বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Thursday, 27 August 2020

দুই প্যাসেঞ্জার / বাংলা গল্পসল্প নিবেদিত একটি ছোটোগল্প ।


"দুই প্যাসেঞ্জার"

"আলীম খান"

   সকাল আটটা বাজে । গাড়ি আসতে এখনও আধঘন্টা দেরী আছে ।  বিজয় একটু আগেই বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে গেছে । টিকিট কাটা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তারপর লোহার ব্রীজে চড়ে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নেমে ছয় নম্বর প্লাটফর্মে এসে মোজাইক করা বসার একটা জায়গায় বসে পড়ল বিজয় । 

     আজ তার ফাইনাল ইন্টারভিউ, ভেনিউ কলকাতা । আজ বিজয়ের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন । বোধ হয়  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন । কারণ এর আগে সে অনেক পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু ইন্টারভিউয়ের কল কোনদিনই হয়ে ওঠেনি । এইবার রেলের চাকরির গ্রুপ-ডি পরীক্ষাটায় পাসও করেছে আর কললেটারও পেয়েছে ।

   সময় কিছুটা হাতে রয়েছে তার ওপরে আবার টেনশন । টেনশন কাটানোর জন্য বিজয় স্টেশন চত্বরে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করতে লাগলো । বিভিন্ন ধরনের মানুষের এদিকে-ওদিকে যাতায়াত, তাদের ট্রেনে ওঠানামার হিড়িক, স্টেশন চত্বরে হকারদের হাঁকডাক, হৈহট্টগোল, জিজ্ঞাসু যাত্রীদের উত্তেজনা এবং কৌতুহল --- এই সকল নানান বিচিত্র দৃশ্যাদি বিজয়ের চোখের সামনে বায়োস্কোপের ন্যায় পরিস্ফুট হয়ে ওঠতে লাগলো । আর কিছুক্ষণের মধ্যেই হাওড়া-গামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনটা প্লাটফর্মে এসে যাবে । 

    এদিক-ওদিক পায়চারি করতে করতে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ায় আবার বসে পড়ে ট্রেনের প্রহর গুনতে লাগলো বিজয় । এক একটা মিনিট যেন এক এক ঘন্টার সমান । চারিদিকে শোরগোল চিৎকার-চেঁচামেচি-হট্টগোল চলতেই থাকল । এই শোরগোল যেন এবার তাকে বিরক্ত করতে শুরু করে দিল।

   এমন সময় হঠাৎ বিজয় লক্ষ্য করল কালো বোরখা পরিহিত এক ভদ্রমহিলা তার পাশেই এসে বসে পড়লেন । তারপর মুখঢাকা পর্দাটা মাথার ওপরদিকে তুলে দিলেন। ভদ্রমহিলা বেশ মোটা, তার ওপর বয়সও কম হয়নি । ষাট পয়ষট্টি তো হবেই। সঙ্গে আছে দু খানা বড়ো বড়ো ব্যাগ। বিজয়ের মনে হল, ইনিও বোধহয় হাওড়াগামী প্যাসেঞ্জারটাই ধরবেন। 
 
    বিজয় আড়চোখে তাঁঁকেই লক্ষ্য করতে লাগল। বসে পড়েই  এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভদ্রমহিলা নিজের বাঁপায়ে হাত দিয়ে এক প্রকার ব্যায়াম করতে লাগলেন। নিশ্চয়ই হাটুুতে ব্যারাম, সিঁড়ি দিয়ে নামতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। 

  তারপর  ভদ্রমহিলা এক পলক  বিজয়ের দিকে তাকিয়ে নিলেন। এই তাকানোর মধ্যে  মায়ামমতাস্বরূপ কিছু একটা যে ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই । তারপর হঠাৎ বিজয়ের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, "কোথায় যাবে বাবা  ?"

তার উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা কানে আসায় সে কিছুটা শশব্যস্ত হয়ে পড়ল । নিজ ভাবনায় আত্মমগ্ন ছিল তো তাই। তারপর বিজয় ঐ ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, "আমাকে বলছেন ?"

-- "কোথায় থাকা হয় ?"
-- "আমি বর্ধমানেই থাকি ।"
-- "তা কোথায় যাবে তুমি ?" এই বলে তিনি বিজয়ের কাঁধে  হাত রাখলেন ।
-- "কলকাতা", একটু হাসিমুখ করে বিজয় উত্তর দিল ।

-- "আমিও কলকাতা যাচ্ছি।" ভদ্র মহিলা বললেন, "আমার ভাই ওখানেই থাকে। কাপড়ের ব্যবসা করে। হোলসেল মার্কেটে বড়ো দোকান আছে। এখন ওর শরীরটা ভালো নাই, ফোন করেছিল। কদিন হল আজমির থেকে ফিরলাম। যাবো যাবো করে অনেক দিন যাওয়া হয় নাই, যাই একবার দেখেই আসি। এদিকে আবার আমারও জানটা ভালো নাই। হাঁটুর ব্যথা, তার ওপর হাই পেসার।"

  বিজয়ের মুখের হাসিটা একটু ফিকে হয়ে গেল। গা টা একটু ভারী ভারী মতো হয়ে গেল। হাই প্রেসার কথাটা শুনেই কি এরকমটা হল ? 

-"চাকরি করো ?" আবার প্রশ্ন এল। 
-"না না, চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি ।"
-"ও ! আচ্ছা ! আচ্ছা !"
-"কি নাম তোমার, বাবা ?"
-"আমার নাম বিজয় । বিজয় কুমার গোস্বামী । "
-"গোস্বামী ! মানে বামুনের ছেলে ! তা বেশ !"

  বিজয়ের ভ্রূ খানিক কুঁচকে গেল । একটু সন্দেহমনা হয়ে ভদ্রমহিলাকে দেখতে লাগলো।  আবার তিনি বলতে লাগলেন, 
-- "জানো বিজয় কুমার ! আমাদের  পাশের বাড়িটাও গোস্বামী বাড়ি, গোঁড়া ব্রাহ্মণ। তবে ওরা খুব ভালো জানো ! মনেই হয়না যে অন্য জাতের। এমনভাবে মিশে আমাদের সাথে যেন মনে হয়  নিজেদেরই লোক ! ভেদাভেদ ছোঁয়াছুঁয়ির কোনো বালাই নেই। খুব ভালো মানুষ ওরা, খুব ভালো ! "

   প্রগাঢ় দৃষ্টিতে প্রশান্ত চিত্তে বিজয় ঐ ভদ্র মহিলার কথাগুলো শুনতে থাকল। তার ঠোঁটের ডানকোণে  আবার সেই মৃদু হাসি।

-- "আমাদের বাড়িরও কেউ ভেদাভেদ-ছোঁয়াছুঁয়ি এসব মানেনা, আমিও না। সবার আগে মানবধর্ম তারপর বাকি সব।"  হাসিমুখে উত্তর দিয়ে মর্যাদা বজায় রাখার চেষ্টা করলো বিজয় । 

-- "আমীন্ ! আল্লাহ তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করুন। পরিক্ষায় পাশ করছো, ইন্টারভিউতেও পাশ করো। আমি দোয়া করলাম। মানুষের মত মানুষ হও।"-- এই বলে ভদ্র মহিলা একটি টিফিন থেকে দুটো শুকনো খেঁজুর বের করে বিজয়ের হাতে দিয়ে বললেন, "এটা আজমের শরীফের সিন্নি। এটা একটু মুখে দাও দেখি বাবা। "

   বিজয় হাতের মুঠোয় সিন্নিটা গুঁজে রাখল কিন্তু তৎক্ষণাৎ সেটা আর মুখে তুলল না। তারপর হঠাৎই বিজয়ের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটা প্লাটফর্মে এসে দাঁড়াল। বগিতে ওঠার জন্য বিজয় আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল, তাই ট্রেন থামা মাত্রই সে একটি বগিতে অনেক কষ্টে উঠে পড়ল। 

   তারপর বিজয় এক পলক ভদ্র মহিলার দিকে তাকালো। তিনিও বিজয়কেই দেখছেন। কিন্তু ভদ্র মহিলা এখনো বসে কেন ? উনিও তো কলকাতা যাবেন বললেন। তবে ট্রেনে চড়লেন না কেন ? নাকি হাঁটুর কারনে উঠতে পারলেন না। বিজয়ের উচিত ছিল ভদ্র মহিলাকে একটু সাহায্য করা। বিজয়ের মুখে আক্ষেপের ছাপ।

    না, এইটুকু সহযোগিতা তো করতেই পারে, এই ভেবে যেই নামতে গেল অমনি হুইসেল বেজে গেল, ট্রেনও ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। বিজয় আর নামলো না। আক্ষেপের দৃষ্টিতে বিজয় আবার ভদ্র মহিলার দিকে তাকালো। তার মনে হলো ভদ্র মহিলা একবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আবার বসে পড়লেন। 

   ট্রেনে প্রচন্ড ভীড়। বসা তো দূরের কথা ঠিক ভাবে দাঁড়ানোই যায়না। কোনো রকম গেটের কাছে ঠাঁই হল বিজয়ের। ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে উঠতে একপ্রকার ধস্তাধস্তিই হয়ে গেল। ভদ্র মহিলার জন্য তার একটু মনখারাপ তো করলই। তারপর বিজয় তার ডান হাতের শুকনো খেঁজুর দুটোকে দৃঢ়ভাবে দেখতে লাগলো -- আজমের সরীফের সিন্নী ।

 

 


Written By-

 Aalim Khan


Copyrighted.com Registered & Protected

No comments:

Post a Comment