বাংলা গল্পসল্প

"BanglaGolpoSolpo" is all about Bengali stories, Bengali Poems, Articles etc. 'বাংলা গল্পসল্প'র তরফ থেকে সকল পাঠকগণ, শ্রোতাগণ ও লেখকবন্ধুদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন, ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। এই অনলাইন পাবলিশিং ওয়েবসাইটটির অনবদ্য প্রচেষ্টা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলা জগতের গর্বিত বাঙালীর সন্নিকটে নবাগত তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যিকগণের আত্মপ্রকাশ করার নিতান্তই একটি প্রয়াসমাত্র ।

Wikipedia

Search results

Pageviews

নিচের follow button টির দ্বারা আপনি এই ওয়েবসাইট টি follow করতে পারেন ।

Friday, 28 August 2020

আজহার : দ্য স্টার বয় / বাংলা গল্পসল্প নিবেদিত একখানা আত্মকাহিনী ।

 আজহার : দ্য স্টার বয়

"মহঃ আজহার"

      নিজের প্রশংসা করতে বোধহয় মহান ও গুণীব্যক্তিরাও দ্বিধা করেন, আর আমি তো অতি নগণ্য। তবুও একটা বিষয় না লিখে পারলাম না। বিষয়টা তোমাদের কাছে হয়ত নগণ্য হতে পারে কিন্তু আমার কাছে এটা মিরাকেলের থেকে কম কিছু নয়। এখানে আমার জীবনের একটি মুহুর্তের কথা উল্লেখ করছি যা আমার কাছে অত্যন্ত স্মরনীয়।

     সেদিনটা ছিল সোমবার। পরের দিনই মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর কথা। টেনশনে যাচ্ছেতাই অবস্থা। আর এই রকম টেনশন আগে কখনও হয়নি। সারাটাদিন অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে গেছে। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই যখন সেখ আবজাল রহমান মহাশয় বাড়িতে এসে হাজির হলেন তখন খানিকটা স্বস্তি পেলাম। আবজাল স্যার আমার গৃহশিক্ষক। সব কটা সাবজেক্টই স্যার দেখিয়ে দেন। স্যারকে আমার খুব ভালো লাগে আর স্যারও আমায় খুব স্নেহ করেন।
      স্যার প্রচন্ড আশাবাদী আমি ভালো ফল করবো। কিন্তু আমার কেমন যেন ভয়ভয় করছিল, ফার্ষ্ট ডিভিশন টা পাবো তো ! পরিক্ষা যে খুব ভালো হয়েছে তা নয়। বাংলায় রচনাটা সময়ের অভাবে ভালো করে লিখতে পারি নি। আবার ইংরেজি প্যারাগ্রাফ ও লেটার দুটোই আনকমন ছিল, কোনোরকম লিখেছি আর কি !  কিরকম নাম্বার দেবে কে জানে ? সবচেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে অঙ্কটা নিয়ে, পাস নাম্বারটা পেলেই হবে। অঙ্ক পরিক্ষাতে যা ঝক্কি পোওয়াতে হয়েছে তা কেবল আমিই জানি।

       মায়ের বিশ্বাস আমি থার্ড ডিভিশনে পাস করবো। আর বাবা মনে করেন আমি সব সাবজেক্টেই ব্যাক পাবো -- আমার দ্বারা নাকি মাধ্যমিকের গন্ডিটাই পার হবেনা। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করবো। সারা বছর খেলাধুলোয় মেতে থাকলেও পরিক্ষার একমাস আগে থেকে জি-জান লাগিয়ে পড়াশোনা করেছি -- এতটুকুও ফাঁকি দিইনি।
     এটা ঠিক যে টেস্ট পরিক্ষাটা খুব বাজে গেছে। কোনোরকম লিষ্টে নাম উঠেছে আর কি।  আর এর জন্য বাবা ব্যাপক ভাবে তিরস্কার করেছিলেন। এমনকি ঘর থেকে প্রায় বেরই করে দিয়েছিলেন কিন্তু মায়ের কাকুতিমিনতিতে শেষ পর্যন্ত বাবা শান্ত হলেন। ভয়ে দুই তিনদিন তো ঘর থেকেই বেড়োয়নি। সারাদিন কেবল বইপত্র নিয়ে পড়ে থেকেছি।

      কিন্তু খেলার নেশা সহজেই যায় কি ! তখন ক্রিকেটই ছিল আমার ধ্যানজ্ঞান। ক্রিকেট ছাড়া আর কিছুই বুঝি না। কত জায়গায় টুর্নামেন্ট খেলেছি তার নাই ঠিক। মাত্র পনেরো ষোলো বছর বয়সেই ক্লাবের সেরা ব্যাটসম্যানদের আমি একজন। প্রায় প্রত্যেকটা ম্যাচেই আমি ওপেনারে খেলেছি।
      মাধ্যমিক টেস্টের আগে অনেক টুর্নামেন্ট খেলেছি, কয়েকটা টুর্নামেন্টে আমার দল চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। টেস্ট পরিক্ষার পর খেলাটা কমিয়ে দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু মনটাকে কিছুতেই পড়াশোনার মধ্যে টিকিয়ে রাখতে পারিনি। মাঠে যাওয়ার জন্য মনটা খালি ছটফট করেছে। তবে মা বাবার শাষাণির ভয়ে মাঠমুখ হতে পারছিলাম না। মনমরা হয়ে ঘরে বসেছিলাম কয়েকদিন, পড়াশোনা করতে একদমই ভালো লাগছিল না। শেষমেশ মা এক প্রতিশ্রুতির বদলে মাঠে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকালে দুই ঘণ্টা, দুপুরে দুই ঘণ্টা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত অবদি চার ঘন্টা, মানে টোটাল আটঘন্টা প্রতিদিন পড়া করতেই হবে -- তারপর খেলাধুলা। আমি এক বাক্যেই রাজি হয়ে গেলাম। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হয়েছিল কিন্তু পরে অভ্যাস হয়ে যায়। আর আমি তো খুব খুশি -- এটাই তো চেয়েছিলাম।

      কিন্তু রেজাল্ট বেড়োনোর আগের দিনটা আমি ব্যাপকভাবে নার্ভাসনেস্ অনুভব করেছি। খেলাধুলার চিন্তা সব লাটে উঠে গেছিল সেদিন। মাথার চতুর্দিকে রেজাল্ট নামক কাল্পনিক ভ্রমর ভন্ ভন্ করে ঘুরতে থাকলো সারাক্ষণ। এক এক সময় ফেল হবার ভয়ও আমাকে আতঙ্কিত করেছিল। আটঘন্টা পড়েছি ঠিকই কিন্তু পড়ার থেকে খেলার দিকেই মনটা বেশি আচ্ছন্ন থাকতো। সুতরাং প্রিপারেশনটা যে মোটেও ভালো ছিল না -- সেটা নতমস্তকে স্বীকার করছি। কিন্তু দিব্যি করে বলতে পারি কোনো প্রশ্নই ছেড়ে আসিনি, অঙ্কটা বাদ দিয়ে। 
     কম্প্লিট্ হুবহু উত্তর দিয়েছি -- এমনটা জোর দিয়ে বলছিনা তবে নিজের মতো করে গুছিয়েগাছিয়ে সবকটা প্রশ্নের উত্তর লিখেছি এটা জোর গলায় বলতে পারি। সুতরাং ফার্স্ট ডিভিশন অর্থাৎ ৬০% নাম্বার আশা করাটা অহেতুক ছিল না। কিন্তু তবুও কেমন যেন বারবার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করলেই হল -- অন্ততঃ মান রক্ষা তো হবে।

      এইসব দুশ্চিন্তাগুলো যখন উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়ালো -- তখন স্যার বললেন ওয়েবসাইট থেকে নাকি আজই ফলাফল জানা যাবে । মা বললেন, "যা না বাবু, স্যারের  সাথে গিয়ে কোনো সাইবার ক্যাফেতে রেজাল্টটা দেখে নে গা ! সারাদিন মনমরা হয়ে ঘরে বসে আছিস্ ! ভালো লাগছে বল্ !"
     ভালো তো লাগছিল না ঠিকই কিন্তু আজই রেজাল্ট দেখার দরকার আছে কি !  এমনিতেই কাল তো রেজাল্ট বেরোচ্ছেই ! কালই না হয় দেখলাম ! একই তো ব্যাপার !
 
        স্যার বললেন, "অত টেনশন নেওয়ার কি আছে ? চল্ না আমার সাথে !"
  স্যার যখন অত করে বলছেন, তাই না গিয়ে পারলাম না। পাড়াতেই একটা ক্যাফে আছে, সেখানে গিয়ে দেখি বিস্তর ভীড়। অনেকক্ষণ ওয়েট করতে হল। তারপর চান্স পেলাম। স্যার কম্পিউটারের সামনে বসলেন আর আমি দাঁড়িয়েছিলাম স্যারের পাশেই।

      তারপর ওয়েবসাইটে রোল নাম্বার দিয়ে ক্লিক করতেই 'page error' কথাটি স্ক্রিনে ভেসে ওঠে।  স্যার পুনরায় চেষ্টা করে গেলেন কিন্তু সেই একই জিনিস।  নেটওয়ার্কটা বড্ড ডিস্টার্ব করছিল। স্যার প্রায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমার অবস্থা আরো জোরালো এবং শোচনীয়। আধঘণ্টা ধরে স্যার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন কিন্তু ফল কিছু হলনা। 

    স্যার বললেন, "সার্ভারটা ডাউন আছে বুঝলি আজহার। চল্ বাড়ি চল্। যা হবার কালই দেখা যাবে। "-- এই বলে স্যার ক্যাফের বাইরে বেরিয়ে গেলেন। আমিও বেরিয়ে এলাম। তারপর যেই জুতোটা পায়ে পড়েছি অমনি শুনলাম 'এই তো, রেজাল্ট দেখাচ্ছে তো !' -- এই বলে কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠলেন। দেখলাম একজন অভিভাবক তার ক্যান্ডিডেটের রেজাল্ট দেখে খুশিতে মেতেছেন। ছেলেটাও মুচকে মুচকে হাসছে। নিশ্চয়ই সে ভালো নাম্বার করেছে। আমারটা কি হবে কে জানে ?

   তক্ষণই স্যার ভিতরে ঢুকে বললেন, "আয় আয় আজহার ! ভিতরে আয় দেখি !"
আমি সটান ভিতরে গেলাম। তারপর স্যার আবার রোল নাম্বার দিয়ে সাবমিট দিলেন। ক্লিক দিতেই আমার রোল নাম্বার সমেত তিন অঙ্কের একটা নাম্বার স্ক্রিনে ভেসে উঠল। সিক্স জিরো টু মানে, 602 আমার রেজাল্ট। আমি নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে আছি অমনি স্যার আমার পিঠে দুই তিনখানা চাপড় মেরে বললেন, "ওরে তুই ষ্টার পেয়েছিস্ !"
     আমি হতভম্ব হয়ে একবার স্যারকে আর একবার কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকাতে লাগলাম। মুখে একটাও কথা বলতে পারলাম না, যেন বোবা হয়ে গিয়েছিলাম।
      তারপর আমরা বাড়ি এসে মা-বাবাকে জানালাম। মা তো খুবই খুশি হয়েছেন। বাবাও খুশি হয়েছেন, তবে মায়ের খুশিটাই  যেন বেশি মনে হল।  আর স্যারের তো আনন্দে ধরে না, তিনি বললেন, "আজহার, কাল রেজাল্ট আনতে আমিও তোর সাথে স্কুলে যাবো ঠিক আছে, My star boy ! -- এই বলে স্যার চলে গেলেন।

     কিন্তু আমি যে কতটা খুশি হয়েছিলাম তা কারোর সামনে সেদিন প্রকাশ করতে পারিনি। কারণ আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে আমি স্টার মার্কস্ পেয়েছি। এটা আমার কাছে চমৎকারের থেকে কম কিছু ছিল না। এটা একটা মিরাকেল -- হ্যাঁ, মিরাকেল আর আজ আমি তা সকলের কাছে স্বেচ্ছায় প্রকাশ করছি। ফার্স্ট ডিভিশন পাবো -- এই আত্মবিশ্বাসটা ছিল কিন্তু স্টার পাবো এটা ভাবিনি। তার মানে শেষ একমাসের পরিশ্রমটা ব্যর্থ যায় নি।
     আমার আত্মবিশ্বাস সেদিন আমাকে হারিয়ে দেয়নি বরং তা আমার মা-বাবার কাছে, আমার স্যারের কাছে, আমার স্কুলের শিক্ষকমন্ডলীর কাছে এবং আমার পরিচিত সকল বন্ধুবর্গের কাছে আমার আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধকে হাজারগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল ।।

 

 

 

 

 

 Written By - MD. AZHAR

 


Copyrighted.com Registered & Protected

 

No comments:

Post a Comment