   ঝন্টু  পটাকে বলল,  “ভাই আমি  একটা কুলের আঁটি গিলে ফেলেছি !  কিছু হবে না তো  ভাই ?”

   পটা কিছু বলার আগেই  কামরান চোখ ফেঁড়ে ফেঁড়ে  বলল,  “এ কি করলি রে  ঝন্টু !  পুরো গিলেই ফেললি !  যা ! যা !   এবার  তোর পেটটা  পুরো চৌঁচির হয়ে যাবে ।   জানিস্ তো  কুলের আঁটি কি শক্ত হয় । 
 হজম হবে না,  পেটের ভিতরেই থেকে যাবে ।   সময় থাকতে থাকতে বের না করলে  পেটে গাছ জন্মাবে ।   গাছ বাড়তে বাড়তে তোর পেটটা  পুরো ফাটিয়ে দেবে !  তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না !
অপারেশন করে পেট কেটে  আঁটি বের করতে হবে ।   বুঝে করগা এবার !  যা মরগা,   এবার তুই গেলি ঝন্টু !   যা... !! "

    কামরানের মুখ থেকে এই অশুভ কথাগুলো শুনে  ঝন্টুর মুখটা কেমন যেন  কুঁকড়ে গেল ।   বাংলার পাঁচের মতো মুখটা করে  ঝন্টু পটাকে জিজ্ঞেস করল, " হ্যাঁ রে পটা   কামরান সত্যি বলছে  ভাই ? 
পেট কেটে আঁটি বের করতে হবে ?  না হলে গাছ বেরোবে ? "

    পটা  মুখে কিছু না বলে  আকাশপাণে মুখ করে কি যেন ভাবতে লাগল ।  আর মিলন হাঁ করে ঝন্টুর দিকে তাকিয়ে রইল ।   কিন্তু কামরান ফ্যাঁক ফ্যাঁক  খ্যাঁক খ্যাঁক করে  হাসতেই থাকল ।

 ঝন্টুর  যে  কি হচ্ছে  তা ঝন্টু  ছাড়া  আর কারোর বোঝার সাধ্যি না ।
 ঝন্টুর গা-হাত-পা  থরথর করে কাঁপতে লাগল ।   বুকটা প্রচন্ড জোরে ঢিব ঢিব করতে শুরু করে দিল ।   চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে গেল,  এই বোধহয় কোটর থেকে বেরিয়ে এসে মাটিতে পড়ল বলে ।   ঝন্টুর গা পাক দিতে লাগল ।  
ঝন্টু কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না ।   হাঁপানি রোগীর মতো হাঁপাতে লাগল ঝন্টু  আর  হাঁপাতে হাঁপাতে পটাকে বলল,  “এখন  আমি কি করবো রে  পটা !

পটা বলল, " দাঁড়া ভাবছি ! কিছু একটা করতে হবে ! চল বাড়ীতে গিয়ে বুলটিদিকে বলি গা !"
পটা কামরানকে বলল, " তুই ইয়ারকি মারছিস না  তো  আবার ! "

  কামরান মুখ গম্ভীর করে বলল,  “মোটেই না !  আমার নানির বাড়ি  মসাকগ্রামে একটা ছেলে কুলের আঁটি গিলে নিয়েছিল ।   একমাস পরে  তার খুব পেটে অসহ্য  ব্যথা করতে লাগল ।   তখন ওর মা বাবা  ওকে হাসপাতালে ভর্তি করল ।
  তারপর পেটের যখন ছবি হল  তখন গিয়ে ধরা পড়ল যে  পেটের ভিতর গাছ হয়েছে ।   তারপর অপারেশন করে পেট কেটে  আঁটি সমেত গাছটাকে বের করতে হল ।  আর কিছুদিন দেরি হলে গাছ টা  বাড়তে বাড়তে পেটটা ফাটিয়ে দিত । “

   এই কথাগুলো শুনে ঝন্টু আর স্থির থাকতে পারল না ।   ভয়ে কাঁদতে লাগল ঝন্টু । 
 তাহলে কি ঝন্টুরও পেট কেটে আঁটি বের করতে হবে ;  নাহলে পেটে গাছ জন্মাবে ?
 ঝন্টু  আর একদন্ডও  দাঁড়াল না ।   আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল ।  পটা  পিছন পিছন হাঁটতে লাগল । 
 ঝন্টু পেটে ব্যথা অনুভব করতে লাগল ।   কেমন যেন মাঝেমধ্যে পেটটা মোচড় দিচ্ছে । 

    তাহলে কি কুলের বীজ থেকে অঙ্কুর বেরোতে শুরু করে দিয়েছে নাকি ?  নাহলে এত  ব্যথা হচ্ছে কেন ।   ঝন্টু এবার আরোও  জোরে জোরে হাঁটতে লাগল ।   পটাও  ঝন্টুর সাথে সাথে হাঁটতে লাগল ।
এখনই বাড়ি গিয়ে  বুলটিদিকে  সবকিছু বলা দরকার ।   শীতকালেও  ঝন্টুর কপালে,  পিঠে,  বুকে,  গলায়,  মাথায়  বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগল ।   ঝন্টু আর হাঁটতে পারছে না,  ওর মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরছে ।
 ঝন্টুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ।   পা দুটো থর থর করে কেঁপেই চলেছে ।   যাহোক করে ঝন্টুকে  বাড়ি পৌঁছতেই হবে ।

 বাড়ির সদর দরজার কাছে এসে  প্রায় মূর্ছা গেল ঝন্টু ।   পটা ঝন্টুকে বগলদাবা করে ধরে রাখল ।   দরজার কড়া নাড়তে লাগল পটা । 
কিছুক্ষণ পর  বুলটিদি  এসে দরজা খুলল আর  দরজা খুলতেই বুলটিদি ঝন্টুর  এই হাল দেখে  হতবাক হয়ে বলল,
 “ঝন্টু ! ঝন্টু ! তোর কি হয়েছে ?  কি হয়েছে রে পটা !  ঝন্টুর এই অবস্থা কি করে হল ?”
 ঝন্টু কথা বলতে চাইল কিন্তু  তার মুখ থেকে  ভালো করে কথা বেরোল না । 
তখন পটা বুলটিদিকে বলল, " দিদি  ঝন্টু কুলের আঁটি খেয়ে ফেলেছে ।  ওর পেটে লাগছে ।   ওর পেট কেটে আঁটি বের করতে হবে,  নাহলে গাছ জন্মাবে ।  "

     এই কথা শুনে বুলটিদির মাথায় হাত ।  পটাটা  কি  যা  তা  বলে যাচ্ছে !  এই সব অবান্তর কথা শুনে বুলটিদি  পটাকে ধমক দিতে যাচ্ছিল  কিন্তু  কি একটা ভেবে আর ধমক দিল না । 
তারপর  পটা আর বুলটিদি   ঝন্টুকে ধরাধরি করে  রান্নাঘরে নিয়ে এল ।   ঝন্টু তখনও অজ্ঞান হয়ে যায়নি  চোখ পিটপিট করে বুলটিদির  দিকে তাকিয়ে থাকল ।
    তারপর বুলটিদি  একটা কাঁচের বয়েম থেকে কিছুটা  তেঁতুলের  আচার বের করে বলল,  “ঝন্টু এই নে,  তাড়াতাড়ি এই আচারটা খেয়ে নে ! সব ঠিক হয়ে যাবে ! 
 তোর কিচ্ছু হবে না !
 দেখিস্  আবার  তেঁতুলের বীজগুলো গিলে ফেলিস না যেন !  তাহলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে । “  

    ঝন্টু একটুও বিলম্ব না করে  সঙ্গে সঙ্গে আচারটা  মুখে পুড়ে নিল  আর  সাবধানে তেঁতুলের বীজগুলো বের করে  ফেলে দিল ।  
ভয়ঙ্কর টক তেঁতুলের আচার  মুখে দেওয়ামাত্র ঝন্টুর  যে মুখটা  এতক্ষণ বাংলার পাঁচ হয়েছিল  সেই মুখ   এক  এক করে বাংলার  ছয়  সাত  আট  নয়  দশ  হয়ে গেল ।
পটা বুলটিদিকে  জিজ্ঞেস করল,  আচ্ছা বুলটিদি  তেঁতুলের আচার খেলে ভালো হবে ?
 বুলটি বলল,  নিশ্চয় হবে ! আলবাত্ হবে !

- কি করে ?
- কেন ! আমাদের বিজ্ঞান বইতে লেখা আছে ।
- কি লেখা আছে দিদি ?
- " কি আবার !  ঐ তো তেঁতুলের মধ্যে অ্যাসিড আছে !  আর সেই অ্যাসিডই  পেটে গিয়ে  কুলের আঁটিটাকে গলিয়ে দেবে ।   ব্যস্ সব ঠিক হয়ে যাবে । "
- "  তাহলে আর গাছ হবে না বলো ?"
-  "গাছ হতেই পারে না । "
- " ভাগ্যিস আমি কোনো দিন কুলের আঁটি গিলি নি ।   আর তাছাড়া গিললেই বা কি ?  ভয়ের তো কিছুই নাই ।   তুমি তো উপায় বাতলে দিলে ।  ভুলেও যদি কখনও কুলের আঁটি পেটে চলে যায়  তবে তেঁতুলের আচার  খেয়ে নেব । "

     ঝন্টু  ওদের দুজনার কথা মন দিয়ে শুনল ।   ঝন্টু নিশ্চিন্ত হল  কারন  আর তার পেট কাটতে হবে না ।  অপারেশন করাতে হবে না ।  আধমরা ঝন্টু  আবার চনমনে হয়ে গেল ।  আর কোনো ভয় লাগছে না  ওর । 
একটু পরেই ঝন্টুর মা  ছাদ থেকে নেমে এসে তিনজনাকে রান্নাঘরে দেখে বললেন,  “তোরা রান্নাঘরে কি করছিস রে ।  কি চুরি করে খাচ্ছিস অ্যাঁ ?  আচারের  বয়েমটা  নিচে কেন ?   আচার  চুরি করে খাওয়া হচ্ছে না !
 দাঁড়া খাওয়াচ্চি তোদের আচার ! এই বলে ডালঘুন্নী হাতে করে  তেড়ে এলেন  ঝন্টুর মা । 
বুলটিদি আগেই কেটে পড়েছিল ।   ঝন্টু  আর পটাও  একনিমেষে ছুটে  রান্নাঘর থেকে  পালিয়ে বাঁচলো ।।  😓😂😊


সমাপ্ত

written by :-  Aalim Babu 







Copyrighted.com Registered & Protected

No comments:

Post a Comment