বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Thursday, 15 October 2020

লাইটভূত / বাংলা গল্পসল্প নিবেদিত ঝন্টু ও ঝঞ্ঝাট সিরিজের গল্প / ছোটোদের গল্প / শিশুসাহিত্য ।

 

লাইটভূত

আলীম বাবু

 

        প্রতিদিন সকাল সকাল স্কুলে পৌঁছে যায় ঝন্টু আর পটা। বলতে গেলে সবার আগেই এসে পড়ে ওরা। এসেই ব্যাগগুলোকে তাদের শ্রেণীকক্ষের বন্ধ দরজার নিচে রেখে দিয়ে স্কুলের দক্ষিণদিকের আধ-শোওয়ানো শিশুগাছটার ওপর বসে বসে লটারি টিকিট নিয়ে চিৎভূত খেলায় মেতে ওঠে। তারপর এক এক করে বাকিরাও এসে খেলায় যোগ দেয়। শ্যামলাল প্রাইমারী স্কুলের সদর দরজাটা সর্বদাই খোলা থাকে, মানে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি ।  তারপর রাতের বেলায় ওখানকার লোকেরাই বন্ধ করে দেয়। খোলা থাকার কারণ হল স্কুলের চৌহদ্দির ভিতরে একসারিতে চার-পাঁচটা কুঁড়েঘর রয়েছে। আর সেখানে কতগুলো লোক বসবাস করে। সরকার থেকেই নাকি তাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। ঝন্টু ওদের কাছেই জেনেছে ।
        স্কুল বসে সেই দশটা কি সাড়ে-দশটায় আর ঝন্টুরা সকাল নটা'র আগেই এসে যায় রোজ। কিন্তু আজ ওদের আসতে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। তাও আবার পটার জন্য। পগারে আঁটপিল খেলতে গেছিল পটা, বাড়িতে এল সাড়ে নটায়, তারপর স্নান করতে, খেতে-ড্রেস পড়তে প্রায় দশটা বাজিয়ে দিল। তারপর ওরা স্কুলে পৌঁছল দশটা পনেরোতে। ততক্ষণে সবাই এসে উপস্থিত। ঝন্টুর খুব রাগ হল পটার উপর। কারণ কামরান, মনিরা শিশুগাছটা দখল করে নিয়েছে তাই ঝন্টুর মন খারাপ। আজ আর ঝন্টুর চিৎভূত খেলাটা হল না।
    তবে একটা ব্যাপার দেখে ঝন্টু অবাক হল। কামরান-মনি-রনিরাও চিৎভূত খেলছিল না বরং নিজেদের মধ্যে কিসব বলাবলি করছিল।
তারপর পটা জিজ্ঞেস করল,
- কিরে তোরা চিৎভূত খেলছিস্ না যে, টিকিট শেষ নাকি ?
কামরান থেমে থেমে বলল,
- কাল রাতে ভূত দেখে মনি অজ্ঞান হয়ে গেছিল।
তক্ষণই রনি বলল,
- ভূত না রে, লাইটভূত !

    রনি হল মনির ছোট ভাই। ওরা মিঠাপুকুরে ভাঙা মসজিদের ওখানে থাকে। কাল রাতে নাকি প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার সময় পুকুরপাড়ে সজনে গাছের ডালে দুটো চোখ জ্বলতে দেখেছে মনি, লাল আর সবুজ রঙের আলো খালি জ্বলছে আর নিভছে । তারপর হঠাৎ করেই আলোটা গায়েব হয়ে যায়। আর তা দেখেই মনি ওখানেই অজ্ঞান। তারপর পাড়ার লোকে তুলে ঘরে নিয়ে যায়।
    
    কয়েকদিন ধরেই গোটা বর্ধমানের নানান জায়গায় নাকি লাইটভূত দেখা দিয়েছে। আজকের খবরের কাগজেও নাকি লাইটভূতের কথা ছাপিয়েছে। টিভিতেও নাকি লাইটভূত নিয়ে চর্চা হচ্ছে।
     ঝন্টু কিন্তু এই ব্যাপারে কিছুই শোনেনি। এটা ওর কাছে একেবারে নতুন বিষয়। ঝন্টু মনে মনে ভাবল,
- লাইটভূত !
- এটা আবার কি ধরনের ভূত রে বাবা ! বাপের জন্মেও এরকম ভূতের নাম শুনিনি !

    অনেক ভূতের নাম শুনেছে ঝন্টু, যেমনঃ গেছোভূত-মেছোভূত, হুলোভূত-নুলোভূত আরো কত কি ভূতের নাম যে শুনেছে তার নাই ঠিক। যেমন ধরো - শাকচুন্নী, পেতনী, দানো, ব্রহ্মদ্যৈত্য, ক্ষোক্ষস ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে লাইটভূতের নামটা ঝন্টু এই প্রথমবারই শুনল ।
     ঝন্টুর মনে এই নানান চিন্তা যখন একেবারে জাঁকিয়ে বসেছে ঠিক তখনই কামরান বলে উঠলো, ভাই - লাইটভূত হল সবচেয়ে খাতারনাক্ ভূত ! - আমাকে আমার দাদা বলেছে। লাইটভূত অন্য গ্রহ থেকে এই পৃথিবীতে এসেছে। গরু-ছাগল হাতি-ঘোড়া এমনকি মানুষকে পর্যন্ত এক এক করে গায়েব করে দিচ্ছে। মনি তোর ভাগ্য ভালো ভাই। খুব জোর বেঁচে গেছিস্। নাহলে তোকেও হাপিস্ করে দিতো।
        মনি হাঁ করে শুকনো মুখে কামরানের দিকে তাকিয়ে থাকল। আর ঝন্টু মনির শুকনো চিপশানো মুখটা দেখতে লাগল একভাবে। তারপর হঠাৎ ঢং ঢং করে ঘন্টা বেজে ওঠে আর সকলেই নিজ নিজ ক্লাসে চলে গেল। ঝন্টুও ধীরে ধীরে তার কক্ষের দিকে পা বাড়ালো কিন্তু তার পা দুটো যেন আর এগোতেই চাই না। কেমন যেন অবশ অবশ হয়ে যাচ্ছে পা দুটো। তক্ষণই পটা ঝন্টুকে ডাক দিলো, এই ঝন্টু, কিরে ! আয় নাকি !
       ঝন্টু আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল এবং ক্লাসে ঢুকেই পটার পাশে চুপ করে বসে পড়ল। কোনো সাড়া-শব্দ নাই তার মুখে, এমনিতেই ঝন্টু লাজুক স্বভাবের ছেলে, খুব কম কথা বলে। আর খানিকটা ভীতুও বটে। কিন্তু লোকেদের সেটা সহজেই বুঝতে দেয় না। কিন্তু এই লাইটভূতের ব্যাপারটা কেমন যেন ঝন্টুকে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছে। কামরানের কথাগুলো শুনে ঝন্টুর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল, পা থেকে মাথা অবদি একটা ভয়ের শিহরণ বেয়ে উঠেছিল। ক্লাসে বসেও সেই অস্বস্তি যেন ঝন্টুর গা ছাড়তেই চাইনা। কিন্তু এই ব্যাপারখানা ঝন্টু কারো কাছে প্রকাশ করল না, এমনকি তার বেষ্ট ফ্রেন্ড পটার কাছেও না।
     স্কুলের পুরো সময়টা এইভাবেই কাটিয়ে দিল। তারপর স্কুল ছুটি হলে সে ও পটা বাড়ির দিকে রওনা হল। রাস্তায় পটা ঝন্টুকে জিজ্ঞেস করল,
- কিরে আজকে মাঠে আসবি তো ?
ঝন্টু খালি হুঁম্... বলে মাথা নেড়ে উত্তর দিল।
তারপর ঝন্টু বাড়ি ফিরে এসে খেয়েদেয়ে টিভিতে কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেলটা লাগিয়ে দিয়ে দিব্যি বিছানায় শুয়ে পড়ল। মাঠে যাওয়ার কথাটা মনে পড়লেও ইচ্ছে করেই আর মাঠে গেল না। আজ ওর একদমই ভালো লাগছে না। বারবার সেই লাইটভূতের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে। চ্যানেলে তখন চলছিল তার ফেবারিট কার্টুন স্কুবি-ডুবি-ডু। এটাও আবার ভূতের সিরিজ। প্রিয় কার্টুন সিরিজ হওয়া সত্ত্বেও ঝন্টু চ্যানেল পাল্টে দিল। গানের চ্যানেল লাগিয়ে দিল। বাংলা সিনেমার গান বাজতে লাগলো রমরমিয়ে। গান শুনতে শুনতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল ঝন্টু, তারপর এক গভীর নিদ্রায় ডুব দিল সে। ওদিকে টিভিতে গান বাজতেই থাকলো।
রাত প্রায় সাতটা কি সাড়ে-সাতটা বাজে ঘড়িতে। ঝন্টুর ছোটো মামা এইমাত্র টিউশন পড়িয়ে বাসায় ফিরেছে।  ঝন্টু তখনও চিৎ হয়ে ঘুমোচ্ছে। ঝন্টুকে ওঠানোর জন্য ছোটোমামা ঝন্টুর একটা পা ধরে ঝাঁকাতে লাগল।
- ঝন্টু, আরে এ ঝন্টু ! অবেলায় ঘুমোচ্ছিস্ কিরে ? আরে ওঠ্ ! ঝন্টু...!
ঝন্টু এক্কেবারে চিঙড়ি মাছের মতো তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে উঠৈই  মাগো... বাবাগো... বলে চিৎকার শুরু করে দিল। ছোটমামা অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে ঝন্টুকে দেখতে লাগল। তৎক্ষণাৎ ঝন্টুর মা এসে হাজির। মা বলল, কি হল রে চেঁচাচ্ছিস্ কেন ? কি হল রে ভাই ?
ছোটমামা বলল, আমি তো জাস্ট্ ওকে ওঠানোর চেষ্টা করেছি অমনি ও  মাগো মাগো করে চেঁচিয়ে উঠল। বোধহয় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নটপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে। দিদি তুই যা আমি তো আছি !
ঝন্টুর মা বলল, টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেছিল। তাই টিভিটা বন্ধ করে গেছিলাম। তা চা খাবি নাকি ভাই ? ঝন্টু আয় একটু চা-মুড়ি খাবি ?
ছোটমামা বলল, হ্যাঁ খাবো তো। আগে একটু ফ্রেস্ হয়ে নিই।
ঝন্টু চোখ দুটো ভালো করে রগড়ে নিল। তারপর ছোটমামাকে দেখে হিঃ হিঃ করে হেসে খাট থেকে নেমেই বসার ঘরে চলে গেল।
         বসার ঘরে ঝন্টুর মা আর নেহার মা কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। ঝন্টু কান করেনি। তারপর রান্নাঘর থেকে চা-মুড়ি নিয়ে এসে ঠাকুরদার আরামকেদারায় বসে মুড়ি চিবোতে লাগলো। ছোটোমামাও এসে গেল। তারপর দিব্যি ঘন্টা দেড়েক আড্ডা চলল।
হঠাৎই ছোটো মামা বলল, আজ তো সারাটা বেলা খালি ঘুমোলি । পড়াটা করবি কখন শুনি ? এই বলে ছোটোমামা ওপরের ঘরে চলে গেল।
       ঝন্টু এদিক ওদিক তাকিয়ে কথাটা না শোনার ভান করলো কিন্তু কোনো লাভ হল না কারন ঝন্টুর মা'র এক খ্যাকানিতেই ঝন্টু বইপত্র নিয়ে ছোটোমামার ঘরে গিয়ে হাজির।
তখন প্রায় রাত ন'টা বাজে। ঝন্টু বলল, মামা আমি কিন্তু এক ঘন্টার বেশি পড়বো না বলে দিলুম। ছোটোমামা কিছু একটা লিখতে লিখতে খালি মাথা নাড়লো, তবে হ্যাঁ বলল কি না বলল তা ঠিক ঠিক বোঝা গেল না।
ঝন্টু মিহি গলায় বিড়বিড় করে পড়তে লাগলো। দেখতে দেখতে দশটা বেজে গেল। ঝন্টুর মায়ের গলা নীচ থেকে শোনা গেল। -ডিনার রেডি।
    ঝন্টু, ছোটোমামা ও বাকি সবাই একসাথেই খাবার ঘরে খেতে বসেছে। খেতে খেতে ঝন্টুর বাবা ঝন্টুর মা'কে বললেন, 

- লাইটভূত দেখেছো ? লাইটভূত !
মা বললেন, লাইটভূত না ছাই !
লাইটভূত কথাটা শুনেই ঝন্টুর বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো।
- আবার লাইটভূত !
           ঝন্টুর মুখখানি শুকিয়ে আরো ছোট হয়ে গেল। প্রায় খাওয়া শেষ হয়েই গেছিল, আর একদুমুঠো বাকি ছিল। কিন্তু এই একমুঠো ভাত আর কিছুতেই ঝন্টুর গলা দিয়ে নামলো না।
মা বললেন, খেতে না পারলে ছেড়ে দে না ! জোর করে খেতে হবে না ! হাত ধুয়ে শুয়ে পড়গে যা !
 

            ভাত থালাতে রেখে হাত ধুয়ে ঝন্টু সোজা ছোটোমামার ঘরে চলে গেল। ঝন্টু ছোটোমামার কাছেই ঘুমোয় ।
খানিকক্ষণ পর ছোটোমামা এসে ঝন্টুকে খাট থেকে নামিয়ে বিছানাটা ঠিক করে নিয়ে মশারি টাঙিয়ে দিল। আজকাল প্রচন্ড গরম তার ওপর মশাদের ভীষণ উৎপাত। পাখা না চালিয়ে তো থাকায় যায়না। আবার মশারির ভিতর ঠিকমতো হাওয়াই লাগেনা। ইদানীং লোডশেডিংটাও বেড়েছে। রাত-দিন মানামানি নাই যখনতখন কারেন্ট চলে যাচ্ছে। মশার উৎপাতে ছোটমামা মশারি টাঙাতে চাইলেও ঝন্টু মাঝেমধ্যে গরমের ঠেলায় জেদ ধরে মশারি খোলা করায় আর মশারি টাঙানোর খেলাফত করে। আর ছোটোমামাও বাধ্য হয়ে মশারি খুলে দেয়।
        আজ কিন্তু একবারও মশারি টাঙানো নিয়ে ঝন্টু কোনো কথাই বলল না। আর জানালাটা ঝন্টু আগে থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। ছোটোমামা একদুবার ঝন্টুর দিকে তাকিয়ে ছিল কিন্তু ঝন্টু কোনো রেসপন্স করেনি। তারপর ছোটোমামা লাইটটা বন্ধ করতে গেলে ঝন্টু একভাবে তার মামার দিকে তাকিয়ে থাকল । 

       আজ লাইটটা বোধহয় না অফ্ করলেই ভালো হত ঝন্টুর জন্য। কিন্তু লাইট না নিভলে চোখ দুটো যে বুজতেই চাই না, ঠিক মতো ঘুমও আসেনা। তাই লাইট নেভানো অত্যন্ত প্রয়োজন। সুতরাং যথারীতি লাইট নেভানো হল। ইতিমধ্যে রাত এগারোটা বেজে গেল। ঝন্টু ঘুমোনোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো কারন সারাটা বিকেল সে ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিয়েছে।  তাই ঘুমবাবাজি অত সহজে আসবে কি ?
         ফ্যান চলছে একদম ফুল স্পিডে। ফুর্ ফর্ করে হাওয়া ঢুকছে মশারির ভিতর। ছোটোমামা তো ঘুমিয়ে কাদা, কিন্তু ঝন্টুর দুই চোখের ঘুম যাকে বলে হাওয়াগুম্। কিছুতেই ঘুম আসে না। খালি লাইটভূতের কথাটা মাথার চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। ভয়ে ঝন্টু একবার লাইটটা জ্বেলে দেওয়ার কথা ভাবলো। কিন্তু যদি আলোর ছটায় ছোটোমামা জেগে যায়। আর তাছাড়া আলো জ্বললে তারও ঘুম আসবে না। তাই লাইট অন্ করার প্লানটা ক্যানসেল। হাতের উপর হাত গুটিয়ে ঝন্টু একভাবে মশারির ওপর আবছামতো ভন্ ভন্ করে ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকল আর ঘুমোনোর চেষ্টা চালিয়ে গেল।
        ঘড়িতে কটা বাজে তা জানার কোনো উপায় নেই কারন ঘর অন্ধকার। ঝন্টুর মনে হল এক-দেড়টা নিশ্চয়ই বেজে গেছে এতক্ষণ। তারপর হঠাৎ একটা বিকট শব্দ করে কারেন্ট অফ্ হয়ে গেল। যেন কাছেপিঠেই কিছু একটা বার্ষ্ট করল। ছোটোমামা কি শব্দটা শুনতে পেল ?  না শোননি কারন ছোটোমামা এখনও দিব্যি বিঘোর ঘুমোচ্ছে। কিন্তু বেশিক্ষণ নয় কারণ গরমের চোটে ঘাম ছুটতে লাগলো ঝন্টুরও আর ছোটোমামারও।
        ছোটোমামার ঘুম ভেঙে গেল। আর উঠেই ওরে বাবারে... উফ্ কি গরম রে বাবা ! বলে হাসফাস্ করতে লাগল। ঝন্টু বলল, কি যেন একটা বার্ষ্ট করল আর তার পরেই কারেন্টটা চলে গেল জানো ছোটোমামা !
ছোটোমামা বলল, এই কেলো করেছে রে ! ট্রান্সফারমারটা গেছে তাইলে। আজ ঘুমের রফাদফা। - এই বলে ছোটোমামা জানালাটা খুলে দিলো। আর বলল, বাইরে একটুও হাওয়া নেই। আজ আর কারেন্টটা আসবে না । এত রাতে পাওয়ার হাউস থেকে ব্যাটারা সাড়াতে আসবে বলে তো হচ্ছে না। একবার বাইরে গিয়ে দেখে আসি ব্যাপারখানা।
যাবি নাকি ঝন্টু ?
ঝন্টু বলল, না তুমি যাও, আমি যাবো না ।
          ছোটমামা দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। এখন ঝন্টু রুমে একা। ঘরের ভিতর নিশি অন্ধকার। খালি ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক গোটা ঘরময় আর পাশের ডিয়ার ফরেস্টের বাগান থেকে হরিণের ডাক, পেঁচার ডাক আরো নানান বিচিত্র শব্দ ঝন্টুর কানের গোড়ায় বাজতে লাগল। ঝন্টু ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বিছানায় বসে রইল আর ভাবলো ছোটোমামার সাথে গেলেই বোধহয় ভালো হতো। একবার জানালার কাছে এসে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করল কিন্তু কিছুই ঠিকমতো দেখা যায় না। ঝন্টু আবার বিছানায় শুয়ে পড়ল। আজ সারারাত ঝন্টু এভাবেই কাটিয়ে দেবে স্থির করল। আবার সেই লাইটভূতের কথা মনে পড়ে গেল। ঝন্টুর গায়ের লোমগুলো সোজাভাবে উঠে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ছোটোমামা গেল তো গেলই আর ফেরার নামগন্ধ নেই।
        অন্ধকার জানালাটার দিকে তাকিয়ে ছিল ঝন্টু ঠিক তখনই স্পষ্ট একটা সবুজ রঙের আলোর বিন্দু ফুরুৎ করে জানালা দিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ল। ঝন্টুর বুকটা ধড়াস্ করে উঠল। তারপর ঐ সবুজ রঙের আলোটা ঠিক পাখাটার কাছে স্থির হয়ে দিবদাব্ করে একবার জ্বলছে আর নিভছে। এটা দেখে ঝন্টুর বুকটা ধড়াক্ ধড়াক্ করতে শুরু করে দিল। মুখটা শুকিয়ে গেল। ঝন্টু চিৎকার করার চেষ্টা করল কিন্তু পারলো না। ঝন্টুর মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। ঝন্টুর হাত পা অসাড় অবশপারা হয়ে যাচ্ছে। তারপর সবুজ আলোটা দিবদাব্ করতে করতে ঘরের চারিদিকে ঘুরতে লাগল। ঝন্টু দুশ্চিন্তার মোহে আচ্ছন্ন হতে লাগল।
 

  - এটা কি ? কি এটা ? এটাই কি তবে লাইটভূত ! ঝন্টুকে নিতে এসেছে ? ভিন গ্রহে নিয়ে যেতে এসেছে ? এই লাইটভূত ঝন্টুকে গায়েব করে দেবে ! কেউ কোনোদিন ঝন্টুকে আর খুঁজে পাবেনা ! আজ ঝন্টু হাপিস্ হয়ে যাবে !
ঝন্টু আর সহ্য করতে পারলো না। প্রায় কাঁদো কাঁদো মুখে যতটা জোরে সম্ভব হল ততটাই জোরে চেঁচিয়ে উঠলো,
ছোটোমামা... বাচাও ! মা... বাচাও !
লাইটভূত... ! লাইটভূত... !
ঠিক তক্ষণই ছোটোমামা ঘরে ঢুকল। ঘরে ঢুকেই বলতে লাগল, কি হল রে ঝন্টু, চেচাচ্ছিস্ কেন ?
ঝন্টু বলল, লাইটভূত ছোটোমামা, লাইটভূত ঐ দ্যাখো !
         ছোটোমামা দেখল, সত্যিই একটা সবুজ রঙের লাইট ঘরের চারিদিকে ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে সবুজ রঙের লাইটটা ফ্যানের একটা পাঙ্খার কাছে স্থির হয়ে গেল। আবছা অন্ধকারে ছোটোমামা ঝন্টুকে আঁকড়ে ধরে বলল, ওরে ক্ষ্যাপা, ওটা লাইটভূত না, ওটা জোনাকি ! জোনাকি পোকা দেখিসনিস্ ! পাগল কোথাকার ! চেঁচিয়ে মরলে টাল কোথাকার ! দাঁড়া তোকে ধরে দেখাচ্ছি ! - এই বলে ছোটোমামা বিছানায় চেপে সোজা দাঁড়িয়ে এক চান্সেই হাতে মুঠস্হ করল জোনাকিটাকে । তারপর ঝন্টুর সামনে মুঠো খুলে দেখালো। এই নে হাতে নিয়ে দ্যাখ ! কি অপূর্ব একটা পোকা।
 

       ঝন্টু জোনাকি পোকাটাকে হাতের তালুতে নিল। সত্যি তো, এটাতো একটা নিরীহ জোনাকি পোকা মাত্র। আর এই পোকার পেটের কাছটা ফসফরাস জাতীয় কিছু একটার কারণে রাত্রি বেলায় জ্বলে। ঝন্টু বইয়েতে পড়েছে এবং নিজের চোখেও দেখেছে। কিন্তু এর আগে কখনও হাতে নেয়নি। এই নিরীহ পোকাটাকে লাইটভূত ভেবে  কি ভীষণরকম যে ভয় পেয়ে গেছিল সেটা একমাত্র ঝন্টুই জানে।
কারন যার হয় সেই বোঝে !! 

 

 

 

Written By - Aalim Babu


Copyrighted.com Registered & Protected

 

No comments:

Post a Comment